খাগড়াছড়ির তরুণ বিপুল ত্রিপুরা ২০১৭ সালে পাঁচ একর পাহাড়ি জমিতে আমের বাগান করেন। ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে লাগান ৫০০টি আম্রপালির চারা। শুরুতে ৯০ হাজার টাকার আম বিক্রি করেন তিনি। এখন প্রতি মাসে গড়ে বিক্রি করেন তিনি ৭ লাখ টাকার আম। 

শুধু বিপুল নন; তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ৫০ হাজার ছোটবড় উদ্যোক্তা ফল চাষে যুক্ত হয়েছেন। তাদের হাত ধরে পাহাড়ি এলাকায় আম, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, আনারস, কমলাসহ ৪৫ জাতের ফল উৎপাদিত হচ্ছে। বাজার তৈরি হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, সারাদেশে উৎপাদিত ফলের প্রায় ১৫ শতাংশ এখন আসে এই তিন পার্বত্য জেলা থেকে। পাহাড়ের ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। 

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত ফলের প্রায় ৮২ শতাংশই ছয়টি ফল– আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, আনারস ও কমলা। প্রতিবছর এই ছয় ফল প্রায় ১৬ লাখ টন উৎপাদিত হয়ে থাকে। এসব ফল ছাড়াও পাহাড়ে এখন চাষ হচ্ছে ড্রাগন, কাজুবাদাম, জলপাই, আপেল কুলসহ আরও ৩৯টি ফল। 
 
ফল চাষে ৯২ হাজার হেক্টর জমি

রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স বলছে, তিন পার্বত্য জেলাতে শুধু ফলের বাজারই রয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার। ২০০৪ সাল থেকে মূলত বাণিজ্যিকভাবে ফলের বাগান করা শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ফলবাগানের সংখ্যা। পাহাড়ি জমিও ফল চাষের আওতায় আসতে থাকে। ২০১৭ সালে প্রায় ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টন ফল উৎপাদিত হয়। আট বছরের মাথায় উৎপাদন ১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায়  ১৯ লাখ টনে। ফল চাষে জমির পরিমাণও বেড়েছে ৭ হাজার হেক্টর। 

বাধা আছে পদে পদে

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) পার্বত্য অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ নাসিম হায়দার বলেন, এখানে ফল সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই কোটি টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ দেওয়া হয় না। সারাদেশের মতো সহজ শর্তে বেশি ঋণ দেওয়া হলে অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি হতো এখানে। বাড়ত কর্মসংস্থানের সুযোগও। 

রাঙামাটিতে ২০ একর জায়গায় আনারসের চাষ করা সাধন চাকমা জানান, জেলার ছয় উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় নৌপথে। কাপ্তাই হ্রদে পানি শুকিয়ে গেলে যাতায়াত ও নিত্যপণ্য সরবরাহে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা হলে যাতায়াতের কিছু বাধা কাটত। স্থলপথও সহজ নয়। 
রাঙামাটি সফরে এসে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই), গাজীপুরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) ড.

মো. আব্দুর রশীদ বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে সহিষ্ণু ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন, অমৌসুমি ফলের চাষ আরও বৃদ্ধি করা দরকার। এটি করা গেলে আয় বাড়বে স্থানীয়দের। সুফল পাবে পুরো দেশ। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামে আছে দেশের মোট জমির প্রায় ১০ শতাংশ। আবার পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ৮৯ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এর মধ্যে প্রায় ৭৮ শতাংশের অবস্থান চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে। এদের জীবনমান উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে এই ফলের বাজার।

চাষির মাথাব্যথা সেচ ও পোকা

রাঙামাটির ফলচাষি সোহেল মারমা জানান, ফলের জমিতে সেচ দেওয়া পাহাড়ে এক প্রধান সমস্যা। পাহাড়ে যে বছর এপ্রিলে কম বৃষ্টি হয় বা হয় না সে বছর আম, লিচু ইত্যাদি ফল ঝরা বেড়ে যায়। ক্রমাগতভাবে পাহাড়ি বন উজাড়ের ফলে বৃষ্টি কম হয় ও পাহাড়ের ঝিরিগুলো পানির সঞ্চয় থাকে না। ফলে ঝিরি বা পাহাড়ের খাদে জমা জলাশয়ের পানি থেকে পাম্প করে ফলগাছে সেচ দেওয়া কঠিন। এ ক্ষেত্রে অল্প পানি থাকলেও ড্রিপ সেচ পদ্ধতিতে ফলগাছের গোড়ায় সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রোগ ও পোকা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করা দরকার। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফল উৎপ দ ত ফল চ ষ

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজ নেই, টস জিতে ব‌্যাটিংয়ে বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে গলে আগে ব‌্যাটিং করবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে দশটায় ম‌্যাচটি শুরু হবে। 

টস
বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত টস জিতেছেন। তিনি ব‌্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জ্বরের কারণে এই ম‌্যাচে খেলতে পারছেন না স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। 

৮ বছর পর গলে বাংলাদেশ

আরো পড়ুন:

র‌্যাংকিংয়ে বড় লাফ কামিন্দুর, লিটনের অবনমন

রেটিংয়ে তামিমের রেকর্ড ভাঙলেন লিটন

সাগর পাড়ের স্টেডিয়াম গল। পৃথিবীর অন‌্যতম নয়নাভিরাম স্টেডিয়াম। ১৯৯৮ সালে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কেবল দুটি ম‌্যাচ খেলেছে এই মাঠে। ২০১৩ এবং ২০১৭ সালে। ৮ বছর পর বাংলাদেশ এই মাঠে খেলতে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে মুশফিকুর রহিম এই মাঠে প্রথম বাংলাদেশি ব‌্যাটসম‌্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ম‌্যাচটি ড্র করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পারেনি ম‌্যাচ বাঁচাতে। লম্বা সময় পর গলে ফিরে বাংলাদেশ কেমন করে সেটা দেখার।

পিঠাপিঠি অবস্থানে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা

সবশেষ টেস্ট চ‌্যাম্পিয়নশিপে পিঠাপিঠি অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা ১৩ ম‌্যাচে মাত্র ৫টিতে জিতেছিল। পয়েন্ট তালিকায় ছিল ছয় নম্বরে। বাংলাদেশ ১২ ম‌্যাচে মাত্র ৪টিতে জিতেছিল। পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান ছিল সাতে। এবার দুই দল নিজেদেরকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে সেটাই দেখার। 

টেস্ট চ‌্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু

আইসিসি টেস্ট চ‌্যাম্পিয়নশিপ বা টেস্ট বিশ্বকাপের চতুর্থ চক্রের খেলা শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার এই টেস্ট সিরিজ দিয়ে। ২০২৫ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত নয়টি দেশ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। প্রতিটি দল দুই বছরের মধ্যে ছয়টি সিরিজ খেলবে। যার তিনটি দেশের মাটিতে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। প্রতিটি সিরিজ হবে কমপক্ষে দুই টেস্টের। সর্বোচ্চ পাঁচটি টেস্ট থাকতে পারবে এক সিরিজে। এই সময়ে সিরিজ হবে মোট ২৭টি, যেখানে টেস্টের সংখ্যা ৭১টি। ২০২৭ সালের জুনে লিগ টেবিলের শীর্ষ দুই দলকে নিয়ে হবে ফাইনাল। শেষ তিন আসরের মতো ইংল্যান্ডেই বসবে সাতাশের ফাইনাল। সম্ভাব্য ভেন্যু লর্ডস।

  

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাঙামাটির পাহাড়ে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস
  • মিরাজ নেই, টস জিতে ব‌্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
  • ইরানে হামলা কি মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেবে