রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগে রুমি আহসানের (ছদ্মনাম) বাসা। পাশের বাসায় একটি আতাফলের গাছ ছিল। ফল খেতে রোজ সকালে নাম না-জানা দুটি অদ্ভুত সুন্দর পাখি গাছের ডালে এসে বসত। বছর দশেক আগে গাছটি কেটে ফেলা হয়। পাখি দুটি সেই থেকে আর আসে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থীর প্রায় দিন সকালেই অদ্ভুত পাখি দুটির কথা মনে পড়ে। মন খারাপ হয়।

নগরের পাখিবিশেষজ্ঞ, সাধারণ নাগরিক ও প্রকৃতিপ্রেমীদের অভিমত, গত চার দশকে ঢাকার অধিকাংশ জলাভূমি ভরাট হয়ে গেছে। নদী ও বায়ুদূষণ অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। ধ্বংস হচ্ছে পার্ক, আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে নগরের সবুজ অঞ্চল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসস্থান ও খাদ্যসংকট, অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ নানা কারণে ঢাকার পাখির প্রাকৃতিক চক্র বা বাস্তুসংস্থান আজ হুমকির মুখে।

ঢাকার পাখি হুমকিতে

’৬০-৭০ দশকের ঢাকা ছিল জলা, জঙ্গল, পার্ক, উদ্যান, তৃণভূমির সমন্বয়ে গঠিত এক অপূর্ব ক্যানভাস। নাগরিক পাখি কাক, চিল, কবুতরের পাশাপাশি নগরে বাতাই, সারস, মানিকজোড়, ইগল, বাজ, শাহিন, প্যাঁচা, বক ও বগাদের আধিক্য ছিল। স্থানীয় পাখিবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার আশপাশের বড় বিল বেলাই, শালদহ, লবণধলা, ঢোলসমুদ্র এবং আড়িয়ল বিল ছিল জলচর পাখির জন্য বিখ্যাত। জলাভূমি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পাখির বাস্তুসংস্থানে বড় ধরনের ছেদ পড়েছে। এর ফলে ঢাকা শহরের জলাভূমিকেন্দ্রিক পাখি খাদ্যসংকটে পড়েছে। 

এ প্রসঙ্গে শৌখিন পাখি পর্যবেক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক জানান, ঢাকার চারপাশে রয়েছে চারটি নদ-নদী—বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু। চার দশক আগেও নদ-নদীগুলোকে ঘিরে ছিল বিস্তীর্ণ জলাভূমি। ঢাকা নগরকেন্দ্রিক পাখিবলয় গড়ে উঠেছিল এই জলাভূমি, শহরতলি ও শহরের উদ্যান, পার্ক আর দোতলা-তিনতলা বাড়িগুলোকে কেন্দ্র করে। জলাভূমিগুলো দ্রুত ভরাট হচ্ছে, শহরতলি পরিণত হচ্ছে নগরে। পুরান ঢাকার একসময়ের সমৃদ্ধ পাখি ব্যবসা প্রমাণ করে ঢাকার জনসংস্কৃতিতে মানুষের সঙ্গে পাখির একধরনের সখ্য ছিল। কিন্তু সেটি এখন আর নেই। পাখি ঢাকার মানুষকে ভয় পাচ্ছে। ঢাকার পাখি হুমকির মুখে। 

নগর-পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০২৪ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ১৯৯৫ সালে ঢাকা শহরের মোট আয়তনের ২০ শতাংশের বেশি ছিল জলাভূমি। এখন তা মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ এসে ঠেকেছে। গত তিন দশকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট জলাভূমির প্রায় ৮৬ শতাংশ ভরাট হয়ে গেছে।

ঢাকা শহরের বৈরী পরিবেশও মানিয়ে নিতে শিখেছে পাখি। দুটি ভুবন চিল বহুতল ভবনের এসি মেশিনের পাশে নিজের বাসা তৈরী করছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জল ভ ম শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি। 

৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে। 

আরো পড়ুন:

দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে

সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা

২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা। 

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী। 

উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” 

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।” 

চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়। 

মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ