ইসলামের দৃষ্টিতে গরিবকে ভালোবাসা কেবল মানবতা নয়; বরং এটি একটি ইবাদত। কোরআন-সুন্নাহ আমাদের শিখিয়েছে, অভাবীর মুখে হাসি ফোটানোই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সেরা উপায়। এতিমদের প্রতি দয়া, দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রমাণ হিসাবে রাসুল (সা.) জান্নাতে এমন নিকটত্ব ও ঘনিষ্ঠতার আশ্বাস দিয়েছেন, যা অন্য কোনো সাধারণ ইবাদতের মাধ্যমে পাওয়া কঠিন।

রাসুল (সা.

) বলেছেন, ‘আমি এবং যে ব্যক্তি কোনো এতিমের দায়িত্ব গ্রহণ করে ও তার দেখভাল করে, সে জান্নাতে এভাবে একসঙ্গে থাকবে।’ এ কথা বলার সময় তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল সামান্য ফাঁক করে দেখান। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৩০৪)

তোমরা কি সাহায্য পাওয়া এবং রিজিক লাভ করো না তোমাদের দুর্বলদের মাধ্যমে?’সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৮৯৬

আজকের সমাজে অর্থ ও ভোগবিলাসের প্রতিযোগিতায় আমরা অনেক সময় গরিবদের ভুলে যাই। অথচ ইসলামের চোখে তারাই আমাদের রিজিক ও বরকতের অন্যতম মাধ্যম।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়ার কোনো দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেন, আল্লাহ তাআলা কেয়ামত দিবসে তাঁর দুঃখ–কষ্ট দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো সংকটে পড়া লোকের ওপর পরিস্থিতি সহজ করে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতের পথ তার জন্য সহজ করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের গোপন দোষ আড়ালে রাখেন, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁর দোষ আড়ালে রাখবেন। আর আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৯৯)

প্রখ্যাত সাহাবী সা’দ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রা.) মনে করতেন, তাঁর অন্যদের চেয়ে কিছুটা শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। তখন রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, ‘তোমরা কি সাহায্য পাওয়া এবং রিজিক লাভ করো না তোমাদের দুর্বলদের মাধ্যমে?’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৮৯৬)

রাসুল (সা.) এ হাদিসে একটি মহান সত্য শিক্ষা দিয়েছেন, তা হলো, সমাজের যেসব মানুষ দুর্বল, অসহায়, গরিব বা প্রতিবন্ধী, তাদের উপস্থিতি এবং তাদের দোয়ার কারণে মহান আল্লাহ গোটা সমাজে রহমত বর্ষণ করেন। অনেক সময় আমরা গরিবদের অবহেলা করি, অথচ তাঁদের দোয়াই আমাদের বিজয় ও বরকতের মূল কারণ হয়। তাঁরা সমাজের বোঝা নয়; বরং রহমতের মাধ্যম।

আরও পড়ুনকেনা জমিতে খুঁড়ে পাওয়া গেল সোনা২৩ অক্টোবর ২০২৩আল্লাহ বলবেন, ‘আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে খাওয়াওনি।’ সে বলবে, ‘আমার প্রতিপালক, আপনি তো সকল সৃষ্টির প্রতিপালক, আমি কীভাবে আপনাকে খাওয়াব?’

হাদিসে কুদসিতে আছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, ‘আদম সন্তান, আমি অসুস্থ ছিলাম, অথচ তুমি আমার খোঁজ নাওনি।’ সে বলবে, ‘আমার প্রতিপালক, আপনি তো সমস্ত জগতের প্রতিপালক, আমি কীভাবে আপনার খোঁজ নেব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, তুমি তার খোঁজ করোনি। যদি তুমি তার খোঁজ নিতে, তাহলে তুমি আমাকে তার নিকটে পেতে।’

আবার আল্লাহ বলবেন, ‘আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে খাওয়াওনি।’ সে বলবে, ‘আমার প্রতিপালক, আপনি তো সকল সৃষ্টির প্রতিপালক, আমি কীভাবে আপনাকে খাওয়াব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, তুমি তাকে খাওয়াওনি। যদি তুমি তাকে খাওয়াতে, তাহলে তুমি তা আমার নিকটে পেতে।’

আল্লাহ আবার বলবেন, ‘আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে পানি দাওনি।’

সে বলবে, আমার প্রতিপালক, ‘আমি কীভাবে আপনাকে পানি দেব, অথচ আপনি তো সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক?’ আল্লাহ বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পানি দাওনি। যদি তুমি তাকে দিতে, তাহলে তুমি তা আমার নিকটে পেতে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৬৯)

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমাদের উচিত, প্রিয় বস্তু ও প্রিয় সম্পদ দিয়ে তাঁর পথে খরচ করা এবং অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা কখনোই পূর্ণ নেকি লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯২)

নিজে পছন্দ করা সত্ত্বেও তারা খাদ্য দান করে গরিব, এতিম ও বন্দীদের।সুরা দাহর, আয়াত: ৮

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘নিজে পছন্দ করা সত্ত্বেও তারা খাদ্য দান করে গরিব, এতিম ও বন্দীদের।’ (সুরা দাহর, আয়াত: ৮)

আজকের সমাজে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েই চলছে। অথচ ইসলাম এই ব্যবধান ঘোচাতে চায়—ভালোবাসা, দয়া ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে। গরিবদের প্রতি ভালোবাসা শুধু মানবতা নয়; বরং জান্নাতের পথ।

আসুন, ইসলামের মহান এ আদর্শ বাস্তব জীবনে বাস্তবায়ন করি। গরিব, এতিম, মিসকিনদের ভালোবাসি, সাহায্য করি। তবেই দুনিয়া হবে শান্তির, আখিরাত হবে মুক্তির।

লেখক: খতিব, টোলারবাগ কেন্দ্রীয় মসজিদ

আরও পড়ুনসালামে ছোট–বড় ধনী–গরিব ভেদ নেই১৩ মার্চ ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল আল ল হ ব ইসল ম র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

আমি থাকাকালে তাইওয়ানে হামলার ‘পরিণতি কী হবে’ চীন জানে: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চীনের কর্মকর্তারা তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তাইওয়ানে বিরুদ্ধে বেইজিং কোনো পদক্ষেপ নেবে না, কারণ ‘তারা এর পরিণতি কী হতে পারে তা জানে’। খবর আনাদোলুর।

রবিবার সিবিএস ৬০ মিনিটসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “তিনি (চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং) এবং তার কর্মকর্তারা খোলাখুলিভাবে বলেছেন, ‘ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন আমরা কখনোই কিছু করব না’, কারণ তারা জানে এর পরিণতি কী হবে।” 

আরো পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

চীন আক্রমণ করলে তিনি মার্কিন বাহিনীকে তাইওয়ানকে রক্ষা করার নির্দেশ দেবেন কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প সরাসরি কিছু বলেননি। তবে তিনি বলেন, “এটি ঘটলে আপনি জানতে পারবেন এবং তিনি (শি জিনপিং) এর উত্তর বোঝেন।”

ট্রাম্প জানান, এশিয়া সফরকালে গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠকে তাইওয়ান প্রসঙ্গটি আসেনি। তাইওয়ান প্রসঙ্গটি বাদ পড়ার ঘটনায় অনেকেই অবাক হয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, “বৈঠকে তিনি (শি জিনপিং) এটি উত্থাপন করেননি, কারণ তিনি এটি বোঝেন ও খুব ভালোভাবে বোঝেন।”

তবে, জিনপিং কী বোঝেন তা ব্যাখ্যা করার জন্য চাপ দেওয়া হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, “এটি অন্য পক্ষ জানে, কিন্তু আমি এমন কেউ নই যে আপনাকে সবকিছু প্রকাশ্যে বলবো।”

তাইওয়ান ইস্যু দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের অন্যতম প্রধান উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়। বেইজিং তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন একটি প্রদেশ বলে মনে করে, অন্যদিকে তাইপে ১৯৪৯ সাল থেকে স্বাধীনতার উপর জোর দিয়ে আসছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ