চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনের মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের খালাস পাওয়ার খবরে নেত্রকোনায় আনন্দমিছিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত জেলা শহর ছাড়াও লুৎফুজ্জামানের নির্বাচনী এলাকা নেত্রকোনা-৪ আসনের বিভিন্ন এলাকায় নেতা-কর্মী ও অনুসারীরা মিছিল করেন।

সন্ধ্যায় জেলা যুবদলের সাবেক ১ নম্বর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকা থেকে মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে শেষ হয়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে শহরের কুড়পাড় থেকে মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে ছোট বাজার এলাকায় বিএনপির কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়। সেখানে নেতারা বক্তব্য দেন।

সন্ধ্যায় লুৎফুজ্জামান বাবরের নিজ উপজেলা মদনে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আনন্দমিছিল বের করেন। এতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.

নূরুল আলম তালুকদার ও পৌর বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান। মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয়ে বক্তব্য দেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুল হেলিম, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামছুল আলম, উপজেলা যুবদলের সভাপতি গোলাম রাসেল, ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সামিউল হায়দার, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসান, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান প্রমুখ। মিছিল শেষে নেতা-কর্মীদের মিষ্টিমুখ করানো হয়।

মিছিল শেষে বক্তারা বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর বিএনপির সরকারের সময়ে সফল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় তিনি নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও নিজ জেলায় বহু মানুষকে চাকরিসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। তাঁকে গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্রসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে ১৭ বছর ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে। এসব মামলা থেকে তাঁকে বেকসুর খালাস দেওয়ায় তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন।

লুৎফুজ্জামান বাবর ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আজ ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস পান।

রায়ের পর লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘আদালত বলেছেন, আজ একটি অ্যাডভান্স অর্ডার সই করে দেবেন। আমি আশা করি, আজই এই আদেশ পৌঁছানো হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি জেল থেকে মুক্তি পাবেন। বাবর কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ