মেয়ের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা: গ্রেপ্তার ১
Published: 18th, April 2025 GMT
রাজশাহী নগরীর তালাইমারি এলাকায় মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ জানানোয় বাবাকে মাথা থেতলে হত্যা করে বখাটেরা। এই ঘটনায় আসামিদের ধরতে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় নিহতের এলাকাবাসী। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিষয়টি শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাক হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক হোসেন সমকালকে বলেন, মামলার আসামি রুমেলকে (২৫) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজশাহীর তালাইমারি শহীদ মিনারের বাবর রোডের মাথা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান চলছে।
এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তালাইমারি শহিদ মিনার এলাকার কালু মিয়ার ছেলে নান্টু (২৮), মৃত রতনের ছেলে মো.
নিহত আকরাম আলী (৫২) পেশায় একজন বাস চালক। তিনি রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারি শহীদ মিনার এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তার মেয়ে রাকিয়া ওরফে আলফি নগরীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী। আলফিকে নিয়মিতই উত্ত্যক্ত করে আসছিল নান্টু ও তার সহযোগীরা। সর্বশেষ গত বুধবার বিকেলে ভুক্তভোগী আলফি কোচিং করে বাসায় ফেরার পথে নান্টু তাকে উত্ত্যক্ত করে। ভুক্তভোগী বাসায় এসে এই বিষয়ে জানালে তার বাবা অভিযুক্ত নান্টুর বাসায় বিচার দেয়। পরে, নান্টু ও তার সহযোগীরা সেদিন রাতে রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারি শহীদ মিনার এলাকায় হাতে লোহার রড, বাঁশের লাঠি, কাঠের লাকড়ি, ইটের আধলা নিয়ে ভুক্তভোগীর বড় ভাই ইমান হাসানের ওপর আক্রমণ করে। এসময় নান্টুর হুকুমে অন্য আসামিরা তাকে এলাপাতাড়িভাবে মারপিট করতে থাকে। প্রাণে বাঁচার তাগিদে চিৎকার করলে বাবা আকরাম বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। তার বাবা এগিয়ে আসলে অভিযুক্ত নান্টুর হুকুমে আসামিরা এলোপাতাড়ি লাথি, কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় ইটের আধলা দিয়ে হত্যার উদ্দেশে তার (আকরাম) মাথার পিছনে আঘাত করে। মাথায় গুরুতর জখম হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহত আকরাম আলীর ছেলে ইমাম হাসান অনন্ত বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার নগরীর বোয়ালিয়া থানায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আর চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
ইমাম হাসান অনন্ত সমকালকে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমার বাবার খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যারা গ্রেপ্তার হয়নি, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। এই খুনিরা সমাজের জন্য বিপদজনক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আটক গ র প ত র কর র এল ক নগর র আকর ম
এছাড়াও পড়ুন:
জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ
কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।
স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।
জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।