ইসরায়েলের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে ইরানের নিক্ষেপ করা বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র দেশটির কেন্দ্রস্থলে আঘাত হানে। এতে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং তিনজনের প্রাণহানি ও কয়েক ডজন মানুষ আহত হন। শুক্রবার রাতে এ হামলার সময় ইসরায়েলের বাসিন্দাদের মধ্যে যে বিশৃঙ্খলা, হতবিহ্বলতা ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল, তার বিবরণ দিয়েছেন কয়েকজন।

শুক্রবার ভোরে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। এর জবাবে শুক্রবার রাতে কয়েক দফায় ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। এ হামলার মুখে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সতর্কবার্তা জানিয়ে সাইরেন বাজালে লাখ লাখ মানুষ দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যান।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ইরানের নিক্ষেপ করা বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট করার কথা জানিয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিব, রামাত গান ও রিশন এলাকায় ঘরবাড়িতে আঘাত হানে।

তেল আবিবের একটি বহুতল ভবনে আঘাত হানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। ওই ভবনের বাসিন্দা টালি হোরেশ ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেটনিউজকে বলেন, ‘আমরা ঘরের দরজা বন্ধ করে কম্পিউটারে খবর দেখছিলাম। হঠাৎ এত বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটল যে পুরো ভবন কেঁপে উঠল।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক মিনিটের মধ্যে স্মোক ডিটেক্টর বেজে উঠলে আমরা দরজা খুলি। পুরো “লিভিং রুম” ধোঁয়ায় ভরে যায় এবং আমরা আবার নিরাপদ কক্ষে ফিরে যাই।’

উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছানোর আগপর্যন্ত দুই ঘণ্টা হোরেশ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ওই কক্ষে ছিলেন বলে ওয়াইনেট জানায়। হোরেশ জানান, ভবনের নিচের মেঝেগুলোয় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখা যায়।

সেনাসদস্য, অগ্নিনির্বাপণকর্মী, পুলিশ কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রকৌশলীসহ উদ্ধারকর্মীরা কয়েক ঘণ্টা সেখানে তৎপরতা চালান। ভবনের মধ্যে আর কেউ আটকা নেই, সেটা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ইসরায়েলি দুই নারী। রিশন এলাকা, ইসরায়েল, ১৪ জুন, ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ