পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সব সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত, বললেন সৌরভ
Published: 26th, April 2025 GMT
পেহেলগাম ঘটনার পর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত বলে মনে করেন সাবেক ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। ভবিষ্যতে আইসিসি টুর্নামেন্টেও পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ না খেলতে চাইলে সেটিকেও সমর্থন করেন সৌরভ। শুক্রবার কলকাতায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি।
২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এ ঘটনায় পাকিস্তানের মদদ আছে বলে অভিযোগ ভারতের। গত কয়েক দিনে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, শুক্রবার কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে সৌরভকে পেহেলগাম ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত বলে সব মহল থেকে যে আওয়াজ উঠেছে, সেটি নিয়ে জানতে চাইলে ভারত ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘১০০ ভাগ, এটা (পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিন্ন) করা উচিত। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এটা কোনো তামাশা নয় যে বছর বছর এ রকম ঘটনা ঘটে চলবে।’
ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ক্রিকেট সম্পর্ক নেই এক দশকের বেশি সময়। ২০১৩ সালের পর দুই দেশ শুধু আইসিসি বা এসিসি টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হয়েছে। ভারত–পাকিস্তানের ম্যাচে আয়ের সুযোগ বেশি থাকে বলে দুই দলকে একই গ্রুপেও রাখা হয়।
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান নতুন সংঘাত: আইসিসি ও এসিসির সামনে কী অপেক্ষা করছে১৯ ঘণ্টা আগেতবে পেহেলগাম ঘটনার পর বিসিসিআই নাকি বৈশ্বিক ও মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বেও পাকিস্তানের সঙ্গে খেলার পক্ষপাতী নয়। এ নিয়ে ভারতের বোর্ড থেকে আইসিসির কাছে চিঠি পাঠানোর খবরও জানিয়েছে কোনো কোনো গণমাধ্যম।
২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো সৌরভের আরেকটি পরিচয়—বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি। ২০১৯ থেকে ২০২২ সময়ে বোর্ড প্রধানের দায়িত্বে থাকা সৌরভ মনে করেন, বিসিসিআইয়ের বর্তমান কমিটি পাকিস্তানের সঙ্গে আইসিসি টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে না খেলার চেষ্টা চালালে সেটি ভুল হবে না, ‘বোর্ড (আইসিসিকে) চিঠি দিলে ঠিক করবে। সন্ত্রাসবাদ কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।’
চলতি বছরই আইসিসি ও এসিসির দুটি টুর্নামেন্ট আছে। সেপ্টেম্বরে হওয়ার কথা রয়েছে ছেলেদের এশিয়া কাপ, যার ভেন্যু এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে ভারতেই হওয়ার কথা মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। দুটি টুর্নামেন্টেরই গ্রুপিং এখনো ঠিক হয়নি।
আরও পড়ুনপাকিস্তানি অ্যাথলেটকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তোপের মুখে ভারতীয় অ্যাথলেট, দিলেন ব্যাখ্যা১৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।