যদি আমি মারা যাই, তাহলে আলোড়িত মৃত্যুই চাই: মৃত্যুর আগে গাজার আলোকচিত্রীর পোস্ট
Published: 19th, April 2025 GMT
নাম তাঁর ফাতিমা হাসুউনা। ২৫ বছর বয়সের ফাতিমা পেশায় আলোকচিত্রী। বাড়ি ফিলিস্তিনের গাজায়। ইসরায়েলি নৃশংসতায় মৃত্যু যেন সব সময় ফাতিমার বাড়ির দোরগোড়ায় অপেক্ষা করে। জীবনের মায়া তুচ্ছ করে গাজাবাসীর ওপর চালানো ইসরায়েলি নৃশংসতা ক্যামেরায় ধরে রেখেছিলেন তিনি। তা–ও এক দিন, দুই দিন নয়; প্রায় ১৮ মাস ধরে।
এর মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় নিজের বাড়ি গুঁড়িয়ে যেতে দেখেছেন ফাতিমা। বাস্তুচ্যুত হতে দেখেছেন গাজার অগুনতি মানুষকে। স্বজন হারানোর বেদনা বয়ে বেড়াতে দেখেছেন অনেককেই। এমনকি ফাতিমা নিজেও ইসরায়েলি নৃশংসতায় নিজের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন। এবার ইসরায়েলি হামলায় নিজেও প্রাণ হারালেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাতিমা লিখেছিলেন, ‘যদি আমি মারা যাই, তাহলে নিজের আলোড়িত মৃত্যুই চাই।’ আরও যোগ করেন, ‘আমি শুধু একটা ব্রেকিং নিউজ হতে চাই না। কোনো দলের সদস্য হয়ে মারা যেতে চাই না। আমি এমন একটি মৃত্যু চাই, যাতে পুরো বিশ্ব তা জানতে পারে। কালজয়ী হয়ে থাকে। কোনো সময় বা স্থান দিয়ে সেটা চাপা দেওয়া যাবে না।’
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চাওয়া ফাতিমার ভাগ্যে সেটাই হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর বিয়ের দিন। এর আগের দিন অর্থাৎ, গত বুধবার গাজার উত্তরাঞ্চলে তাঁর বাড়িতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলা হয়। বোমার আঘাতে নিহত হন ফাতিমা। নিহত হন তাঁর পরিবারের ১০ জন সদস্য। তাঁদের মধ্যে ফাতিমার অন্তঃসত্ত্বা বোনও রয়েছেন।
যদিও ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, হামাসের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে সেই হামলা চালানো হয়েছিল। হামাসের ওই সদস্যরা ইসরায়েলের সেনা ও বেসামরিক মানুষদের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন।
ফাতিমা নিহত হওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে ঘোষণা করা হয়েছিল, গাজায় তাঁর জীবন ও কাজের ওপর আলোকপাত করে বানানো একটি তথ্যচিত্র কানের সমান্তরালে ফরাসি একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি দেওয়া হবে।
ইরানি পরিচালক সেপিদেহ ফারসি ওই তথ্যচিত্র বানিয়েছেন। এর নাম ‘পুট ইয়োর সোল অন ইয়োর হ্যান্ড অ্যান্ড ওয়াক’। এতে ফাতিমা ও সেপিদেহ–এর মধ্য ভিডিও কথোপকথন আছে। মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের প্রাত্যহিক জীবনের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে সেপিদেহ বলেন, ‘এই তথ্যচিত্রে ফাতিমার হাসি, কান্না, আশা ও হতাশার প্রকাশ তুলে ধরেছি।’
আরও পড়ুনগাজাবাসীও কি সুবর্ণরেখার মতো ঘরের স্বপ্ন দেখে৬ ঘণ্টা আগেগাজার সাংবাদিক মিকদাদ জামেল সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তাঁর (ফাতিমা) তোলা ছবি দেখুন। লেখাগুলো পড়ুন। ফাতিমা গাজাবাসীর নিত্যদিনের জীবনযাপনের ও এখানকার শিশুদের যুদ্ধের সময়কার সংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী। নিজের তোলা ছবিতে ক্যামেরার লেন্স দিয়ে তিনি সেসব টুকে রেখেছেন।’
ফাতিমার মৃত্যুর আগে গাজার অধিবাসী ফিলিস্তিনি কবি হায়দার আল–ঘাজালি ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাতে এই কবি লিখেন, মারা যাওয়ার পর তাঁকে নিয়ে একটি কবিতা লেখার অনুরোধ করে গেছেন ফাতিমা।
আরও পড়ুনতিন শর্তে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে চায় হামাস১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলি হামলায় একসঙ্গে নিহত হলেন পরিবারের ১০ সদস্য১৮ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতার অনুসারীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। আজ সোমবার রাত ৯টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেটে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
সেখানে বিক্ষোভকারীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি প্রতিবাদ মিছিলও করেন। এ ছাড়া সদর উপজেলার মধুপুর-লক্ষীপুর এলাকাতেও সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকেরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষোভকারী নেতা-কর্মীদের দাবি, সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া-৩ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বদলে এখানে অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না। তাই অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সোহরাব উদ্দিনকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
এর আগে সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার।
এ বিষয়ে মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘শুনেছি আমার সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন। আমি শহরের বাইরে আছি।’ এর বেশি কথা বলেননি তিনি।
জানতে চাইলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার বলেন, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যিনি মনোনয়ন পাবেন, তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তবে এ নির্দেশনা যদি কেউ না মানেন, তাহলে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হাসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।’
কুষ্টিয়ার অন্য তিনটি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থীরা হলেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভোড়ামারা) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি।