মেসিকে তুলে নেওয়ার কারণ জানালেন স্কালোনি
Published: 11th, June 2025 GMT
বিশ্বকাপের টিকিট আগেই নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। তবে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিকে গুরুত্ব দিয়েছিল প্রস্তুতি ও দলের ছন্দ ঠিক রাখার মঞ্চ হিসেবে। যদিও জয়ের দেখা মেলেনি, তবে পিছিয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে আলবিসেলেস্তেরা।
ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। বিশেষ করে থিয়াগো আলমাদার প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তিনি। আলমাদার দুর্দান্ত গোলে সমতায় ফিরেছিল আর্জেন্টিনা। স্কালোনি বলেন, ‘ওর (আলমাদা) সবচেয়ে বড় শক্তি হলো দায়িত্ববোধ ও বল চাওয়ার সাহস। আজ সে অসাধারণ খেলেছে। ওর মতো খেলোয়াড় দলে থাকলে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে।’
পুরো দলের লড়াইয়ের মনোভাব নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি, ‘এই দলের সবচেয়ে বড় গুণ হলো হাল না ছাড়া মানসিকতা। প্রতিপক্ষ কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেও আমরা দমে যাইনি। বল দখলের জন্য লড়াইসহ সব জায়গায় ছেলেরা নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে’
এদিকে ম্যাচ শেষে প্রশ্ন উঠেছে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় মেসিকে তুলে নেওয়া প্রসঙ্গেও। কারণ সাধারণত মেসি পুরো ম্যাচ খেলে থাকেন। এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে স্কালোনি বলেন, ‘মেসিকে তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল না। যখন দেখল আমরা দু’টি পরিবর্তন আনছি, তখন নিজেই এসে বলল তাকে তুলে নেওয়াই ভালো হবে। আমি তাই তাকে বদলি করি। না হলে আমি তাকে তুলতাম না। আপনি জানেন, আমি ওকে কীভাবে দেখি।’
তবে বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসরের আগে এমন ম্যাচগুলোকে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেখছেন আর্জেন্টিনার কোচ, ‘আজকের ম্যাচটা দেখাল, বড় ম্যাচে দল প্রস্তুত আছে’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন আর জ ন ট ন
এছাড়াও পড়ুন:
নৌকা বানিয়ে বছরে আয় ৫ লাখ
বর্ষা মৌসুম আসার আগেই গ্রামে গ্রামে চোখে পড়ত নৌকা তৈরি কিংবা মেরামতের কাজ। সেই ভেজা বা শুকনো কাঠ, তারপিন আর আলকাতরার গন্ধে ভরা ঘাটপাড় এখন আর নেই। এর মাঝেও অনেকে ধরে রেখেছেন নৌকা তৈরির এই পেশা।
বিয়ানীবাজারের নৌকার অনেক কারিগর পেশা বদলে কেউ কাঠমিস্ত্রী হয়েছেন, কেউ চালাচ্ছেন অটোরিকশা। অনেকে ছোটখাটো ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। এর মাঝে ব্যতিক্রম দুবাগ ইউনিয়নের মইয়াখালী গ্রামের আলতাফ হোসেন আতা। চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি পারিবারিক এই পেশা ধরে রেখেছেন। এ থেকে বছরে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় হয় তার।
আলতাফ হোসেন আতা জানান, দাদার কাছ থেকে নৌকা তৈরির কলাকৌশল আয়ত্ত করেন তাঁর বাবা প্রয়াত কুতুব উদ্দিন। তিনি ১২ বছর বয়সে বাবার কাছ থেকে দীক্ষা নেন। আয় রোজগার ভালো হওয়ায় ছেলেকেও শিখিয়েছেন নৌকা তৈরির কারিগরি।
আলতাফ হোসেন আতার ছেলে পারভেজ আহমদ এখন বাবাকে নৌকা তৈরিতে সহযোগিতা করছেন। আতা বলেন, এক যুগ আগেও নৌকার চাহিদা খুব কম ছিল। বহু এলাকায় কৃষিকাজে মানুষের অনীহা, গবাদিপশু লালন-পালন ছেড়ে দেওয়ায় নৌকা তৈরি হতো হাতেগোনা। এ সময়ে সংসার চালাতে হতো খুব কষ্টে। বহুবার এই পেশা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করেও পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা ভেবে সম্ভব হয়নি। আতা জানান, ৭ থেকে ৮ বছর আগে থেকে একটু করে দিন ফিরতে শুরু করে নৌকা তৈরির ক্ষেত্রে। মানুষজন চাষাবাদ ও গবাদিপশু লালন-পালনে মনোযোগী হওয়ায় নৌকার চাহিদা বাড়তে থাকে। এখন বছরে ৪০টির মতো নতুন নৌকা তৈরি করেন তিনি। এ ছাড়া ২০ থেকে ২৫টি পুরাতন নৌকা মেরামত করতে হয়। বলতে গেলে সারা বছরই থাকে ব্যস্ততা।
আলতাফ হোসেন আতা ১৬ হাত লম্বা নৌকা তৈরিতে প্রতি হাতের মজুরি নেন এক হাজার ১০০ টাকা। বিশ হাতের ওপরে হলে মজুরি আরও বেশি। অর্ডার এলে কাঠসহ মজুরি মিলিয়ে একেকটি ১৬ হাত লম্বা নৌকা তৈরি করে দেন ৩৫ হাজার টাকায়।
নৌকা তৈরির এই কারিগর জানান, এখন জারুল গাছ নেই। তাই জারুল গাছের নৌকার চাহিদা থাকলেও সেটি পূরণ করা যায় না। গাছটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেজন্য জারুল গাছের বিকল্প হিসেবে কেউ কেউ রেইনট্রি ব্যবহার করেন।
মইয়াখালী এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি রস্তুম আলী গ্রামের পথ দেখিয়ে বলেন, ২০০৫ সালে এ রাস্তা তৈরি হয়েছে। এর আগে গ্রামের বাজারে বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া যাওয়া যেতো না। এখন বাড়িতে অটোরিকশা আসে। নৌকার প্রয়োজন পড়ে না। আতা দীর্ঘদিন ধরে নৌকা তৈরির কাজ না পেয়ে খুব কষ্টে ছিল। এখন তার ভাগ্য পাল্টে গেছে।
একই গ্রামের বদরুল ইসলাম বলেন, বড়লেখার হাকালুকি হাওর এলাকা থেকে নৌকা তৈরি করতে আতার কাছে মানুষ আসে। শুধু বিয়ানীবাজার নয়, তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বড়লেখা, জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায়ও।
আলতাফ হোসেন আতা বলেন, বাবা-দাদার পেশা ধরে রাখতে পারায় টাকাও রোজগার করছেন, পরিচিতিও ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। বছরে একবার হলেও এক মাসের জন্য বড়লেখার হাকালুকি এলাকায় যেতে হয় নৌকা মেরামতের জন্য। তাঁর ইচ্ছা পেশাটি যেন তার ছেলে ধরে রাখেন।
এ সময় পাশে থাকা পারভেজ আহমদ বলেন, এখন পাঁচ গ্রাম ঘুরে নৌকার কারিগর পাওয়া যায় না। বাবার কাজের চাপ বেশি। তাই তিনি তাঁকে সহযোগিতা করতে করতে তাঁর মতো করে নৌকা তৈরি শিখছেন।