মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের সরকারি বরাদ্ধের ৬০ হাজার টাকা বিতরণে শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন বঞ্চিতরা।

উপকারভোগী শ্রমিকদের নামের তালিকা প্রণয়নের সময় অনেকের নামের অনুকূলে তাদের বিকাশ নাম্বার না দিয়ে অন্যদের বিকাশ নাম্বার দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি চক্র এমনটা করেছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।

চা শ্রমিক নেতারা বলছেন, মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে রেজিস্ট্রারভুক্ত প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার শ্রমিক জীবনমান উন্নয়নের প্রাপ্ত মাথাপিছু ছয় হাজার টাকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এতে ৬০ হাজার টাকার অনিয়ম হয়েছে।

মৌলভীবাজার সমাজ সেবা অধিদপ্তর বিভাগ জানিয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোন কোন বাগানের পঞ্চায়েত সভপতিগণ কিছুটা অনিয়ম করেছেন। এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সরেজমিনে ঘুরে জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন বাগানে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ মিলেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানের বড়লাইনের শ্রমিক রামাকান্ত যাদব বলেন, ‘‘তালিকায় আমার নাম ও ভোটারআইডি নাম্বার ঠিক আছে। টাকা আমি পাইলাম না। বিকাশ নাম্বার আমার নয়।”

একই বাগানের শ্রমিক পারতালি তেলেঙ্গা, আদমটিলার শ্রমিক দুলাল শীল, রবিদাস টিলার প্রিতী পাল বলেন, আমাদের নাম, আইডি ও বিকাশ নাম্বার নিয়ে তালিকায় নাম দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমরা টাকা পাইনি।

উপকারভোগী তালিকায় শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক নেতা নির্মল দাস পাইনকা, তার স্ত্রী, মেয়ে ও তার আপন ভাইয়ের স্ত্রী, ভাই, বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও তিন মেয়ের নাম রয়েছে। 

একইভাবে ওই বাগানের পঞ্চায়েত সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু, স্ত্রী রিনা কানু, ভাইয়ের বউ রিপা কানু, বোন হেমন্তি কানু, ভাই হৃদয় প্রকাশ কানু, ভাইয়ের স্ত্রী শিপা কানুর নাম ও বিকাশ নাম্বার দেওয়া হয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলার লুয়াইউনি চা বাগানের শ্রমিক হৃদয় দাস বলেন, “চা বাগানের সাধারণ শ্রমিকদের নাম, ভোটার আইডি কার্ডের কপি নিয়ে কতিপয় নেতা দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সমাজসেবা বিভাগে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর বাগানের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে অভিযোগ করে বাগানের শ্রমিক গোপাল, রিশু বাগতি, দেশান্ত কানু বলেন- চা বাগনের সাধারণ শ্রমিকদের নাম, ভোটার আইডি কপি নিয়ে কতিপয় নেতারা দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

একইভাবে রাজনগর উপজেলার ইটা, করিমপুরসহ বিভিন্ন বাগানের প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগানের বাসিন্দা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর ঘোষ বলেন, ‘‘মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে রেজিস্ট্রার-ভুক্ত প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার শ্রমিক জীবনমান উন্নয়নের প্রাপ্ত মাথাপিছু ছয় হাজার টাকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। কিছু অসাধু পঞ্চায়েত নেতা চক্রান্ত করে এই ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।”

কমলগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইউসুফ মিয়া বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর কয়েকটি বাগানের অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “এরকম কিছু ঘটতে পারে বলে আগেই আমি বারবার সতর্ক করেছি। সমাজসেবা অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছি। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

বিষয়টি নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.

হাবিবুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি চক্র শ্রমিকদের টাকা আত্নসাতের জন্য এমনটা করেছে। এই অনিয়মের সাথে চা বাগানের কতিপয় অসাধু শ্রমিক নেতা জড়িত। আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/আজিজ/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কমলগঞ জ উপজ ল র ব যবস থ ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

চা শ্রমিকদের টাকা গেল অন্যদের বিকাশে

মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের সরকারি বরাদ্ধের ৬০ হাজার টাকা বিতরণে শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন বঞ্চিতরা।

উপকারভোগী শ্রমিকদের নামের তালিকা প্রণয়নের সময় অনেকের নামের অনুকূলে তাদের বিকাশ নাম্বার না দিয়ে অন্যদের বিকাশ নাম্বার দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি চক্র এমনটা করেছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।

চা শ্রমিক নেতারা বলছেন, মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে রেজিস্ট্রারভুক্ত প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার শ্রমিক জীবনমান উন্নয়নের প্রাপ্ত মাথাপিছু ছয় হাজার টাকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এতে ৬০ হাজার টাকার অনিয়ম হয়েছে।

মৌলভীবাজার সমাজ সেবা অধিদপ্তর বিভাগ জানিয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোন কোন বাগানের পঞ্চায়েত সভপতিগণ কিছুটা অনিয়ম করেছেন। এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সরেজমিনে ঘুরে জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন বাগানে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ মিলেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানের বড়লাইনের শ্রমিক রামাকান্ত যাদব বলেন, ‘‘তালিকায় আমার নাম ও ভোটারআইডি নাম্বার ঠিক আছে। টাকা আমি পাইলাম না। বিকাশ নাম্বার আমার নয়।”

একই বাগানের শ্রমিক পারতালি তেলেঙ্গা, আদমটিলার শ্রমিক দুলাল শীল, রবিদাস টিলার প্রিতী পাল বলেন, আমাদের নাম, আইডি ও বিকাশ নাম্বার নিয়ে তালিকায় নাম দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমরা টাকা পাইনি।

উপকারভোগী তালিকায় শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক নেতা নির্মল দাস পাইনকা, তার স্ত্রী, মেয়ে ও তার আপন ভাইয়ের স্ত্রী, ভাই, বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও তিন মেয়ের নাম রয়েছে। 

একইভাবে ওই বাগানের পঞ্চায়েত সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু, স্ত্রী রিনা কানু, ভাইয়ের বউ রিপা কানু, বোন হেমন্তি কানু, ভাই হৃদয় প্রকাশ কানু, ভাইয়ের স্ত্রী শিপা কানুর নাম ও বিকাশ নাম্বার দেওয়া হয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলার লুয়াইউনি চা বাগানের শ্রমিক হৃদয় দাস বলেন, “চা বাগানের সাধারণ শ্রমিকদের নাম, ভোটার আইডি কার্ডের কপি নিয়ে কতিপয় নেতা দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সমাজসেবা বিভাগে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর বাগানের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে অভিযোগ করে বাগানের শ্রমিক গোপাল, রিশু বাগতি, দেশান্ত কানু বলেন- চা বাগনের সাধারণ শ্রমিকদের নাম, ভোটার আইডি কপি নিয়ে কতিপয় নেতারা দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

একইভাবে রাজনগর উপজেলার ইটা, করিমপুরসহ বিভিন্ন বাগানের প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগানের বাসিন্দা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর ঘোষ বলেন, ‘‘মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে রেজিস্ট্রার-ভুক্ত প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার শ্রমিক জীবনমান উন্নয়নের প্রাপ্ত মাথাপিছু ছয় হাজার টাকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। কিছু অসাধু পঞ্চায়েত নেতা চক্রান্ত করে এই ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।”

কমলগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইউসুফ মিয়া বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর কয়েকটি বাগানের অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “এরকম কিছু ঘটতে পারে বলে আগেই আমি বারবার সতর্ক করেছি। সমাজসেবা অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছি। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

বিষয়টি নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি চক্র শ্রমিকদের টাকা আত্নসাতের জন্য এমনটা করেছে। এই অনিয়মের সাথে চা বাগানের কতিপয় অসাধু শ্রমিক নেতা জড়িত। আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/আজিজ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ