ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধ: বিশ্ব অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়তে পারে
Published: 18th, June 2025 GMT
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে টানা পঞ্চম দিনের মতো প্রাণঘাতী হামলা-পাল্টা হামলা চলছে। এই পরিস্থিতিতে ক্রমেই আশঙ্কা বাড়ছে যে এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই অঞ্চলের বিশেষত্ব হলো, এটি বিশ্বের তেল ও গ্যাসের অন্যতম মূল উৎপাদনকেন্দ্র। ফলে শঙ্কা আরও বাড়ছে।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমারা রাশিয়ার তেল বাণিজ্যে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়। সেই নিষেধাজ্ঞার জেরে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়। তার সঙ্গে বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতি। ফলে আবারও তেলসমৃদ্ধ অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হলে কী পরিস্থিতি হবে, তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। খবর আল–জাজিরা।
বিষয়টি হলো, অর্থনৈতিক উৎপাদনের মূল জ্বালানি হচ্ছে তেল। ফলে তেলের দাম বাড়লে উৎপাদনের ব্যয়ও বেড়ে যায়। এর প্রভাব শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ে ভোক্তার ওপর, বিশেষ করে খাদ্য, পোশাক ও রাসায়নিকের মতো জ্বালানি-নির্ভর পণ্যের ক্ষেত্রে। এই সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্বজুড়ে তেল আমদানিকারক দেশগুলো আবারও উচ্চ মূল্যস্ফীতির মুখে পড়বে। তখন আবারও প্রবৃদ্ধির গতি কমে যেতে পারে।
এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নীতিগত স্বাধীনতা সীমিত হয়ে যেতে পারে। জি-সেভেনভুক্ত ধনী দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা সুদ হার কমানোর পথে হাঁটছেন। এই মুহূর্তে হঠাৎ করে জ্বালানির দামে বড় ধরনের ধাক্কা এলে বিষয়টি উদ্বেগজনক হবে। গত শুক্রবার ইসরায়েলের হামলা শুরু হওয়ার পর বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ইতিমধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। পরিস্থিতি আরও গুরুতর হলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে, সেটাই মূল শঙ্কা।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটির নীতি সুদের হার কমিয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানুয়ারিতে আবার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় সব দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ এখনো সুদের হার কমানোর পদক্ষেপ নেয়নি। এখন তেলের দাম বাড়তে থাকলে তারা সেই পথে হাঁটবে না।
উচ্চ নীতি সুদের কারণে এমনিতেই গত কয়েক বছরে প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে, যার মূল কারণ ছিল তেলের মূল্যবৃদ্ধি। এখন আবার তেলের দাম বাড়লে পরিস্থিতির আরও অবনিত হবে।
সেই সঙ্গে সবার নজর এখন হরমুজ প্রণালির দিকে। ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত এই জলপথ বৈশ্বিক তেল বাণিজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পথ। ইরান এর আগে বহুবার এই প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। যদি তা বাস্তবে ঘটে, অনেক তেলবাহী ট্যাংকার আটকে পড়বে আর তেলের দাম আকাশ স্পর্শ করবে।
আমেরিকার জ্বালানি তথ্য সংস্থা (ইআইএ) জানায়, প্রতিদিন বিশ্বে যে পরিমাণ তেল ব্যবহৃত হয়, তার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ—১৮ থেকে ১৯ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ ব্যারেল এই প্রণালি দিয়ে পরিবহন করা হয়। তেলের দামের সঙ্গে সবকিছুর দামের সম্পর্ক আছে। ফলে তেলের দাম বাড়লে বিশ্বজুড়ে আবারও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের শহর হার্জলিয়ার একটি ভবন থেকে আগুন ও ধোয়ার কুণ্ডলী উড়ছে। ১৭ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মামদানির উত্থান থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন ইউরোপের বামপন্থীরা
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির উত্থান ইউরোপের বামপন্থী রাজনীতিকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে আগামী বছর স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই মঙ্গলবার ৪ নভেম্বর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউরোপের নেতারা চোখ রাখছেন মামদানির ওপর।
মামদানির নির্বাচনী প্রচার দেখতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দলীয় কৌশলবিদেরা আগেই আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্কে এসেছেন। তাঁদের লক্ষ্য, মামদানিকে কাছ থেকে দেখে তাঁর রাজনীতির কৌশল শেখা। কারণ, মামদানি একেবারে সাধারণ অবস্থান থেকে উঠে এসে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহরের নেতৃত্বের দৌড়ে শীর্ষে পৌঁছেছেন। ইউরোপের রাজনীতিকেরা শিখতে চান, মামদানির তৃণমূলভিত্তিক প্রচারণা নিউইয়র্কে যেমন সফল হয়েছে, সেটি তাঁদের অঞ্চলেও কার্যকর হবে কি না।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বামপন্থীদের জোট দ্য লেফট গ্রুপের ফরাসি সহসভাপতি মানোঁ ওব্রি গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে মামদানির প্রচারে অংশ নেন। ওব্রি ও তাঁর দল ফ্রান্স আনবাউড মামদানিকে পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন। তাঁরা মামদানির মডেল অনুসরণ করে ফ্রান্সজুড়ে ২০২৬ সালের পৌরসভা নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে চান।
জার্মানির পুঁজিবাদবিরোধী দল দ্য লেফট নিউইয়র্কে চার কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছে। তাঁরা মামদানির প্রচারকৌশলের প্রধান মরিস ক্যাটজসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দলটির সংসদীয় কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক লিজা ফ্লাউম বলেন, মামদানির মতো কৌশল অনুসরণ করে অতীতে তাঁদের দল ভালো করেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি তাঁদের কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে দরজায় দরজায় গিয়ে প্রচারের কৌশল নিয়েছিল তাঁদের দল। ফ্লাউম আশা করেন, বার্লিনে আগামী সেপ্টেম্বরের আইনসভা নির্বাচনে দ্য লেফট মামদানির বর্তমান প্রচারণাকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করবে।
এদিকে মেয়র নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকা মামদানি বিদেশে তাঁর প্রচারকৌশল নিয়ে মাতামাতির বিষয়টিকে এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে মামদানি বলেন, আপাতত তাঁর মনোযোগ পুরোপুরি স্থানীয় রাজনীতিতে।
ফ্রান্স ও জার্মানির মতোই যুক্তরাজ্যের রাজনীতিকেরা মামদানির প্রচারকৌশল দেখে মুগ্ধ। মামদানির ছোট ছোট ভিডিওতে ব্যক্তিত্ব ও আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে জীবনযাত্রার খরচের বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আবার তাঁকে একই সঙ্গে আপনজন হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়েছে।
আরও পড়ুননিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি৭ ঘণ্টা আগেফ্রান্স আনবাউডের সংসদ সদস্য দানিয়েল ওবোনো বলেন, ‘মামদানির দলীয় নির্বাচনে জয়টাই একটা বড় রাজনৈতিক ঘটনা। শুধু তিনি কী নিয়ে লড়েছেন, তা–ই নয়, বরং কীভাবে লড়েছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর যোগাযোগের কৌশল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারসহ অনেক কিছুই আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
যুক্তরাজ্যের গ্রিন পার্টির নেতা মোথিন আলি বলেন, বামপন্থীদের এখন শেখা দরকার, কীভাবে মামদানির মতো করে সংক্ষিপ্ত অথচ প্রভাবশালী বার্তা পৌঁছে দিতে হয়। যুক্তরাজ্যের সাবেক লেবার নেতা এবং বর্তমানে ইয়োর পার্টির নেতৃত্বে থাকা জেরেমি করবিনও এক এক্স পোস্টে মামদানির প্রচারে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন৯ ঘণ্টা আগে