বাংলাদেশ–দক্ষিণ আফ্রিকার ইমার্জিং দলের ম্যাচে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হেলমেট ধরে টানাটানির ঘটনায় শাস্তি পেয়েছেন তিন ক্রিকেটার। দুজন দক্ষিণ আফ্রিকার—ইনোসেন্ট এনতুলি ও মিকায়েল প্রিন্স, একজন বাংলাদেশের রিপন মণ্ডল। আইসিসির কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী তাঁদেরকে সাসপেনশন পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র।

‘বাজে ভাষা’ ব্যবহার করে এনতুলিকে উত্তপ্ত করার কারণে দুটি সাসপেনশন পয়েন্ট পেয়েছেন বাংলাদেশের পেসার রিপন। আর রিপনকে ধাক্কা ও হেলমেট ধরে টানায় চারটি সাসপেনশন পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে এনতুলিকে। একই ঘটনায় রিপনের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলায় একটি সাসপেনশন পয়েন্ট পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মিকায়েল প্রিন্স। এই পয়েন্ট অনুযায়ী ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে বিসিবি ও ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যবস্থা নেবে।

ক্রিকেটারদের শাস্তি প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে ম্যাচ রেফারি সেলিম শাহেদ বলেছেন, ‘শাস্তির বিষয়ে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু সিরিজে আর ম্যাচ নেই, বোর্ডই ব্যবস্থা নেবে। দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যানেজারকে ভিডিও প্রমাণসহ ই–মেইলও করা হয়েছে।’

ঘটনাটি বুধবার মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ইমার্জিং–দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং দ্বিতীয় চার দিনের ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের। বাংলাদেশ ইমার্জিংয়ের ১০৫তম ওভারে এনতুলির বলে ছক্কা মারেন রিপন। এরপর বোলারের উদ্দেশে রিপন কিছু বলার পর এনতুলি তাঁর দিকে এগিয়ে যান।

বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে রিপনের হেলমেট ধরে টান দেন এনতুলি, অনেকটা নুইয়ে পড়েন বাংলাদেশের পেসার। তখন রিপনের দিকে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলতে দেখা যায় মিকায়েলকে। পরে আম্পায়াররা এসে পরিস্থিতি ঠান্ডা করেন। দুই বল পর রিপনের দিকে বল ছুড়ে মারেন এনতুলি।

শেষ দুই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র হয়েছে। এর আগে প্রথম ইনিংসে ৩৭১ রান করে বাংলাদেশ ইমাজিং। বৃষ্টির আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং তোলে ৬ উইকেটে ১৫২ রান।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পবিত্র ঈদুল আজহার দিন চারটি কর্তব্য

প্রতিবছর জিলহজ মাসের দশম দিনে মুসলিম বিশ্বে উদ্‌যাপিত হয় ইসলামের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। এই দিন কেবল আনন্দের নয়; বরং কোরবানির ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির অপূর্ব মিলনবিন্দু। একই সময় আসে হজের মৌসুম, লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষ হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।

নামের তাৎপর্য

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে পবিত্র ঈদুল আজহার ভিন্ন ভিন্ন নাম। মাগরিব (উত্তর আফ্রিকা) অঞ্চলে এটি ‘ঈদুল কাবির’ বা বড় উৎসব নামে পরিচিত। সিরিয়া ও ইরাকের কিছু এলাকায় এটি ‘ঈদুল হাজ্জাজ’ ও তুরস্ক, ইরানসহ এশিয়ার কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এটি ‘ঈদুল কোরবান’ নামে পরিচিত। আরবি শব্দ ‘ঈদ’ অর্থ যা নিয়মিত ফিরে আসে। ইসলামে বছরে মাত্র দুটি ঈদের বিধান দেওয়া হয়েছে—পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। এই দুটি উৎসব ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রোজা ও হজের সঙ্গে সংযুক্ত।

কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে নিজে খাওয়া, আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ ও গরিব–দুঃখীদের দান করা সুন্নাহ।

এই অতুলনীয় ত্যাগ ও আনুগত্যের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ একটি দুম্বা পাঠান, ইসমাইল (আ.)–এর পরিবর্তে যা ইবরাহিম (আ.) কোরবানি করেন।

আরও পড়ুনযে আমলে রিজিক বাড়ে ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে কর্তব্য

পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে রয়েছে তাকবির, ঈদের নামাজ, কোরবানি ও আনন্দ ভাগাভাগি।

১. তাকবির: আরাফার দিন ফজর থেকে তাশরিকের শেষ দিন (জিলহজের ১৩তম দিন) পর্যন্ত ঘরে–বাইরে, মসজিদে ও বাজারে তাকবির ধ্বনিত হয়। সবচেয়ে প্রচলিত তাকবির হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’। এটি আল্লাহর মহিমা ঘোষণা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম।

কোরবানির সময় ঈদের নামাজের পর থেকে তাশরিকের শেষ দিন পর্যন্ত। একটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি নামাজের আগে কোরবানি করেছে, সে যেন আরেকটি কোরবানি করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৬০)

২. ঈদের নামাজ: ঈদের নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি দুই রাকাত, যেখানে প্রথম রাকাতে তিনটি ও দ্বিতীয় রাকাতে তিনটি অতিরিক্ত তাকবির দিতে হয়। এ জন্য আজান বা ইকামতের প্রয়োজন নেই। নামাজের পর খুতবা দেওয়া হয়, যা শোনা মুস্তাহাব। রাসুল (সা.)–এর সুন্নাহ অনুযায়ী, নামাজে যাওয়ার পথে এক রাস্তা ও ফেরার পথে অন্য রাস্তা ব্যবহার করা উত্তম।

৩. কোরবানি: কোরবানি পবিত্র ঈদুল আজহার অন্যতম প্রধান আনুষ্ঠানিকতা। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা। কোরবানির জন্য উট, গরু, ছাগল বা ভেড়া নির্দিষ্ট বয়স ও শারীরিক শর্ত পূরণ করতে হবে। রাসুল (সা.) দুটি সাদা–কালো মোটা ও শিংওয়ালা দুম্বা কোরবানি করেছিলেন (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৫৫৩)। কোরবানির সময় ঈদের নামাজের পর থেকে তাশরিকের শেষ দিন পর্যন্ত। একটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি নামাজের আগে কোরবানি করেছে, সে যেন আরেকটি কোরবানি করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৬০)

কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে নিজে খাওয়া, আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ ও গরিব–দুঃখীদের দান করা সুন্নাহ।

৪. আনন্দ ও শুভেচ্ছা বিনিময়: ঈদের দিন আনন্দ প্রকাশ, নতুন পোশাক পরা, আত্মীয়–বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা ও শুভেচ্ছা বিনিময় করা ইসলামের শিক্ষা। সাহাবিরা ঈদের দিন একে অপরকে বলতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ (আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের থেকে কবুল করুন)। এই শুভেচ্ছা সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও মজবুত করে।

সূত্র: আল–জাজিরা ডটনেট

আরও পড়ুনমক্কার জমজম কূপের উৎপত্তি০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ