ফলের তিন হাজার কোটি টাকার বাজার পাহাড়ে
Published: 19th, June 2025 GMT
খাগড়াছড়ির তরুণ বিপুল ত্রিপুরা ২০১৭ সালে পাঁচ একর পাহাড়ি জমিতে আমের বাগান করেন। ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে লাগান ৫০০টি আম্রপালির চারা। শুরুতে ৯০ হাজার টাকার আম বিক্রি করেন তিনি। এখন প্রতি মাসে গড়ে বিক্রি করেন তিনি ৭ লাখ টাকার আম।
শুধু বিপুল নন; তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ৫০ হাজার ছোটবড় উদ্যোক্তা ফল চাষে যুক্ত হয়েছেন। তাদের হাত ধরে পাহাড়ি এলাকায় আম, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, আনারস, কমলাসহ ৪৫ জাতের ফল উৎপাদিত হচ্ছে। বাজার তৈরি হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, সারাদেশে উৎপাদিত ফলের প্রায় ১৫ শতাংশ এখন আসে এই তিন পার্বত্য জেলা থেকে। পাহাড়ের ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত ফলের প্রায় ৮২ শতাংশই ছয়টি ফল– আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, আনারস ও কমলা। প্রতিবছর এই ছয় ফল প্রায় ১৬ লাখ টন উৎপাদিত হয়ে থাকে। এসব ফল ছাড়াও পাহাড়ে এখন চাষ হচ্ছে ড্রাগন, কাজুবাদাম, জলপাই, আপেল কুলসহ আরও ৩৯টি ফল।
ফল চাষে ৯২ হাজার হেক্টর জমি
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স বলছে, তিন পার্বত্য জেলাতে শুধু ফলের বাজারই রয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার। ২০০৪ সাল থেকে মূলত বাণিজ্যিকভাবে ফলের বাগান করা শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ফলবাগানের সংখ্যা। পাহাড়ি জমিও ফল চাষের আওতায় আসতে থাকে। ২০১৭ সালে প্রায় ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টন ফল উৎপাদিত হয়। আট বছরের মাথায় উৎপাদন ১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ লাখ টনে। ফল চাষে জমির পরিমাণও বেড়েছে ৭ হাজার হেক্টর।
বাধা আছে পদে পদে
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) পার্বত্য অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ নাসিম হায়দার বলেন, এখানে ফল সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই কোটি টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ দেওয়া হয় না। সারাদেশের মতো সহজ শর্তে বেশি ঋণ দেওয়া হলে অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি হতো এখানে। বাড়ত কর্মসংস্থানের সুযোগও।
রাঙামাটিতে ২০ একর জায়গায় আনারসের চাষ করা সাধন চাকমা জানান, জেলার ছয় উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় নৌপথে। কাপ্তাই হ্রদে পানি শুকিয়ে গেলে যাতায়াত ও নিত্যপণ্য সরবরাহে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা হলে যাতায়াতের কিছু বাধা কাটত। স্থলপথও সহজ নয়।
রাঙামাটি সফরে এসে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই), গাজীপুরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) ড.
চাষির মাথাব্যথা সেচ ও পোকা
রাঙামাটির ফলচাষি সোহেল মারমা জানান, ফলের জমিতে সেচ দেওয়া পাহাড়ে এক প্রধান সমস্যা। পাহাড়ে যে বছর এপ্রিলে কম বৃষ্টি হয় বা হয় না সে বছর আম, লিচু ইত্যাদি ফল ঝরা বেড়ে যায়। ক্রমাগতভাবে পাহাড়ি বন উজাড়ের ফলে বৃষ্টি কম হয় ও পাহাড়ের ঝিরিগুলো পানির সঞ্চয় থাকে না। ফলে ঝিরি বা পাহাড়ের খাদে জমা জলাশয়ের পানি থেকে পাম্প করে ফলগাছে সেচ দেওয়া কঠিন। এ ক্ষেত্রে অল্প পানি থাকলেও ড্রিপ সেচ পদ্ধতিতে ফলগাছের গোড়ায় সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রোগ ও পোকা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করা দরকার।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি