উত্তরায় প্রকাশ্যে যুবককে তুলে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল
Published: 19th, April 2025 GMT
ঢাকার উত্তরা এলাকায় প্রকাশ্যে এক যুবককে সড়ক থেকে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার রাতেই ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নোমান আহমেদ নাফিজ।
ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, কালো মাস্ক পরা এক যুবককে ধাক্কা দিয়ে একটি সাদা প্রাইভেট কারে তুলছেন তিন ব্যক্তি। তিন ব্যক্তির মধ্যে দুজনের পরনে জিন্স প্যান্ট ও টি-শার্ট। আরেকজনের পরনে গেবাডিং প্যান্ট ও ফুলহাতা জামা।
নোমান সমকালকে জানান, শুক্রবার দুপুর ২টা ৫০মিনিটে উত্তরার বিএনএস সেন্টারের বিপরীত পাশের সড়ক থেকে এক যুবককে জবরদস্তি করে তুলে নিয়ে যেতে দেখেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে ওই ঘটনা তিনি মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন এবং পরে ফেসবুকে আপলোড করেন।
তিনি বলেন, তিনজন ব্যক্তি যখন ওই যুবককে ধাক্কা দিয়ে প্রাইভেটকারে তুলছিলেন তখন আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তাদের ওপরও চড়াও হন ওই ব্যক্তিরা। এরপর গাড়িটি বিমানবন্দরের দিকে দ্রুত চলে যায়। তিনি গোপনে ঘটনার ভিডিও করেছেন।
তিনি আরও বলেন, মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার পর তিনি স্থানীয় থানায় যান। কিন্তু পুলিশের সহায়তা পাননি। পুলিশ তার কাছ থেকে ঘটনা শুনে নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে নেয়।
ঘটনাস্থলটি উত্তরা পূর্ব থানা আওয়তাধীন। থানার ওসি শামীম আহমেদ সমকালকে বলেন, ভিডিওটি দেখেছি। তবে যাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে এবং যারা তাকে নিয়ে যাচ্ছে তাদের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। এ ছাড়া তুলে নিয়ে যাওয়া যুবকের স্বজনরা কেউ অভিযোগ করেননি। যে কারণে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এ নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য বকক
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।