পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে মো. জসীম উদ্দিন আজ বৃহস্পতিবার শেষ দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করলেন। তিনি ছুটিতে যাওয়ায় আগামী শনিবার থেকে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে মন্ত্রণালয়ের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী।

আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক দাপ্তরিক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এই আদেশ শনিবার থেকে কার্যকর হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে জানান, মো.

জসীম উদ্দিন শনিবার থেকে ব্যক্তিগত কারণে দেড় মাসের ছুটিতে যাচ্ছেন। ছুটির পর তাঁকে উত্তর আমেরিকার কোনো একটি দেশে রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক আদেশে বলা হয়, মো. জসীম উদ্দিন, পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব ত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পররাষ্ট্রসচিবের দৈনন্দিন কার্যাদি সম্পাদন করবেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। গত ৮ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে তাঁর অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা।

পররাষ্ট্রসচিবের রুটিন দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রুহুল আলম সিদ্দিকী বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) একাদশ ব্যাচের পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা। এর আগে তিনি পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং পর্তুগালে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দায়িত্বের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, বার্লিন, নয়াদিল্লি ও করাচি মিশনে বিভিন্ন পদে ছিলেন তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রসচ ব র দ র হ ল আলম স দ দ ক

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় অনাহারে মৃত্যু বাড়ছে

ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় মৃত্যু ক্রমেই বাড়ছে। গত কয়েক দিনে অন্তত ২৯ শিশু ও বৃদ্ধ অভুক্ত থেকে মারা গেছেন। হাজার হাজার মানুষ অনাহারে মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন। এ অবস্থায় গাজায় অব্যাহতভাবে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনে আরও ৫১ জন নিহত হন। এ অবস্থায় ত্রাণের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লে ইসরায়েল ত্রাণবাহী কিছু সংখ্যক ট্রাক প্রবেশের অনুমোদন দেয়। পর্যবেক্ষকরা এটাকে প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অল্প বলে বর্ণনা করছেন।

খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা আইপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার ৯৩ শতাংশের বেশি শিশু দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাজিদ আবু রমজানের উদ্ধৃতি দিয়ে বৃহস্পতিবার আলজাজিরা জানায়, সম্প্রতি গাজায় শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে ২৯ জনের ‘ক্ষুধাজনিত মৃত্যু’ হয়েছে। আরও হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকির মধ্যে আছেন। জাতিসংঘের সহায়তাবিষয়ক প্রধানের আগের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, সহায়তা না দিলে অন্তত ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে। জাতিসংঘ কর্মকর্তার বক্তব্য ‘অত্যন্ত বাস্তবসম্মত’ বলে জানান তিনি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত গাজায় ১৬ হাজার ৫০০-এর বেশি শিশু ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে এক বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ৯১৬। এক থেকে পাঁচ বছরের ৪ হাজার ৩৬৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ৬ থেকে ১২ বছরের ৬ হাজার ১০১ শিশু ও ১৩ থেকে ১৭ বছরের ৫ হাজার ১২৪ শিশু নিহত হয়েছে।

এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল ৯৮ ট্রাক ময়দা ও শিশুখাদ্যের প্রবেশ অনুমোদন দিয়েছে। বুধবার সিজিটিএন জানায়, বিতরণ নিয়ে সমস্যার কারণে এ খাদ্য যথাযথভাবে গাজার সব মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে না। গত ১১ সপ্তাহের অবরোধের পর গত সোম ও মঙ্গলবার ত্রাণবাহী এসব ট্রাক প্রবেশ করে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডব্লিউএফপির পরিচালক অ্যান্টনি রিনার্ড বলেন, এসব ত্রাণের খুব অল্পই গাজার মানুষের কাছে পৌঁছেছে। ইসরায়েলের অবরোধ গাজার মানুষকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্রমবর্ধমান লড়াইয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এ অবস্থায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বুধবার বলেন, তিনি গাজায় হামলা বন্ধ করবেন না। হামাসকে পরাজিত করে তিনি উপত্যকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে চান। তিনি চলমান ‘অপারেশন গিডেয়ন চেরিয়টস’ অব্যাহত রাখবেন। গত শনিবার কথিত এ অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।

জিম্মি মুক্তি নিয়ে নেতানিয়াহুর অনীহার কারণে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেই ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। জিম্মিদের স্বজন প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছেন। পাশাপাশি রিজার্ভ সেনাদের একটি বড় অংশ যুদ্ধে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। অভ্যন্তরীণ এসব চাপ ছাড়াও যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। আর ফ্রান্স ও কানাডা ‘বস্তুনিষ্ঠ’ পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এ দেশগুলো ছাড়াও বিশ্বের নানা দেশ গাজা গণহত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতদের তলব করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সর্বশেষ উরুগুয়ে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। 

এদিকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের পশ্চিম তীর সফরকালে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সতর্কতাসূচক গুলির ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন দেশ এ নিন্দা জানায়। 

গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের অবশ্যই ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বলেছে মানবাধিকার সংস্থাটি। 

ত্রাণ সরবরাহের আহ্বান পোপ চতুর্দশ লিওর 

গাজায় ত্রাণ সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ চতুর্দশ লিও। বুধবার তিনি গাজায় ‘হৃদয়বিদারক’ হত্যা বন্ধের আহ্বান জানান। ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে সর্বসাধারণের সামনে প্রথম উপস্থিতিতে তিনি এসব কথা বলেন। ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রায় ৪০ হাজার দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে হাজির হন পোপ চতুর্দশ লিও। এর আগে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা প্রথম এ পোপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২ লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটে। 

 মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার দাবি নেতানিয়াহুর

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল ‘সম্ভবত’ গাজায় হামাসের অধরা ডি-ফ্যাক্টো নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তারা কয়েক হাজার হামাস সদস্যকে নির্মূল করেছেন। দেইফ, হানিয়া, ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও সম্ভবত মোহাম্মদ সিনওয়ারকেও হত্যা করেছেন। 

গত সপ্তাহে খান ইউনিসের ইউরোপীয় হাসপাতালে ব্যাপক হামলা চালিয়ে সিনওয়ারকে লক্ষ্যবস্তু করা হয় বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। হামলার পর ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ হামলায় ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫০ জনেরও বেশি আহত হন। সিনওয়ার হলেন সাবেক হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই। ইয়াহিয়া গত অক্টোবরে দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ