ক্ষুধা গাজায় বোমার মতো মানুষ মারছে, ২৪ ঘণ্টায় ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা
Published: 24th, July 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় অনাহারে আরও অন্তত ১০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে ক্ষুধা ও চরম অপুষ্টিতে ভুগে অন্তত ১১১ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। অনাহারে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই শিশু। ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন গত কয়েক সপ্তাহে।
গাজায় গণহারে মানুষ অনাহারে রয়েছেন। অথচ বাইরে টন টন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী পড়ে আছে। উপত্যকাটিতে ত্রাণ বিতরণে সহায়তাকারী সংস্থাগুলোকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল।এদিকে গাজায় ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৪ জন ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, এ বছর এখন পর্যন্ত অপুষ্টিজনিত কারণে গাজায় যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২১টি শিশু রয়েছে।
আরও পড়ুনগাজায় না খেয়ে মারা গেল ৩৫ দিনের শিশু২০ জুলাই ২০২৫ডব্লিউএইচও গত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৮০ দিন গাজায় কোনো খাদ্য সরবরাহ করতে পারেনি। সংস্থাটি বলেছে, এখন যে খাদ্যসহায়তা চালু হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
১১১টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় গণহারে মানুষ অনাহারে রয়েছে। অথচ গাজার বাইরে টনকে টন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী পড়ে রয়েছে। ত্রাণ বিতরণের জন্য সহায়তাকারী সংস্থাগুলোকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
ক্ষুধা এখন বোমার মতোই প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। পরিবারগুলো আর পর্যাপ্ত খাবার চাইছে না, তারা এখন যা হোক কিছু একটা চাইছে।তারেক আবু আজ্জুম, আল–জাজিরার প্রতিনিধিগাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ থেকে আল–জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজ্জুম বলেছেন, ‘ক্ষুধা এখন বোমার মতোই প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। পরিবারগুলো আর পর্যাপ্ত খাবার চাইছে না, তারা এখন যা হোক কিছু একটা চাইছে।’
রাফার একটি সরকারি স্কুলে খাবার সংগ্রহের জন্য এসেছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন হ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের ঘোষণা ট্রাম্পের
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলি অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ