নখের সামনের অংশ ভেঙে যাওয়ার কারণ কী
Published: 17th, September 2025 GMT
সমস্যা
বেশ কিছুদিন ধরেই আমার হাতের নখের অগ্রভাগ ভেঙে যাচ্ছে। এটা কি কোনো বিশেষ কারণে হচ্ছে? এই সমস্যা থেকে প্রতিকার মিলবে কীভাবে, জানালে উপকার হতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শবিভিন্ন কারণে নখের অগ্রভাগ ভেঙে যেতে পারে। সাবান বা ক্ষারযুক্ত পানিতে দীর্ঘ সময় হাত ভিজিয়ে কাজ করলে নখের ক্ষতি হতে পারে। শরীরে বায়োটিন, আয়োডিন, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, বিশেষ করে ভিটামিন ডি ও জিংকের ঘাটতি থাকলে নখ ভেঙে যায়। এ ছাড়া শরীরে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হলেও নখ ভেঙে যেতে পারে। নেইল পলিশ ওঠানোর কিছু রিমুভারও নখ পাতলা করে, পরে যা নখ ভেঙে যাওয়ার কারণ হতে পারে। আপনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন কারণটি নখ ভেঙে যাওয়ার জন্য দায়ী, খুঁজে বের করুন।
নিত্যদিনের কাজকর্মে হাত দিয়ে যদি অনেক বেশি পানি ছোঁয়াছুঁয়ি করতে হয়, তাহলে তা কমিয়ে আনুন। বিশেষ করে ক্ষারযুক্ত সাবানপানিতে হাত কম ভেজান। রান্নাবান্না, বাসনকোসন ও কাপড় ধোয়ার সময় উন্নত মানের গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। নেইল পলিস রিমুভার ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনো জটিলতা না থাকলে এতেই উপকার পাবেন। আর শরীরে যদি কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে, তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সুচিকিৎসা গ্রহণ করুন
প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানাঅধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ই-মেইল: [email protected],
খামের ওপর ও ই-মেইলের subject–এ লিখুন ‘স্বাস্থ্য জিজ্ঞাসা’
আরও পড়ুননখের এক পাশ থেকে ত্বক কিছুটা আলাদা হয়ে গেছে, কী করি১৮ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নখ ভ ঙ
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)