বিশ্ব বাজারে পোশাক, চামড়া, জুতা, প্লাস্টিক ও প্রকৌশলসহ বিভিন্ন খাতে রপ্তানি বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে প্রযুক্তি সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়া আধুনিকীকরণ গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের নেটওয়ার্কিংয়ের স্বার্থে যাবতীয় তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধকরণ জরুরি।

এছাড়া জোর দিতে হবে এসব শিল্পের শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে বাস্তবায়নের ওপর।

বিশ্ববাজারে বিশেষত ভিয়েতনাম, ভারত ও চীনসহ অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শিগগিরই এইসব পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা জরুরি।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে মার্কেট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্মের (এমআইপি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনরা এসব অভিমত তুলে ধরেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান গুলশানের একটি হোটেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নতুন এই প্ল্যাটফর্ম (https://exportbangladesh.

org/) উদ্বোধন করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে, বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ‘ইসি৪জে' প্রকল্পের কার্যক্রম হিসেবে এই এমআইপির উদ্বোধন করা হয়। এটি এমন একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম-যার মাধ্যমে রপ্তানিকারক বা বিক্রেতারা ক্রেতাদের যাবতীয় তথ্য সহজে পাবেন। বিক্রেতারাও এর মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট ক্রেতা খুঁজে পাবেন। এতে আমদানি-রপ্তানি সহজতর হওয়ার পাশাপাশি উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের নতুন সেতুবন্ধন গড়ে উঠবে। পাশাপাশি দেশের উদ্যোক্তা, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা নতুন ক্রেতা খুঁজে পাবেন। ফলে দেশের রপ্তানিমুখী খাতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হবে। তরুণদের জন্য বাড়বে নতুন কাজের সুযোগ।

এছাড়া প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে পারবে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতার প্রোফাইল, হালনাগাদ তথ্য, নতুন বাজার সম্পর্কে ধারণা, রপ্তানিকৃত পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট ও ‘ইসি৪জে' প্রজেক্টের টাস্ক টিম লিডার হোসনা ফেরদৌস সুমি, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুড্‌স ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ) এর প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদ, বাংলাদেশ বাইসাইকেল অ্যান্ড পার্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিবিপিএমইএ) এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুশতাক আহমেদ তানভীর।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুবুর রহমান বলেন, “মার্কেট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম (এমআইপি) চালুর মাধ্যমে আমরা আমাদের রপ্তানিকারকদের বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সাথে জড়িতদের কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিচ্ছি। এতে তারা বিশ্ব বাজারে আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।”

পরে বাংলাদেশে রপ্তানির বৈচিত্রকরণ শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বিশ্বব্যাংক, দেশের খ্যাতিমান বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন এবং বিদেশি ক্রেতা ও প্রতিনিধিরাসহ মোট ১২০ জন অংশগ্রহণ করেন। প্যানেল আলোচনায় সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা, ডিজিটাল পদ্ধতি এবং নীতি সহায়তার মাধ্যমে দেশের রপ্তানি ভিত্তি সম্প্রসারণের কৌশলগত উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

এমআইপি প্ল্যাটফর্মটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি কনসোর্টিয়ামের আওতায় প্রস্তুত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসেল পার্টনার্স, বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সফটওয়্যার কোম্পানি শুটিং স্টার লিমিটেড এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনকে সফট কর্পোরেশন।

রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ ও চাকরির সুযোগ তৈরিকে গুরুত্ব দিয়ে ‘ইসি৪জে' নামে এই প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি উদ্যোগ। ৮ বছর মেয়াদী এই  প্রকল্পটি গত ২০১৭ সাল থেকে চালু হয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জুতা, প্লাস্টিক এবং প্রকৌশল-এই চারটি ক্ষেত্রে রপ্তানি বৃদ্ধি ও কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ল য টফর ম প রকল প ব শ বব

এছাড়াও পড়ুন:

রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে আরাকান আর্মি: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও গুরুতর নিপীড়ন চালাচ্ছে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সোমবার এ কথা বলেছে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরডব্লিউ বলেছে, রাখাইনে আরাকান আর্মির দখল করা এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বাড়িঘর লুটপাট, নির্বিচারে আটক ও খারাপ আচরণ, বাধ্যতামূলক শ্রম এবং জোর করে বাহিনীতে ভর্তি করানোর মতো নানা নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালিয়ে আসছে। জাতিবিদ্বেষের মতো চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধ এরই অংশ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেছেন, ‘রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর যে ধরনের নিপীড়ন চালিয়ে আসছে, আরাকান আর্মিও ঠিক সে রকম দমননীতি অনুসরণ করছে। তাদের উচিত, এই বৈষম্যমূলক ও নিপীড়নমূলক আচরণ বন্ধ করে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা।’

২০২৩ সালের নভেম্বরে নতুন করে সংঘর্ষ শুরুর পর মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কাছ থেকে কিছু এলাকা দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, তখন আরাকান আর্মি সেসব অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে রোহিঙ্গারা বলেছে, তাদের জীবন এখনো কঠিন ও শৃঙ্খলিত। আরাকান আর্মি ও তাদের রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান বৈষম্যমূলক নীতি-বিধি ও চর্চা অব্যাহত রেখেছে।

‘অনুমতি ছাড়া আমাদের কাজ করা, মাছ ধরা, চাষাবাদ এমনকি চলাচলও নিষেধ ছিল। আমরা খাবারের তীব্র সংকটে ছিলাম। এ সময় অধিকাংশ মানুষ একে অপরের কাছে ভিক্ষা করে বেঁচে ছিলেন।’জুন মাসে বাংলাদেশে আসা ৬২ বছর বয়সী একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী

মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যের বুথিডং উপজেলা থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গত এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে এসব সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

জুন মাসে বাংলাদেশে আসা ৬২ বছর বয়সী একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেছেন, ‘আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে জীবন অসম্ভব রকম কড়াকড়ির মধ্যে ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া আমাদের কাজ করা, মাছ ধরা, চাষাবাদ এমনকি চলাচলও নিষেধ ছিল। আমরা খাবারের তীব্র সংকটে ছিলাম। এ সময় অধিকাংশ মানুষ একে অপরের কাছে ভিক্ষা করে বেঁচে ছিলেন।’

এইচআরডব্লিউ বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাতের মধ্যে আটকে পড়েছেন রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা। দুই পক্ষই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও বেআইনিভাবে বাহিনীতে ঢোকানোর মতো গুরুতর নির্যাতন চালিয়েছে।

২০২৩ সালের শেষ ভাগ থেকে রাখাইন ও চিন রাজ্যে চার লাখের বেশি মানুষ দেশের মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর এ সময় প্রায় ২ লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।

রোহিঙ্গা গ্রামবাসীরা সংস্থাটিকে বলেছেন, আরাকান আর্মি তাঁদের কৃষিজমি, বাড়িঘর, গবাদিপশু, মাছ ধরার সরঞ্জাম, জ্বালানির কাঠ এমনকি কবরস্থান পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে।

বুথিডংয়ের কিন টং গ্রামের দুই বাসিন্দা বলেন, মে মাসে তাঁদের কবরস্থানটি ধ্বংস করে দেয় আরাকান আর্মি। তাঁদের বলে, এখন থেকে ধানক্ষেতে মরদেহ দাফন করতে হবে।

এইচআরডব্লিউর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করার পর আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও অন্যান্য রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আবারও রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়েছে।

বুথিডংয়ের কিন টং গ্রামের দুই বাসিন্দা বলেন, মে মাসে তাঁদের কবরস্থানটি ধ্বংস করে দেয় আরাকান আর্মি। তাঁদের বলে, এখন থেকে ধানক্ষেতে মরদেহ দাফন করতে হবে।

মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, যুদ্ধ এবং রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের জোর করে বাহিনীতে ভর্তি করানোর ফলে মুসলিম রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে।

সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০২৪ সালের মে থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারের রোহিঙ্গাশিবিরে নতুন করে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী নিবন্ধিত হয়েছেন। সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গারা কোনো সরকারি ত্রাণ বা সহায়তা না পাওয়ার কথা বলেছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ মনে করে, সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। তবে জাতিসংঘ ও উদ্বিগ্ন দেশগুলোর উচিত জোর দিয়ে বলা যে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কোনো পরিবেশ এখন নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ