ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছে। তবে এবারই প্রথম ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর দুই পক্ষ সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হতে থাকায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত শনিবার গভীর রাতে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোতে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানী তেহরানে একটি তেল শোধনাগারেও আগুন ধরে যায়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

বিশ্বের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ ইসরায়েলের হামলায় আগুন লাগার পর ইরান আংশিকভাবে এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে।

ইসরায়েল নজিরবিহীনভাবে ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে। দুই দেশই একে অন্যের ভূখণ্ডে আরও বড় ধরনের হামলার হুমকি দিচ্ছে।

ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল মজুতের অধিকারী– এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) দেওয়া। ফলে দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ছিল। তবে এতদিন ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা এড়িয়ে চলছিল, বিশেষ করে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের চাপ ছিল। কিন্তু এবার তা বদলে গেছে।

গত শনিবার রাতে তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে শাররান জ্বালানি ডিপো ও শহরের দক্ষিণে শার-রে অঞ্চলে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগারে বড় ধরনের আগুন লাগে।  এ ছাড়া ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্স লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। 

হামলায় সাউথ পার্সের ‘ফেইজ ১৪’ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে আগুন লাগে। ফলে এখানে দৈনিক ১ দশমিক ২ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনকারী একটি অফশোর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।

ইসরায়েলের হামলার প্রথম দিনে তেল ও গ্যাস স্থাপনা বাদ পড়লেও বাজারে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। সোমবার  বিশ্ববাজারে তেলের দামে আরও বড় উল্লম্ফন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যালান এয়ার বলেন, ইসরায়েল চায়, ইরানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ুক। তাদের লক্ষ্য, ইরানের এই সরকারের পতন ঘটানো। ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে সম্মান রক্ষার বিষয় আছে। কিন্তু ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা ইরানের নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বন্ধুর সংখ্যা কম। আর থাকলেও ইসরায়েল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মতামতকে পাত্তা দেয় না– বলেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

রমজানের আগে নির্বাচনের ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য আছে: আমীর খসরু

রমজানের আগে নির্বাচনের ব্যাপারে একটা জাতীয় ঐকমত্য আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সবারই মতামত একটা। এই জায়গায় দ্বিমত কোথাও আছে বলে আমরা মনে করি না। এখানে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছে। বিভিন্ন কারণে আমরা এই জায়গাতে এসেছি এবং জাতিও এখানে ঐকমত্য পোষণ করছে।’

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো ডায়াস ফেরেস বৈঠক করেছেন। বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এই বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর শেষ হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরু বলেন, ‘দিনক্ষণ তো নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে। এটা আর সরকার বলতে পারবে না, আমরাও বলতে পারবো না। আমরা সেটার অপেক্ষা করব। নিশ্চিয় কোনো একটা সময়ে আগামীদিনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে থেকে একটা দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। এটার জন্য তো আমাদের ধৈর্য থাকতে হবে। একদম অস্থিরতার মধ্যে সার্বক্ষণিক থাকলে তো চলবে না। জাতিকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে, একটু সহনশীল হতে হবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের মধ্যে আস্থারও ব্যাপার আছে। আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, একটু ধৈর্য ধরুন। আমরা সঠিক পথেই যাব। জাতি অবশ্যই একটা গণতান্ত্রিক পথে চলছে। সেটা আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সমাধান করতে পারব। দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। অতটুকু আস্থা আমাদের সবাইকে রাখতে হবে।’

লন্ডন বৈঠক প্রসঙ্গে জামায়াতের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘অন্য কোনো দলের মতামতের বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। কিন্তু একটু আগে আমি যেটা বলেছি, সকলের মতামত দেওয়ার অধিকার থাকতে হবে। কথা বলার অধিকার থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে মতৈক্য না হলেও, মতভেদ থাকলেও অপরের বক্তব্যের প্রতি আমাকে সম্মান থাকতে হবে।’

দেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘তাদের মনোভাব হচ্ছে, নির্বাচিত সরকার হলে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সুবিধা হবে। তারা সেটার অপেক্ষায় আছে।’

অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘এ ব্যাপারে (নির্বাচন) সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কথা হবে। এটা তো খুব স্বাভাবিক। রুটিন ব্যাপার। আমরা একটু ধৈর্য ধরি। লন্ডনে যে বৈঠক হয়েছে, জাতির জন্য বড় ধরনের একটা ইতিবাচক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আমরা কোনো ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ করে সামনের দিকে চলের পথকে বিঘ্নিত করা ঠিক হবে না। সবকিছুর সমাধান আগামী দিনে হবে। সময মতো দেশে নির্বাচন হবে।’

ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘দুদেশের সম্পর্কের মধ্যে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আগামীদিনে নির্বাচিত সরকার আসলে ব্রাজিলের সঙ্গে কী কী কাজ করার সম্ভাবনা আছে, এগুলো দীর্ঘ আলোচনা করেছি। এখানে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে আমাদের কৃষি। আপনারা জানেন কৃষিতে ব্রাজিল অনেকটা এগিয়ে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘আরেকটি ইন্টারেস্টিং আলোচনা হয়েছে, সেটি হচ্ছে স্পোর্টস। ব্রাজিল ফুটবল, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রাজিলের সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। তারা খুবই ইন্টারেস্টেড। বিভিন্ন বিষয়সহ স্পোর্টস নিয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ