স্টোকসের ‘হ্যান্ডশেকের’ প্রস্তাবে কেন রাজি হয়নি ভারত
Published: 28th, July 2025 GMT
ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে ইংল্যান্ড বা ভারত—কেউ জেতেনি, ম্যাচ শেষ হয়েছে ড্র–তে। তবে ফলহীন এই ম্যাচেই শেষ দিকে দেখা গেছে চরম নাটকীয়তা। দিনের খেলা এক ঘণ্টা বাকি, এমন সময় ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস মাঠে থাকা ভারতের দুই ব্যাটসম্যান রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দরের দিকে ‘হ্যান্ডশেক’-এর জন্য হাত বাড়িয়ে দেন।
একটি টেস্ট ম্যাচের শেষ দিনের শেষবেলায় ফিল্ডিং দলের অধিনায়কের ‘হ্যান্ডশেক’ প্রস্তাবের অর্থ ড্র মেনে খেলা তখনই শেষ করে দেওয়া। সাধারণত ব্যাটসম্যান দল এ ধরনের প্রস্তাব মেনে নিলেও ভারতের দুই ব্যাটসম্যান ওই মুহূর্তে তাতে রাজি হননি।
কেন হননি, সেটা তাৎক্ষণিকভাবেই বোঝা গেছে। তবে এর রেশ থেকে গেছে ম্যাচের শেষেও। দিন শেষে দুই দলের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেই প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েছে। খেলা চালিয়ে গেলেও জেতা যাবে না, সেটা বোঝার পরও ভারতের ব্যাটসম্যানরা কেন ব্যক্তিগত মাইলফলকের পেছনে ছুটলেন আর ইংল্যান্ড অধিনায়কই–বা কেন ঠিক ওই মুহূর্তেই খেলা শেষ করতে চাইলেন?
স্টোকস যখন জাদেজা ও সুন্দরের দিকে ড্রর জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, ম্যাচে ভারত তখন ৭৫ রানে এগিয়ে। ম্যাচে ইংল্যান্ডের একটি ইনিংস বাকি থাকায় কেউই যে জিতছে না, সেটা বোঝা যাচ্ছিল স্পষ্টতই। তবে দুই সেশন ধরে ব্যাটিং করতে থাকা দুই ব্যাটসম্যানের চোখে তখন ব্যক্তিগত সেঞ্চুরির লক্ষ্য। জাদেজা অপরাজিত ৮৯ রানে, সুন্দর ৮০ রানে। এর মধ্যে সুন্দর আবার কখনোই টেস্টে সেঞ্চুরি করেননি।
স্টোকসের বাড়িয়ে দেওয়া হাত প্রত্যাখ্যান করে ভারতের দুই ব্যাটসম্যান খেলা চালিয়ে গেছেন। করেছেন সেঞ্চুরিও। সুন্দরের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ হওয়ার পরই দুই দল খেলায় সমাপ্তি মেনে নেয়। ম্যাচ শেষ হয় সমতায়। দিনের শেষে ভারত কোচ গৌতম গম্ভীরকে তাঁর দলের ব্যাটসম্যানদের ‘হ্যান্ডশেক’ প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেই উত্তর দিয়েছেন, ‘কেউ যদি ৯০ আর ৮৫ রানে ব্যাট করে, তাদের কি সেঞ্চুরি পাওয়া উচিত নয়? ইংল্যান্ডের কেউ যদি এ ধরনের মাইলফলকের সামনে থাকত, তারা কি খেলা ছেড়ে দিত? আমাদের ব্যাটসম্যানরা (সারা দিনে) প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলেছেন, সেঞ্চুরি তাদের প্রাপ্য। আমরা এখানে কাউকে খুশি করতে আসিনি।’
ভারত তাদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছিল ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের চেয়ে ৩১১ রান পিছিয়ে থেকে। অধিনায়ক শুবমান গিলের ১০৩ ও লোকেশ রাহুলের ৯০ রানের ইনিংসের পর জাদেজা (১০৭*) ও সুন্দরের (১০১*) ব্যাটে ভর করেই ১৪৩ ওভারে ৪২৫ রান নিয়ে ম্যাচ শেষ করে ভারত।
দিনের খেলা শেষে ভারতের ব্যাটসম্যানদের, বিশেষ করে জাদেজা-সুন্দরের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাই করেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। তবে সেঞ্চুরির কাছাকাছি দুই ব্যাটসম্যানের কাছে কেন ড্রর প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন, সে বিষয়ে নিজস্ব একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি, ‘জুটিটা অবিশ্বাস্য রকম ভালো খেলেছে। আমি মনে করি না অপরাজিত শতরান করে, দলকে একটি কঠিন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করার চেয়ে, ৮০ বা ৯০ রানে অপরাজিত থেকে ফিরে আসায় বেশি সন্তুষ্টি আছে। (তবে) এটা আপনি দলের জন্যই করেছেন। জানেন তো, ওই ১০ রান বা যা-ই হোক না কেন, এটা এই সত্যটা পরিবর্তন করবে না যে আপনি আপনার দলকে একটা খুব, খুব, খুব কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে পেরেছেন এবং শেষ ম্যাচের আগেই প্রায় আপনার দলকে সিরিজ হার থেকেও বাঁচিয়েছেন।’
ভারতের দুই ব্যাটসম্যানের চেয়ে নিজেদের বোলারদের কথাই ওই সময় বেশি ভেবেছেন বলে জানান স্টোকস, ‘আমরা আমাদের মূল বোলারদের দিয়ে খেলাটা যতদূর সম্ভব টেনে নিয়ে গিয়েছিলাম, উদ্দেশ্য ছিল জেতাটা। কিন্তু যে মুহূর্তে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে ড্র হওয়া অনিবার্য, আমি তখন আর আমাদের মূল বোলারদের কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি। বিশেষ করে আমাদের কাছে সময় কম, এই সপ্তাহজুড়ে এবং পুরো সিরিজে তাদের ওপর চাপও অনেক বেশি ছিল।’
ভারতের দুই ব্যাটসম্যান হ্যান্ডশেক প্রস্তাব না মেনে খেলা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলার পর স্টোকস হ্যারি ব্রুক ও জো রুটের মতো খণ্ডকালীন বোলারদের দিয়ে বোলিং করিয়েছেন। বিষয়টি তুলে ধরে ইংল্যান্ডের অধিনায়কের বক্তব্যটা এরকম—‘হ্যারি ব্রুক ছাড়া আর কেউ বোলিং করার মতো নির্ভার অবস্থায় ছিল না। তবে তাকেও আমি সতর্ক করে দিয়েছিলাম, “দয়া করে কোনো বোকামি করো না।” আমরা মাঠে অনেক সময় কাটিয়েছি, এ সময় পেশিতে টান পড়া বা অন্য কোনো সমস্যা হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই, তুমি ক্লান্ত—এমনকি যদি বোলিংও না করো।” তাই আমি শুধু তাকে বলেছিলাম, “শেষ পর্যন্ত ঠিকভাবে পার করো।” কিন্তু হ্যাঁ, যখন পরিস্থিতি পরিষ্কার ছিল, তখন আমি আমাদের নিয়মিত বোলিং অপশনগুলোর কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি।’
পাঁচ টেস্টের ‘অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি’তে ইংল্যান্ড এখন ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে। সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট শুরু হবে ৩১ জুলাই ওভালে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ই ব য টসম য ন র র ব য টসম য পর স থ ত স ন দর র প রস ত ব আম দ র শ ষ কর
এছাড়াও পড়ুন:
মামদানির উত্থান থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন ইউরোপের বামপন্থীরা
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির উত্থান ইউরোপের বামপন্থী রাজনীতিকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে আগামী বছর স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই মঙ্গলবার ৪ নভেম্বর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউরোপের নেতারা চোখ রাখছেন মামদানির ওপর।
মামদানির নির্বাচনী প্রচার দেখতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দলীয় কৌশলবিদেরা আগেই আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্কে এসেছেন। তাঁদের লক্ষ্য, মামদানিকে কাছ থেকে দেখে তাঁর রাজনীতির কৌশল শেখা। কারণ, মামদানি একেবারে সাধারণ অবস্থান থেকে উঠে এসে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহরের নেতৃত্বের দৌড়ে শীর্ষে পৌঁছেছেন। ইউরোপের রাজনীতিকেরা শিখতে চান, মামদানির তৃণমূলভিত্তিক প্রচারণা নিউইয়র্কে যেমন সফল হয়েছে, সেটি তাঁদের অঞ্চলেও কার্যকর হবে কি না।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বামপন্থীদের জোট দ্য লেফট গ্রুপের ফরাসি সহসভাপতি মানোঁ ওব্রি গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে মামদানির প্রচারে অংশ নেন। ওব্রি ও তাঁর দল ফ্রান্স আনবাউড মামদানিকে পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন। তাঁরা মামদানির মডেল অনুসরণ করে ফ্রান্সজুড়ে ২০২৬ সালের পৌরসভা নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে চান।
জার্মানির পুঁজিবাদবিরোধী দল দ্য লেফট নিউইয়র্কে চার কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছে। তাঁরা মামদানির প্রচারকৌশলের প্রধান মরিস ক্যাটজসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দলটির সংসদীয় কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক লিজা ফ্লাউম বলেন, মামদানির মতো কৌশল অনুসরণ করে অতীতে তাঁদের দল ভালো করেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি তাঁদের কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে দরজায় দরজায় গিয়ে প্রচারের কৌশল নিয়েছিল তাঁদের দল। ফ্লাউম আশা করেন, বার্লিনে আগামী সেপ্টেম্বরের আইনসভা নির্বাচনে দ্য লেফট মামদানির বর্তমান প্রচারণাকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করবে।
এদিকে মেয়র নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকা মামদানি বিদেশে তাঁর প্রচারকৌশল নিয়ে মাতামাতির বিষয়টিকে এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে মামদানি বলেন, আপাতত তাঁর মনোযোগ পুরোপুরি স্থানীয় রাজনীতিতে।
ফ্রান্স ও জার্মানির মতোই যুক্তরাজ্যের রাজনীতিকেরা মামদানির প্রচারকৌশল দেখে মুগ্ধ। মামদানির ছোট ছোট ভিডিওতে ব্যক্তিত্ব ও আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে জীবনযাত্রার খরচের বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আবার তাঁকে একই সঙ্গে আপনজন হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়েছে।
আরও পড়ুননিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি৭ ঘণ্টা আগেফ্রান্স আনবাউডের সংসদ সদস্য দানিয়েল ওবোনো বলেন, ‘মামদানির দলীয় নির্বাচনে জয়টাই একটা বড় রাজনৈতিক ঘটনা। শুধু তিনি কী নিয়ে লড়েছেন, তা–ই নয়, বরং কীভাবে লড়েছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর যোগাযোগের কৌশল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারসহ অনেক কিছুই আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
যুক্তরাজ্যের গ্রিন পার্টির নেতা মোথিন আলি বলেন, বামপন্থীদের এখন শেখা দরকার, কীভাবে মামদানির মতো করে সংক্ষিপ্ত অথচ প্রভাবশালী বার্তা পৌঁছে দিতে হয়। যুক্তরাজ্যের সাবেক লেবার নেতা এবং বর্তমানে ইয়োর পার্টির নেতৃত্বে থাকা জেরেমি করবিনও এক এক্স পোস্টে মামদানির প্রচারে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন৯ ঘণ্টা আগে