নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের ‘পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিনিধি’ আখ্যা দিয়ে তাঁদের সুপারিশ করা প্রস্তাবসহ পুরো কমিশন বাতিল করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। সরকারকে সতর্ক করে তাঁরা বলেছেন, আন্দোলনে নামতে বাধ্য করবেন না। সেই পরিস্থিতি হলে সরকার পাঁচ মিনিট সময়ও পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এক নেতা।

‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামোফোবিয়া: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় ওলামা–মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত এই সেমিনারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

সেমিনারে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে; কমিশন সরকারিভাবে বাতিল করতে হবে; নতুন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দীনদার, শিক্ষিত, দেশীয় চিন্তায় বিশ্বাসী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং পরিবার ও নারী বিষয়ে প্রস্তাবের ভিত্তি হতে হবে কোরআন-সুন্নাহ, সংবিধান ও সামাজিক বাস্তবতা।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা দেশের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং সরাসরি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। তাঁরা বলছেন, এই কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ পশ্চিমা মতবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা, নারী সমাজের প্রকৃত চাহিদা ও জীবনসংগ্রামের সম্পূর্ণ বিপরীত। এই প্রস্তাব জনরোষ উসকে দেবে মন্তব্য করে তাঁরা বলেন, এর সুযোগ নিয়ে পতিত ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাধ্য করা হলে অবশ্যই আন্দোলনে নামব। হাতে হাত ধরে দ্বীন ও সমাজের সব কল্যাণকর কাজ একসঙ্গে করব। আমরা বার্তা দেব, আমাদের ভাগ ভাগ করে আর কেউ মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না।’

সেমিনারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, এই কমিশনের মাধ্যমে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ঘাপটি মেরে থাকা ইসলামের শত্রুরা রাস্তায় নামার নীলনকশা তৈরি করতে পারে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের মুখোমুখি করে ঘাপটি মারা শত্রুরা যাতে সুযোগ না নিতে পারে, সেটি মাথায় রাখতে হবে। এরপরও যদি সামনে পা বাড়াতে চান, (পালানোর জন্য) পাঁচ মিনিটও সময় পাবেন না।’

এই সেমিনারের মাধ্যমে ইসলামীপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ইসলাম ও মানবতার ভিত্তিতে দেশ গড়ার পদক্ষেপ অনেকটা এগিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ রেজাউল করীম।

‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামোফোবিয়া: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে জামায়াতে ইসলামির আমির শফিকুর রহমান। আজ বুধবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন কাকরাইল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ইসল ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ