ভারত শাসিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তান ও ভারত সম্পর্কের অবনতির মধ্যেই পাকিস্তানের কাশ্মীরে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। ভারত হঠাৎ করে পানি ছেড়ে দেওয়ার পর এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এছাড়া বন্যার কারণে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে পানি নিয়ে জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করা হয়েছে।

রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পাকিস্তানকে কোনো ধরনের পূর্বসংকেত না দিয়েই মুজাফফরাবাদের হাত্তিয়ান বালা এলাকায় ঝিলম নদীতে অতিরিক্ত পানি ছেড়েছে ভারত। এই হঠাৎ পানিপ্রবাহের কারণে মুজাফফরাবাদ প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে “পানি জরুরি অবস্থা” ঘোষণা করেছে।

ভারত পানি ছেড়ে দেওয়ার পর ঝিলাম নদীতে হঠাৎ করে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়, যার ফলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নদীর তীরবর্তী বসতি ও মসজিদ থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য ঘোষণা দেওয়া হয়।

কোনো ধরনের আগাম নোটিশ ছাড়া পানি ছেড়ে দেওয়া আন্তর্জাতিক আইন এবং দুই দেশের মধ্যে নদী ব্যবস্থাপনা বিষয়ক চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ভারতের এই আচরণ পাকিস্তানের জনগণের জীবন ও সম্পদের ওপর সরাসরি হুমকি তৈরি করেছে এবং তাদের বৈরিতার আরেকটি উদাহরণও প্রকাশ করেছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিচুক্তি অনুযায়ী, নদীতে পানি প্রবাহ সংক্রান্ত যেকোনো বড় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে উভয় দেশকে একে অপরকে আগে থেকেই অবহিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভারতের এই অপ্রত্যাশিত পানি ছাড়ার ঘটনায় পাকিস্তানে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেড়ে গেছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে থাকা সিন্ধু নদের একটি উপনদী হলো ঝিলাম। পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা সিন্ধু নদের পানি চুক্ত স্থগিত করেছে নয়াদিল্লি। দেশটি হুমকি দিয়েছে পাকিস্তানকে সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও দেওয়া হবে না।

অপরদিকে পাকিস্তান বলেছে, সিন্ধুর পানি প্রবাহ আটকানোর চেষ্টা করা হলে এটিকে তারা “যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবে” হিসেবে বিবেচনা করবে। আর সেই অনুযায়ী (সামরিক) ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামি ৮ প্রাক্তন ভিসিসহ ২০১ জন

ঢাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্রকে ‘হত্যাচেষ্টা’র অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানাসহ ২০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, শিক্ষক, সাংবাদিক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও আসামি করা হয়েছে। 

ঢাকা মহানগর হাকিম মনিরুল ইসলাম বুধবার অভিযোগটি আমলে নিয়ে শাহবাগ থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। গত ২০ মার্চ সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদের পক্ষে ছাত্রদলের সাবেক নেতা এম এ হাশেম রাজু আদালতে এ মামলার আবেদন করেন। 

মামলায় অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন– শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সালমান এফ রহমান, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক আছেন আসামির তালিকায়। তারা হলেন– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল ও অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মুহম্মদ জাফর ইকবাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনোয়ার হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মীজানুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আবদুল মান্নান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এম অহিদুজ্জামান, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. অনুপম সেন, সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, নঈম নিজাম, শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল বাবু, আলমগীর হোসেন, আবেদ খান প্রমুখ।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে– ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট সকালে মামলার বাদী এম এ হাশেম রাজুর নেতৃত্বে একটি মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পরীবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের মোড়ে এসে পৌঁছায়। তখন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী পথরোধ করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ, হাতবোমা, পেট্রোল বোমা ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ গুলিতে আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদের ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

এদিকে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আব্দুন নূর নামে এক সাংবাদিক নিহতের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ ১৬২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নিহতের বাবা হাফেজ আবুল বাশার গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম এম মিজবাউর রহমানের আদালতে এ মামলা করেন। 

মামলায় অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন– সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, হাছান মাহমুদ, সালমান এফ রহমান প্রমুখ। 

মামলার বাদী আবুল বাশার বলেন, আব্দুন নূর ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকায় অভিযান নিউজ নামে পত্রিকার রিপোর্টার ছিল। আন্দোলনের সময় ১ আগস্ট সে ঢাকায় আসে এবং যাত্রাবাড়ীতে ৫ আগস্ট গুলিতে মারা যায়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ