নড়াইলের মিঠাপুরে জমজমাট পাটের হাট, দামে খুশি কৃষক
Published: 31st, August 2025 GMT
সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের যেন সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। এ বছর নড়াইলের মিঠাপুর হাটে সর্বোচ্চ দামে পাট বেচা-কেনা হচ্ছে। নড়াইলের সর্ববৃহৎ পাটের পাইকারি মোকাম এই মিঠাপুর হাট।
শনিবার (৩০ আগস্ট) সরেজমিনে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মান ভেদে প্রতি মণ পাট ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে দাম আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।
এবার অতিবর্ষণে নড়াইলে পাটের ফলন ব্যাহত হলে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েন। তবে পাটের আশানুরূপ দামে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেরে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় মোট ২৩ হাজার ৪৯৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যার বিপরীতে ৫৮ হাজার ৫৯০ টন পাট উৎপাদানের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে ৯৮ শতাংশ পাট কেটে ফেলা হয়েছে।
পাটের ভালো দাম পেয়ে খুশি হয়েছেন কৃষকরা।
মিঠাপুর পাইকারি পাটের হাটে তাই নতুন পাটে ভরপুর। সকাল থেকেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাট হাটে নিয়ে আসতে থাকেন। তাই বেলা বাড়তে না বাড়তেই ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যাপক সমাগমে হাট কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন বাহন বোঝাই করা কৃষকদের পাট হাটে উঠতে না উঠতেই ফড়িয়া ব্যাপারীরা ঘিরে ধরছেন। পাটের মান ভেদে দাম বলছেন। দর দামে ঠিক হলে দেখতে দেখতে মণ মণ পাট হাত বদল হয়ে হাটের বড় বড় পাট ব্যবসায়ীর গুদামে উঠে যাচ্ছে। গত বছর একই মানের পাটের দাম ছিল দুই থেকে থেকে আড়াই হাজার টাকা।
কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, বাজারে ভালো মানের পাটের বরাবরই চাহিদা থাকে। অন্যান্য বছর অনাবৃষ্টির ফলে পানি শূন্য খাল-বিল-ডোবা-নালায় পাট পঁচানো নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়। পানি সংকটে বাধ্য হয়ে নোংরা পানিতে পাট পঁচানোয় পাটের আঁশ কালো হয়ে বাজার হারায়। এবার ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে স্বচ্ছ পানিতে পাট পঁচাতে পেরে পাটের মান আশানুরূপ হয়েছে। মান ভালো হওয়ায় ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি বেড়েছে দামও।
ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে জমে উঠেছে হাট।
কৃষক বুলবুল আনিস বলেন, “এ বছর আবহাওয়া পাট চাষের অনুকূল ছিল না। মে-জুনের তীব্র খরা দাবদহের পর জুলাই মাসে আবিরাম বর্ষণে পাটের ফলন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে এবং উৎপাদন কম হয়। তবে পাটের দাম বাজারে বেশি হওয়ায় সে ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে কৃষকের। এভাবে পাটের বর্তমান বাজার দাম অব্যাহত রাখার দাবি করছেন কৃষকরা।”
নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জসীম উদ্দীন জানান, এবছর জেলায় পাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাষ উপযোগী জমিতে পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পাট চাষিদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। পাটের আবাদ বাড়াতে জেলায় মোট চার হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিকে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে এক কেজি করে বীজ, পাঁচ কেজি করে ডিএপি এবং পাঁচ কেজি করে এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। তবে কৃষকরা এবছর পাটের দাম ভালো পেয়েছে। এটা খুবই ভালো।
ঢাকা/শরিফুল/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ও আবাসিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নবজাতকসহ তাদেরকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই রাতেই শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম হাসপাতালে) নেওয়া হয়।
অভিযুক্ত চিকিৎসক পার্থ সমদ্দার কলাপাড়া পৌর শহরের জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক এবং চেয়ারম্যান।শিশুটির
স্বজনদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রসব বেদনা নিয়ে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন লালুয়ার ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার মেয়ে ও রফিকুলের স্ত্রী মিম বেগম। ওই রাতেই মিমের সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. পার্থ সমদ্দার। সিজারের কিছুক্ষণ পরই টিকার কথা বলে নবজাতকের পায়ে একটি ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরের দিন থেকেই নবজাতকের বাম পা ফুলতে শুরু করে এবং কান্না বাড়তে থাকে। বিষয়টি চিকিৎসক ও নার্সদেরকে অবহিত করলে তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। উল্টো ওই ক্লিনিকের কর্মী ও নার্সরা নবজাতকের স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণের পাশাপাশি তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেন। পরে অন্যত্র এক্সরে করে জানা যায়, সিজারের সময় নবাজতকের পা ভেঙে ফেলেছেন চিকিৎসক।
নবজাতকের মা মিম আক্তার বলেছেন, বাচ্চা অনবরত কান্না করলে প্রথমে নার্স ও পরে চিকিৎককে অবহিত করা হয়। বাচ্চার বাম ফুলে গেলে তা জানানো হয়। কিন্তু, তারা এর কোনো প্রতিকার না করে আমাদের ধমকাতে থাকেন। ক্লিনিক ছেড়ে চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন।
নবজাতকের নানা সিদ্দিক বলেন, টিকার কথা বলে আমার নাতিকে শরীর অবশ করার ইনজেকশন দিয়েছিল নার্সরা। ইনজেকশনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার পরপরই আমার নাতি অনেক কান্না করে। আমার স্ত্রী নার্সদের বললে তারা তাকে মারধরের চেষ্টা করে। আমাদের সঙ্গে ক্লিনিকের সবাই অনেক খারাপ আচরণ করেছে। এভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্মকর্তারাও যদি অসদাচরণ করে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?
সিজারের সময় নবজাকের পা ভাঙেনি, দাবি করে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ডা. পার্থ সমদ্দার বলেছেন, আমি শিশু বিশেষজ্ঞ নই। নবজাতককে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেছেন, যদি সিজারিয়ান অপারেশনের প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে এনেস্থেসিস্টও সিজার করতে পারেন। তবে, এনেস্থেসিস্ট একাই সিজারিয়ান অপারেশন করতে পারেন না।
ঢাকা/ইমরান/রফিক