গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সেখানকার পরিস্থিতি এখন ‘ভয়াবহ ও অমানবিক কষ্টকর’ বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক। সোমবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫৯তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বার্ষিক প্রতিবেদনে উপস্থাপনের সময় টুর্ক বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং যুদ্ধের পদ্ধতি গাজায় ভয়াবহ ও অযৌক্তিক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।’

টুর্ক বলেন, ‘ইসরায়েল খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং জীবনরক্ষাকারী ত্রাণ আটকে দিচ্ছে। আমি হতাশাগ্রস্ত বেসামরিক মানুষের ওপর হামলার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি শীর্ষ কর্মকর্তাদের ‘মানবতাবিরোধী ও ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য’ ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

গতকাল সোমবার ভোর থেকে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ জন নিহত হয়েছেন রাফায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সহায়তা নিতে এসে। ওই ত্রাণ কেন্দ্রটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালনা করে।

গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, তাদের মরদেহ ও আহত ২০০ জনের বেশি মানুষকে খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকার রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতাল ও নাসের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৫ হাজার ৩৬২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বিপুলসংখ্যক শিশু রয়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক সামরিক বিশ্লেষক ট্রিটা পার্সি আল জাজিরাকে বলেছেন, ইরানকে ভুলভাবে মূল্যায়ন করেছে ইসরায়েল। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল মনে করেছিল, এটি হবে শরণার্থী শিবিরে বোমা ফেলার মতো সহজ, কিন্তু তারা কঠোর প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।’

অন্যদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন জানিয়েছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজায় আরও মানবিক ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে বলে তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ জ গণহত য ইসর য় ল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ