কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের সংকট শেষ, নাকি শুরু
Published: 30th, May 2025 GMT
এই মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়ে। এর কূটনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক অভিঘাত শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, গোটা বিশ্বেই একধরনের ভূকম্পন তৈরি করেছে। এই ‘কম্পন’ শিগগির থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সংঘাতের মূল কারণ নতুন নয়।
পাকিস্তান বরাবরই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৯৪৮ সালের প্রস্তাব অনুযায়ী গণভোটের মাধ্যমে সমাধান চায়। কিন্তু ভারত কাশ্মীরকে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাবি করে এবং এ নিয়ে কোনো আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়।
১৯৮৯ সাল থেকে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিদ্রোহ চলছে। এই সময়ের মধ্যে বহু মানুষ গ্রেপ্তার, নির্যাতন বা হত্যার শিকার হয়েছেন। ভারত এ জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের ভূমিকাও যে বড়, তা অস্বীকার করা যায় না।
গত এপ্রিলে পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার জের ধরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। হামলাকারীদের পরিচয় স্পষ্ট না হলেও ভারত চট করেই পাকিস্তানকে দায়ী করে বসে এবং পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।
আরও পড়ুনভারত–পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক বোমার চেয়েও ভয়ংকর অস্ত্র ২৮ মে ২০২৫এই ঘটনার পর সীমান্তে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে একপর্যায়ে পুরো অঞ্চল যেন সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত একটি ভঙ্গুর শান্তি ফিরে এসেছে। তবে তা যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
এই উত্তেজনা ২০১৯ সালের স্মৃতিকে আবার টেনে আনে। সে বছর কাশ্মীরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ জন সদস্য নিহত হলে ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তান একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং পাইলটকে আটক করে। পরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
সংঘর্ষে উভয় পক্ষেই হতাহত মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এটি কিছুটা আশার জায়গা। তবে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে সরকার ও সেনাবাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতায়। ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত চলা কথিত ‘অপারেশন সিঁদুর’ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বলেই পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ। তাঁদের মত হলো, এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল আর ভারতীয় পরিকল্পনায় ছিল বড় ঘাটতি।আরও পড়ুনশক্তি দেখাতে গিয়ে ভারতের দুর্বলতা বেরিয়ে এল কি?১৩ মে ২০২৫ওই সময় থেকেই ভারত তার সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বাড়াতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনা হয়, ফ্রান্স থেকে আনা হয় রাফাল যুদ্ধবিমান এবং ইসরায়েল থেকে কেনা হয় ড্রোন। পাকিস্তানও পিছিয়ে ছিল না। ২০২১ সালে তারা চীন থেকে ২৫টি জে-১০ যুদ্ধবিমান কিনে নেয়।
২০১৯ সালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, যা কিনা কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা দিত। এই সিদ্ধান্তের পর কাশ্মীরে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়, কারফিউ জারি হয় এবং কার্যত সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় ৭ মে।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের হাতে থাকা চীনা যুদ্ধবিমান দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। এর মধ্যে একটি ছিল রাফাল। ভারত এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা মোট পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে, যদিও ভারত শুধু কিছু ‘অস্পষ্ট ক্ষতি’র কথা বলেছে।
চীনের জে-১০ পশ্চিমা যুদ্ধবিমান রাফালকে হারিয়ে দেওয়ার পর এই ঘটনা আধুনিক যুদ্ধপ্রযুক্তির ভারসাম্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশ্ন ওঠে। এর বাজার–প্রভাবও স্পষ্ট ছিল। এই ঘটনার পর জে-১০ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়ে যায় এবং রাফাল নির্মাতা দাসোঁ এভিয়েশনের শেয়ারের দাম পড়ে যায়।
এই সংঘাত ১০ মে পর্যন্ত চলে। এর মধ্যে পাকিস্তান ভারতের ভেতরকার বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়—যার মধ্যে কামানঘাঁটি ও একটি ক্ষেপণাস্ত্রকেন্দ্র ছিল। ভারতের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র যে সহজেই ঢুকে পড়তে পারে, তা ভারতের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন এক সময়ে (যখন ভারত তার ক্ষয়ক্ষতি সামলাচ্ছে) পাকিস্তানি হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে এই শান্তিপ্রক্রিয়ার মূল কারিগর দাবি করলেও যুদ্ধবিরতির পেছনের প্রকৃত কারণ নিয়ে এখনো মতবিরোধ রয়েছে।
আরও পড়ুনভারত হামলা চালিয়ে যেভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বাড়িয়ে দিল২০ মে ২০২৫সংঘর্ষে উভয় পক্ষেই হতাহত মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এটি কিছুটা আশার জায়গা। তবে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে সরকার ও সেনাবাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতায়। ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত চলা কথিত ‘অপারেশন সিঁদুর’ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বলেই পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ। তাঁদের মত হলো, এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল আর ভারতীয় পরিকল্পনায় ছিল বড় ঘাটতি।
তারপরও ভারতের মূলধারার মিডিয়াগুলো এই সংঘর্ষকে ‘বিজয়’ হিসেবে তুলে ধরে। এমনকি করাচিতে হামলা, পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে আটক করার মতো ভিত্তিহীন খবরও তারা প্রকাশ করেছে। এতে প্রশ্ন ওঠে—এই মিডিয়াগুলোর ওপর ভবিষ্যতে জনগণের আস্থা থাকবে তো?
কূটনৈতিক দিক থেকেও ভারত কিছুটা কোণঠাসা। গাজায় ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েল ভারতের পাশে দাঁড়ায়। তবে তুরস্ক প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন করে এবং অধিকাংশ দেশ নিরপেক্ষ থাকে। মোদি সরকারের জন্য সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় হলো—যুক্তরাষ্ট্র (যার সঙ্গে তারা ঘনিষ্ঠ মৈত্রী গড়তে চেয়েছিল) স্পষ্টভাবে কোনো পক্ষ নেয়নি।
অন্যদিকে পাকিস্তান এ ঘটনাকে নিজেদের বিজয় হিসেবেই দেখছে। ভারতের তুলনায় অনেক ছোট হলেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সফলভাবে প্রতিরোধ গড়তে পেরেছে। রাজনৈতিক চাপে থাকা সামরিক নেতৃত্বও এই সামরিক সাফল্যের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা কিছুটা পুনরুদ্ধার করেছে।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থেকে যায়: এই মাসের ঘটনাগুলো কি ভারত-পাকিস্তান বিরোধের আরেকটি নতুন অধ্যায়মাত্র? নাকি দুই দেশ অবশেষে বুঝবে—কাশ্মীর সংকটের কোনো সামরিক সমাধান নেই, আর আন্তরিক কূটনীতিকে এগিয়ে আনার এখন সময় হয়েছে?
● ফারুক বাজওয়া দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক ও লন্ডনভিত্তিক একজন আন্তর্জাতিক আইনজীবী
দ্য মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্টিভ জবসের মডেল কন্যাকে কতটা জানেন?
মার্কিন ফ্যাশন মডেল ইভ জবস। অ্যাপল কম্পিউটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের কন্যা তিনি। স্টিভ জবস ও লরেন পাওয়েল জবস দম্পতির কন্যা ইভ।
কয়েক দিন আগে বয়সে ছোট প্রেমিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ২৭ বছরের ইভ। তার বরের নাম হ্যারি চার্লস। যুক্তরাজ্যের নাগরিক হ্যারি অলিম্পিকে স্বর্ণপদকজয়ী অশ্বারোহী। বয়সে ইভের চেয়ে এক বছরের ছোট হ্যারি। গ্রেট ব্রিটেনে এ জুটির বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইভের জাঁকজমকপূর্ণ বিয়েতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধনাঢ্য পরিবারের লোকজন। এ তালিকায় রয়েছেন—তারকা শেফ ব্যারনেস রুথ রজার্স, বিল গেটসের মেয়ে জেসিকা, রোমান আব্রামোভিচের মেয়ে সোফিয়া প্রমুখ। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা উত্তরাধিকারীর পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের বিলাসবহুল মিনিবাসের স্রোত বইছিল বিয়ের ভেন্যুতে।
জাকজমকপূর্ণ বিয়েতে কত টাকা খরচ হয়েছে তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। সংবাদমাধ্যমটিকে প্রয়াত স্টিভ জবসের স্ত্রী লরেন পাওয়েল জবস বলেন, “ইভ-হ্যারির বিয়েতে ৫ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়েছে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯০ কোটি ২৮ লাখ টাকার বেশি)।
১৯৯১ সালে লরেন পাওয়েলকে বিয়ে করেন স্টিভ জবস। এ সংসারে তাদের তিন সন্তান। ইভ এ দম্পতির কনিষ্ঠ কন্যা। ১৯৯৮ সালের ৯ জুলাই ক্যালিফর্নিয়ায় জন্ম। তার বড় বোন এরিন, ভাইয়ের নাম রিড। লিসা নামে তার একটি সৎবোনও রয়েছে।
ইভা পড়াশোনা করেছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০২১ সালে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সমাজ (সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড সোসাইটি) বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। একই বছর প্যারিসে ‘কোপের্নি’ সংস্থার হাত ধরে মডেলিং দুনিয়ায় পা রাখেন। মডেলিং জগতে পা রেখেই চমকে দেন স্টিভ-তনয়া।
অনেকে নামিদামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন ইভ। বিখ্যাত ব্যাগ প্রস্তুতকারী সংস্থা লুই ভিতোঁরের মডেল হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। মডেলিংয়ের পাশাপাশি অশ্বারোহী হিসাবেও খ্যাতি রয়েছে ইভের। এক সময় বিশ্বের ২৫ বছরের কম বয়সি ১ হাজার সেরা অশ্বারোহীর মধ্যে পঞ্চম স্থানে ছিলেন তিনি।
মাত্র ছয় বছর বয়সে ঘোড়ার পিঠে চড়ে দৌড় শুরু করেছিলেন স্টিভ জবস তনয়া। ঘোড়ায় চড়ার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মেয়ে যাতে পড়াশোনায় মন দেয়, সে দিকে বরাবরই সজাগ দৃষ্টি ছিল ইভের বাবা-মায়ের। তবে গ্রীষ্মাবকাশ ও বসন্তের ছুটির সময়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য বাবা-মায়ের অনুমতি পেতেন ইভ।
ইভ যেখানে অশ্বারোহণের প্রশিক্ষণ নেন, সেই জায়গার মূল্য দেড় কোটি ডলার। ইভ প্রশিক্ষণ শুরু করার পর তার মা ওই জায়গা কিনে নিয়েছিলেন। তবে মডেল হওয়ার কোনো পরিকল্পনা কখনো ছিল না ইভের। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আগে কখনো মডেলিং করিনি। তবে প্রস্তাব পেয়ে ঘাবড়ে যাইনি। আমার মনে হয়েছিল, কেন নয়? এই প্রস্তাব আমাকে আকৃষ্ট করেছিল।”
ঢাকা/শান্ত