কুড়িগ্রামের উলিপুরের থেতরাই দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার মাঠে জমে রয়েছে হাঁটু পরিমাণ পানি। প্রায় তিন মাস ধরে এই জলাবদ্ধতা থাকলেও সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে মাদ্রাসায় আসছে না শিক্ষার্থীরা। এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে। 
মাঠের পানি আগে পশ্চিম দিক দিয়ে নেমে যেত। সীমানা প্রাচীর দেওয়ার কারণে পানি যেতে পারছিল না। মাদ্রাসা ঘেঁষেই নূর হোসেন নামে এক ব্যক্তির পুকুর। কমিটির সদস্যরা তাঁকে অনুরোধ করলে তিনি পানি নিষ্কাশনের জন্য পুকুরের সঙ্গে নালা তৈরিতে অমত করেননি। মাঠের দুর্গন্ধযুক্ত পানি পুকুরে পড়ায় মাছ মরে যায়। সে কারণে নূর হোসেন পানি যাওয়া বন্ধ করে দেন। 
জানতে চাইলে নূর হোসেন বলেন, পুকুরে মাছ ছাড়া হয়। মাদ্রাসার মাঠের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানির কারণে মাছ মরে যাচ্ছিল। তাই নালা বন্ধ করে দিয়েছি। বিষয়টি ইউএনওকেও জানিয়েছি। 
তবে ভিন্ন কথা শোনা গেছে গোলাম রব্বানী, বাবু মিয়া, আবু বক্কর সিদ্দিকসহ স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে। তারা বলছেন, সুপার থেতরাই ইউনিয়নের বিবাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে কাজ করেন। মাদ্রাসার প্রতি উদাসীন। তিনি স্থানীয়দের বাদ দিয়ে ছোট ভাইয়ের স্ত্রী লালমনিরহাটের বাসিন্দা নিলুফা আক্তারকে আয়া পদে চাকরি দিয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা মাঠের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেয়। 
মাদ্রাসা ঘুরে দেখা গেছে, পুরো মাঠে পানি থইথই। কোথাও গোড়ালিসম পানি; কোথাও হাঁটু পর্যন্ত। কালো থিকথিকে পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মাটি পেরিয়ে শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার মতো পরিবেশ নেই। পা রাখলেই নির্ঘাত খোসপাচড়া হবে। 
মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার পর কথা হয় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোরছালিনের সঙ্গে। সে জানায়, হাঁটু সমান পানি ভেঙে ক্লাসে যেতে হয়। পচা পানির কারণে চুলকানি হয়। ক্লাসে মশার উপদ্রব। লেখাপড়ার পরিবেশ নেই। করোনা-ডেঙ্গুর ভয়ও আছে। বাবা-মা মাদ্রাসায় আসতে দিতে চান না। 
অফিস সহকারী রুহুল আমিন বলেন, আগে নূর হোসেন মিয়ার পুকুর দিয়ে পানি বের হয়ে যেত। এখন তিনি পানি যেতে দেন না। বেশি বৃষ্টি হলে ক্লাসরুমে পানি ওঠে। পুরো বর্ষায় মাঠে পানি থাকে। তাই মাদ্রাসা খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীরা আসে না। 
সুপার ওয়াহেদ আলী বলেন, নূর হোসেনকে ডেকে তাঁর পুকুর দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিতে অনুরোধ করা হয়। তিনি রাজি হননি। আমাদের সামর্থ্য নেই মাটি ফেলে মাঠ ভরাট করব। জলাবদ্ধতার বিষয়টি সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা সরেজমিন দেখে গেছেন। সভাপতিকে এ বিষয়ে সহায়তা করতে অনুরোধ করেছি। 
শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো.

ওয়াহেদুল ইসলাম বলেন, নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি জানি না। সরেজমিন দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
মাদ্রাসা সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা বলেন, নূর হোসেন ও মাদ্রাসা সুপারকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। সমাধান হয়নি। মাঠ ভরাটের জন্য ‌২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ