নতুন বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া পর্যন্ত ইউজিসির তত্ত্বাবধানে সমন্বিত কাঠামোর অধীন চলবে ঢাকার সরকারি সাত কলেজের কার্যক্রম। অন্তর্বর্তী এই ব্যবস্থায় প্রশাসকের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন ঢাকা কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস। এ লক্ষে তাঁকে আগামী দু্ই বছরের জন্য ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এখন তাঁকেই প্রশাসক করা হবে। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান দপ্তর হবে ঢাকা কলেজে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ায় চুক্তি ভিত্তিতে অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসকে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আজ রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদে তাঁকে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি।

এই কলেজগুলো একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্ত করার পর থেকে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে সময়–সময় আন্দোলন করে আসছিলেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। আট বছরে ক্ষুদ্র সমস্যাগুলো পুঞ্জীভূত হয়ে বড় রূপ নেয়। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এখন এই সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেটির নাম হবে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’। নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি চলবে ‘হাইব্রিড মডেলে’। এখানে ৪০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনে আর ৬০ শতাংশ ক্লাস সশরীর নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনকার মতো একেকটি কলেজে সব বিষয় পড়ানো হবে না। এক বা একাধিক কলেজে অনুষদভিত্তিক ক্লাস হবে। যেমন সরকারি তিতুমীর কলেজে হতে পারে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত বিষয়গুলোর ক্লাস। এভাবে অন্য কলেজে হতে পারে অন্য অনুষদভুক্ত বিষয়ের ক্লাস।

আরও পড়ুনঢাকার সাত কলেজ: ইউজিসিকে চিঠি দিয়ে সাত করণীয় জানাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়০১ মে ২০২৫

কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আইন পাস, অবকাঠামোসহ আনুষঙ্গিক নানা বিষয় রয়েছে। ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগে যে সাময়িক কাঠামোতে এই সাত কলেজের কাজ চলবে, তাতে এ কাঠামোর প্রধান (প্রশাসক) হিসেবে কাজ করবেন সাত কলেজের যেকোনো একজন অধ্যক্ষ। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর, ভর্তি দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব দপ্তরের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। বেশ কিছুদিন ধরেই এ নিয়ে আলোচনা চললেও এ কাজটি, বিশেষ করে প্রশাসক নিয়োগটি দেরি হচ্ছিল।

এ নিয়ে আবারও আন্দোলনের হুমকি দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল আজ রোববারের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আগামীকাল সোমবার থেকে আবারও কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন তাঁরা। এ ছাড়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’–এর রূপরেখা ও মনোগ্রাম প্রকাশ এবং ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।

এ রকম পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের জন্য প্রশাসক নিয়োগের লক্ষ্যে অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ পদে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

আরও পড়ুনসাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, চলবে ভিন্ন মডেলে ১৭ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনসাত কলেজের জন্য প্রশাসক, প্রধান দপ্তর হবে ঢাকা কলেজে৫২ মিনিট আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কল জ র শ ক ষ র থ স ত কল জ র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ছুটি না পেয়ে অসুস্থ শ্রমিকের মৃত্যু, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ 

নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুর এলাকায় লারিজ ফ্যাশনের পোশাক কারখানায় অসুস্থ হয়ে রিনা আক্তার (৩২) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। 

সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে তারা মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, রিনা আক্তার অসুস্থ অবস্থায় কারখানায় কাজ করছিলেন। রোববার তিনি বেশি অসুস্থতা অনুভব করলে ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। তবে, কর্তৃপক্ষ ওই শ্রমিকের আবেদনে সাড়া না দিয়ে কাজ করতে বাধ্য করেন। ওই নারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে সহকর্মীরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অবরোধকারী শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য মালিকপক্ষ দায়ী। রিনা অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন তিনি। 

লারিজ ফ্যাশনের মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদেরকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে লারিজ ফ্যাশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শিমুল বলেছেন, আমাদের একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয়। এতে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেছেন, সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য গার্মেন্টস মালিকপক্ষ দায়ী, এমন অভিযোগ করে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও আছে। শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেছেন। যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

ঢাকা/অনিক/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ