চার ম্যাচ পর জয়ে ফিরল ইন্টার মায়ামি। আজ মেজর লিগ সকারে কানাডিয়ান ক্লাব মন্ট্রিয়লকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে দলটি। ম্যাচে মায়ামির ৪ গোল করেছেন দুই তারকা ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজ। মেসি ২টি, সুয়ারেজও ২টি।

মন্ট্রিয়লের বিপক্ষে জয়ের আগে সর্বশেষ চার ম্যাচের দুটিতে হার আর দুটিতে ড্র করেছিল মায়ামি।

চেজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে ২৭তম মিনিটে মায়ামিকে এগিয়ে দেন মেসি। পুরো ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে ৬ গোল করলেও প্রথমার্ধে গোল এই একটিই।

দ্বিতীয়ার্ধে গোল-মিছিল শুরু হয় ৬৮তম মিনিটে। মেসির বাড়ানো বল ধরে গোল করেন সুয়ারেজ। এরপর ৭১ মিনিটে স্কোরলাইন ৩-০-ও বানিয়ে ফেলেন উরুগুইয়ান তারকা।
আগের ১৫ ম্যাচের মাত্র একটিতে জেতা মন্ট্রিয়ল প্রথম গোলের দেখা পায় ৭৪ মিনিটে, দান্তেসিলির সৌজন্য।

তবে ৮৭ মিনিটে মেসি আরেকটি গোল করলে ব্যবধান বড়ই থাকে মায়ামির পক্ষে। শেষ দিকে যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে মন্ট্রিয়লের পক্ষে দ্বিতীয় গোল করেন ভিক্টর লুটোরি, যা ব্যবধানই শুধু কমাতে পেরেছে।

এই জয়ে এমএলএস ইস্টার্ন কনফারেন্সে ১৫ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে ৬ নম্বরে উঠে এসেছে মায়ামি। শীর্ষে থাকা ফিলাডেলফিয়ার পয়েন্ট ১৬ ম্যাচে ৩৩। আর মন্ট্রিয়ল ১৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ১৫ দলের মধ্যে সবার শেষে।

মন্ট্রিয়লের বিপক্ষে জয়ের পর সুয়ারেজ সাম্প্রতিক জয়খরার প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘বাজে ফলের দায় আমাদের নিতে হবে। এখন সময় নিজেদের শুধরে নিয়ে আত্মবিশ্বাস ফেরানো। এই জয়ের মাহাত্ম্য অনেক। আমরা এ ধরনের ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে চাই।’

মায়ামি কোচ হাভিয়ের মাচেরানো অবশ্য জয়ে ফেরার আনন্দের পাশাপাশি কয়েকজন ডিফেন্ডারের চোট নিয়ে চিন্তিতও, ‘আমাদের বাজে সময় পার করা দরকার ছিল। সেটা হওয়ায় আমি খুশি। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে জয়ের আনন্দ মলিন হয়ে গেছে গনজালো লুজান, টমা অ্যাভিলেস এবং জর্দি আলবা মাঠ ছেড়ে যাওয়া। গঞ্জালো আর জর্দির পেশিতে সমস্যা হয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বুঝতে একদিন সময় লাগবে। আর টমাসের সমস্যা অ্যাঙ্কেলে। সে হয়তো খেলতে পারবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল কর

এছাড়াও পড়ুন:

এবার হালদায় মিলেছে ১৪ হাজার কেজির বেশি ডিম

হালদা নদীতে দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর এবার পুরোদমে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। ভারী বৃষ্টিপাত আর আর পাহাড়ি ঢল নামায় বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা কার্প জাতীয় মাছগুলো। আর শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রাথমিক হিসেবে ১৪ হাজার কেজির বেশি ডিম সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন হালদা বিশেষজ্ঞ, মৎস্য অফিস ও ডিম সংগ্রহকারীরা। প্রায় তিনশ’ নৌকা নিয়ে মাছ ডিম সংগ্রহ করেন হালদাপড়ের মানুষ। এক থেকে পাঁচ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেন তারা।

হালদা বিশেষজ্ঞ, মৎস্য অফিস ও ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তর চট্টগ্রামে প্রবাহমান হালদা নদীর মদুনাঘাট ছায়ার চর থেকে রামদাস মুন্সির হাট, আজিমের ঘাট, মাচুয়া গোনা, কাগতিয়া, অইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহী ঘাট, নোয়াহাট, কেরামতলীর বাঁক এবং অঙ্কুরিঘোনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন নদীরপাড়ে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারি এবং ট্রেডিশনাল মাটির কুয়াগুলোতে ডিম পরিস্ফুটনে ব্যস্ত সময় পার করছেন পেশাদার ডিম সংগ্রহকারীরা। শুরু থেকেই ডিম সংগ্রহের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে জোয়ারের সময় হালদা নদীর আমতুয়া অংশে কার্পজাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়ে। পরবর্তীতে ডিমগুলো হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যারা প্রথম দিকে ডিম সংগ্রহ করতে নদীতে ছিলেন, তারা অধিক পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। ডিম সংগ্রহকারীরা গড়ে আড়াই বালতি করে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন।’

বৃহস্পতিবার রাত রাত দুইটার দিকে হালদা নদীতে পুরোদমে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা মাছ। শুক্রবার বিকেল পষর্ন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করে নদীর দুইপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। রাতে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকলে হালদা নদীর আমতুয়া অংশে প্রথমে কার্পজাতীয় মা মাছ পূরোদমে ডিম ছাড়া শুরু করে। পরবর্তীতে নদীর বিভিন্ন অংশে ডিম ছাড়া শুরু করে মা মাছ। এই তথ্যটি জানিয়েছেন রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকতা আলমগীর হোসেন।

জানা যায়, হালদার রাউজান উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে দিনভর নদীর দুইপাড়ে ডিম সংগ্রহকারীদের ডিম সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা থেকে তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে সাত শতাধিক ডিম আহরণকারী ডিম সংগ্রহ করেছেন। ডিম আহরণকারীরা এক থেকে পাঁচ বালতি পর্যন্ত ডিম পেয়েছেন।

হালদা নদীর সিপাহীঘাট কুম এলাকার প্রবীণ ডিম আহরণকারী মো. ইদ্রিসসমকালকে বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নদীতে অবস্থান করছি। রাত দুইটার দিকে ডিম ছাড়ে মা মাছ। আমি দুই থেকে বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। এর আগে ২০০ গ্রাম নমুনা  ডিম সংগ্রহ করেছি।’

ডিম সংগ্রহকারী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা নদীতে ১০টি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করি। প্রতিটি নৌকায় গড়ে দুই থেকে আড়াই বালতি করে ডিম পেয়েছি। এখানে রুই কাতলা মৃগেল ও কালিবাউস মাছের ডিম রয়েছে।’

হালদা নদীর ডিম আহরণকারী সমিতির সভাপতি মো. শফিউল আলম জানান, ছয়টি নৌকা ও দুটি বাঁশের ভেলা করে ১৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন তিনি।

রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো.আলমগীর হোসেন বলেন, হালদা নদীতে প্রথমে দুইদফায় নমুনা ডিম ছাড়েন মা মাছ। বৃহস্পতিবার রাতে নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছে। রাউজান ও হাটহাজারী অংশে ৭০০ ডিম সংগ্রহকারী তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেন।

জানা যায়, বংশ পরম্পরায় ডিম সংগ্রহ করেন হালদাপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। অভিজ্ঞ এই লোকজন রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে সরকারি হ্যাচারি, মাটি ও সিমেন্টের কুয়ায় এসব ডিম থেকে রেনু ফোটাবেন। এ কাজে সময় লাগবে চার দিন। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া এসব রেণুর পোনা দ্রুত বড় হয় বলে সারাদেশের মাছ চাষিদের প্রথম পছন্দ। তাই দামও থাকে বেশি। তারপরও এসব রেণু সংগ্রহের জন্য মুখিয়ে থাকেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

হাটহাজারীর গড়দুয়ারার ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশের কারণে কয়েক বছর ধরে আশানুরূপ ডিম পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে আমাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছিল। তবে এবার ভালো ডিম সংগ্রহ হয়েছে। চার দন পর রেণু ফুটবে। নিবিড় পরিচর্যা করতে হবে এখন। তারপর নির্দিষ্ট সময় শেষে পোনা বিক্রি শুরু করা হবে। ফলে দীর্ঘদিন পর লাভের মুখ দেখবেন ডিম সংগ্রহকারি ও হ্যাচারি মালিকর।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ