সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি ধর্মভিত্তিক দলগুলোর
Published: 30th, April 2025 GMT
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের ‘পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিনিধি’ আখ্যা দিয়ে তাঁদের সুপারিশ করা প্রস্তাবসহ পুরো কমিশন বাতিল করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। সরকারকে সতর্ক করে তাঁরা বলেছেন, আন্দোলনে নামতে বাধ্য করবেন না। সেই পরিস্থিতি হলে সরকার পাঁচ মিনিট সময়ও পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এক নেতা।
‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামোফোবিয়া: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় ওলামা–মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত এই সেমিনারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
সেমিনারে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে; কমিশন সরকারিভাবে বাতিল করতে হবে; নতুন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দীনদার, শিক্ষিত, দেশীয় চিন্তায় বিশ্বাসী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং পরিবার ও নারী বিষয়ে প্রস্তাবের ভিত্তি হতে হবে কোরআন-সুন্নাহ, সংবিধান ও সামাজিক বাস্তবতা।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা দেশের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং সরাসরি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। তাঁরা বলছেন, এই কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ পশ্চিমা মতবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা, নারী সমাজের প্রকৃত চাহিদা ও জীবনসংগ্রামের সম্পূর্ণ বিপরীত। এই প্রস্তাব জনরোষ উসকে দেবে মন্তব্য করে তাঁরা বলেন, এর সুযোগ নিয়ে পতিত ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাধ্য করা হলে অবশ্যই আন্দোলনে নামব। হাতে হাত ধরে দ্বীন ও সমাজের সব কল্যাণকর কাজ একসঙ্গে করব। আমরা বার্তা দেব, আমাদের ভাগ ভাগ করে আর কেউ মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না।’সেমিনারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, এই কমিশনের মাধ্যমে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ঘাপটি মেরে থাকা ইসলামের শত্রুরা রাস্তায় নামার নীলনকশা তৈরি করতে পারে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের মুখোমুখি করে ঘাপটি মারা শত্রুরা যাতে সুযোগ না নিতে পারে, সেটি মাথায় রাখতে হবে। এরপরও যদি সামনে পা বাড়াতে চান, (পালানোর জন্য) পাঁচ মিনিটও সময় পাবেন না।’
এই সেমিনারের মাধ্যমে ইসলামীপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ইসলাম ও মানবতার ভিত্তিতে দেশ গড়ার পদক্ষেপ অনেকটা এগিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ রেজাউল করীম।
‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামোফোবিয়া: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে জামায়াতে ইসলামির আমির শফিকুর রহমান। আজ বুধবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন কাকরাইল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ইসল ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
লবণশ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে
দেশে প্রায় ৪০ হাজার কৃষক পরিবার এবং ৫৫ হাজার দক্ষ শ্রমিক সরাসরি লবণ উৎপাদনে যুক্ত। আরও ৫ লাখের বেশি শ্রমিক এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে লবণ খাত দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই খাতের কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
‘দেশে লবণ খাতে কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় পরামর্শ সভা’ শিরোনামে সভাটির আয়োজন করে আইজেক প্রকল্প। আইজেক প্রকল্পের পূর্ণ নাম হচ্ছে ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর উইমেন অ্যান্ড ইয়ুথ ইন কক্সবাজার। কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বে ইনোভিশন কনসালটিং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ১৮৫ জন শ্রমিক ও কৃষককে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ৪৪৪ জনকে চিকিৎসাসহায়তা দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে ২টি হাসপাতাল ও ৬টি লবণ কারখানার সঙ্গে আইজেক প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান লবণকে ‘সাদা সোনা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য, অন্তর্ভুক্তিকরণ, ক্ষুদ্রঋণ ও আধুনিক প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে লবণ খাতকে শক্তিশালী করব।’ তিনি লবণশ্রমিকদের শ্রম অধিকার আইনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুনির হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সহায়তা দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে আরও সচেতনতা এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
সভায় লবণচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা পানিশূন্যতা, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও অনিশ্চিত আয়ে ভুগি। আমাদের নিয়মিত চিকিৎসা ও নিরাপত্তা প্রয়োজন।’
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইনোভিশন কনসালটিংয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী শহীদ হাসান ফেরদৌস। আইএলও কক্সবাজার সাব অফিসের প্রধান রুচিকা বেহল লবণ চাষ ও আইজেক প্রকল্প নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ, বিসিকের লবণ বিভাগের প্রধান সরওয়ার হোসেন, ইনোভিশনের পোর্টফোলিও পরিচালক তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবসায় কৌশল ও ইএসজি প্রধান ফিরোজ আলম তালুকদার, এসিআই লিমিটেডের ব্যবসায় ব্যবস্থাপক জিসান রহমান, প্রিটি কম্পোজিট টেক্সটাইলসের নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মাহবুব কামরান, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আবেদ আহসান সাগর, আইএলওর কারিগরি বিশেষজ্ঞ জনসন, আইএলওর ইআইএস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সাদ গিলানি।
বক্তারা বলেন, লবণের বিশুদ্ধতা বাড়ানো এবং লবণভিত্তিক শিল্পের আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি। কাঁচা লবণের বিশুদ্ধতা ও আর্দ্রতা সমস্যা দূর করতে কাঠামোগত অদক্ষতার সমাধান প্রয়োজন।