যুক্তরাষ্ট্রের আসল শত্রু দেশটির ভেতরেই
Published: 20th, October 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র গঠনের পর থেকে প্রায় আড়াই শ বছর ধরে এক বড় সৌভাগ্য ছিল—সেনাবাহিনী কখনো দেশের ভেতরের রাজনৈতিক বিরোধ মেটানোর হাতিয়ার হয়নি। সেনাবাহিনী কেবল বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধে দেশ রক্ষা করেছে।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা নাগরিকদের দমনে তাদের ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে সেই ইতিহাস বদলানোর চেষ্টা করছেন। তিনি সেনাবাহিনীকে এমনভাবে কাজে লাগাতে চাইছেন, যেন তা তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের ভয় দেখানোর হাতিয়ার হয়। তিনি তাঁর বিরোধীদের ‘দেশের ভেতরের শত্রু’ বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন। আর সেই ‘শত্রু’ দমন করতে তিনি সেনাবাহিনী নামাতে চাইছেন।
এ রকম ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে শেষ দেখা গিয়েছিল ১৮৬৭ সালে, যখন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন আর কংগ্রেস পুনর্গঠন ইস্যুতে সাংবিধানিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তখন সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক চাপের কাজে টেনে আনার চেষ্টা হয়েছিল। এরপর আর এমন ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুনট্রাম্প তাঁর ভূ-অর্থনৈতিক যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন ০৭ অক্টোবর ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান অবশ্যই নাগরিকদের নেতৃত্বে হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কংগ্রেসকে তার আর্টিকেল ১ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রয়োগ রোধ করতে হবে। কংগ্রেসই একমাত্র বাজেটের ক্ষমতা রাখে এবং এটিকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করাও তার দায়িত্ব।যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা আগে থেকেই এ ধরনের বিপদ নিয়ে সতর্ক ছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেই রাজা তৃতীয় জর্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তিনি সেনাবাহিনীকে বেসামরিক প্রশাসনের ওপর চড়াও করে রেখেছিলেন, যা স্বৈরাচারের লক্ষণ। আজ ট্রাম্প সেই বিপজ্জনক পথেই হাঁটছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা শুধু সেনাবাহিনীকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না, তাঁরা সেনাবাহিনীতে থাকা নিজেদের দেশের নাগরিকদের নিয়েও উদ্বিগ্ন ছিলেন। ১৮০৭ সালে কংগ্রেস একটি আইনের সিরিজ পাস করে, যা একসঙ্গে ইনসারেকশন অ্যাক্ট নামে পরিচিত।
আরও পড়ুনগাজা যুদ্ধ থামিয়েও ট্রাম্প নোবেল পেলেন না কেন১২ অক্টোবর ২০২৫এই আইনে বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট শুধু নির্দিষ্ট শর্তপূরণ হলে সেনা নামাতে পারবেন, যেমন কোনো গভর্নর আবেদন করলে বা সশস্ত্র বিদ্রোহ বা আক্রমণ হলে বা কোনো রাজ্য নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার নষ্ট করলে। ১৮৭৮ সালে পোসে কমিটেটাস অ্যাক্ট নামের আরেক আইন পাস করা হয়। সেটি স্পষ্টভাবে সেনাবাহিনীকে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবহার করতে দেয় না, যদি না সেটিকে কংগ্রেস অনুমোদন করে।
অনেকেই ইনসারেকশন অ্যাক্টকে পোসে কমিটেটাস অ্যাক্টের ব্যতিক্রম হিসেবে দেখেন। কিন্তু বাস্তবে উভয় আইনই সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।এ আইনগুলো পরিষ্কার করে দেয়, কেবল খুব সীমিত ও নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সেনা ব্যবহার করা যাবে।
তবু ট্রাম্প ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবহার করছেন। তিনি সেনা মোতায়েন করেছেন ফেডারেল অভিবাসন কর্মকর্তাদের সহায়তায় এবং এটি স্পষ্ট যে তিনি এই সেনা ব্যবহার থামানোর কোনো সদিচ্ছা দেখাচ্ছেন না। এমন কাজ তিনি করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া, অরেগন ও ইলিনয় রাজ্যের গভর্নরদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে। তা ছাড়া তিনি ইনসারেকশন অ্যাক্ট ব্যবহার করেননি এবং কোনো অঙ্গরাজ্যে নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে দাবিও করেননি। অথচ সেখানে তিনি সেনা পাঠিয়েছেন বা পাঠাতে চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুনবলসোনারো ও ট্রাম্প গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় হুমকি০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান অবশ্যই নাগরিকদের নেতৃত্বে হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কংগ্রেসকে তার আর্টিকেল ১ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রয়োগ রোধ করতে হবে। কংগ্রেসই একমাত্র বাজেটের ক্ষমতা রাখে এবং এটিকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করাও তার দায়িত্ব।
সাম্প্রতিক ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে, কংগ্রেসকে ইনসারেকশন অ্যাক্ট সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত করতে হবে, যাতে কোনো বিদ্রোহ বা সশস্ত্র হুমকির ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত একতরফা না হয় এবং তা নির্বাহী শাখার বাইরে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ দ্বারা যাচাই হতে পারে। আপাতত যদি রাজ্য গভর্নরদের সার্বভৌম ক্ষমতা লঙ্ঘিত হয়, তাহলে তাঁদের উচিত ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা।
কোরি শ্যাকি আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের বিদেশ ও প্রতিরক্ষানীতি বিভাগের পরিচালক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইনস র কশন অ য ক ট য ক তর ষ ট র র র র জন ত ক ব ব যবহ র কর ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
১ লাখ কোটি টাকার পারিবারিক ব্যবসাও সামলান এই তারকা-পত্নী
দক্ষিণী সিনেমার মেগাস্টার রাম চরণ। ২০১২ সালে ১৪ জুন উপাসনার সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন তিনি। বিয়ের ১০ বছর পর প্রথম সন্তানের বাবা-মা হন এই দম্পতি। আবারো জমজ সন্তানের বাবা-মা হতে যাচ্ছেন তারা। কয়েক দিন আগে আইআইটি হায়দরাবাদে ডিম্বাণু সংরক্ষণ নিয়ে মন্তব্য করার পর কটাক্ষের শিকার হন উপাসনা, তৈরি হয় বিতর্ক। সময়ের সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেন উপাসনা। তারপর থেকে আলোচনায় রয়েছেন এই তারকা-পত্নী।
রাম চরণের স্ত্রী উপাসনার আরেক পরিচয় তেলুগু চলচ্চিত্রের মেগাস্টার চিরঞ্জীবীর পুত্রবধূ। রাম চরণ রুপালি পর্দার ‘রাজা’ হলে ব্যবসার ‘রানি’ উপাসনা। তারকা-পত্নী হওয়ার পাশাপাশি তার নিজস্ব একটি পরিচয়ও রয়েছে। বেসরকারি অ্যাপোলো হাসপাতালের করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির ভাইস চেয়ারপার্সন উপাসনা। পাশাপাশি সমাজসেবার সঙ্গেও যুক্ত। নারী ও শিশুদের জন্য নানা উন্নয়নমূলক কাজ করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
বিজয়ের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে যা বললেন রাশমিকা
ধানুশ-কৃতির সিনেমার আয় ১৩৬ কোটি টাকা
পারিবারিকভাবে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে উপাসনার যোগসূত্র। ভারতের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল ও চিকিৎসা পরিষেবা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান প্রতাপচন্দ্র রেড্ডির নাতনি। ৭৭ হাজার কোটি রুপির (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকার বেশি) ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী উপাসনা। তার মা শোবনা কামিনেনি হলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী ভাইস চেয়ারপার্সন। প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তা হলেন উপাসনা।
হায়দরাবাদে স্কুল জীবনের পাঠ শেষ করেন উপাসনা। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান। লন্ডনের রিজেন্টস ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিপণন ও ব্যবস্থাপনায় বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করে তিনি। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে পুরস্কারও পেয়েছিলেন এই মেধাবী ছাত্রী। তারপর দেশে ফিরে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন উপাসনা। পারিবারিক ব্যবসার বৃত্ত ছেড়ে উপাসনার প্রভাব গণমাধ্যমে বিস্তৃত। একটি ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক উপাসনা। নারীদের স্বাস্থ্য-সুস্থতা নিয়ে মাঝেমধ্যেই কলম ধরেন।
উপাসনার কর্মযজ্ঞ এখানেই শেষ নয়। একটি বীমা সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তিনি। উপাসনার বাবা অনিল কামিনেনির সংস্থারও দায়িত্ব তার কাঁধে রয়েছে। এমনকি, তার শাশুড়ি, রাম চরণের মা সুরেখা কোনিদেলার খাবারের ব্যবসার পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন উপাসনা। অর্থাৎ হেঁশেল থেকে স্বাস্থ্য, সমস্ত ক্ষেত্রেই অবাধ বিচরণ উপাসনার।
একটি বিশেষ উদ্যোগের সঙ্গে উপাসনার নাম জড়িয়ে আছে। এই পরিষেবার মাধ্যমে ভারতজুড়ে ১৫০টিরও বেশি বৃদ্ধাশ্রম দত্তক নিয়েছেন ব্যবসায়ী পরিবারের এই কন্যা। শুধু দত্তক নেওয়াই নয়, এসব বৃদ্ধাশ্রমের সদস্যরা যাতে সঠিক আদর-যত্ন পান সেদিকেও খেয়াল রাখেন উপাসনা। জীবন সায়াহ্নের এই মানুষগুলো যাতে শারীরিক-মানসিকভাবে ভালো থাকেন সেটাই টার্গেট বলে জানিয়েছেন উপাসনা।
উপাসনার নানু ডা. প্রতাপচন্দ্র রেড্ডি একজন ধনকুবের। ১৯৮৩ সালে অ্যাপোলো হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয় ৫০ বছর বয়েসি প্রতাপচন্দ্রের হাত ধরে। ভারতের প্রথম ৫০ জন শিল্পপতির তালিকায় নাম লেখান প্রতাপচন্দ্র। হাসপাতাল ছাড়াও ২১টি ভিন্ন সংস্থা রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের ছাতার নিচে। পাঁচ হাজার ওষুধের দোকান থেকে শুরু করে ২৯১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র, ডিজিটাল হেলথ পোর্টালও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের।
বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আগে প্রতাপচন্দ্র পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। নিজের কন্যাদেরও ব্যবসার কাজ বুঝিয়েছেন প্রতাপচন্দ্র। তা চার কন্যাই প্রতিষ্ঠানটির উঁচু পদে রয়েছেন। প্রতাপচন্দ্রের এক কন্যা শোবনার মেয়ে উপাসনা এই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
কলেজ জীবন থেকেই একে অপরকে চিনতেন রাম চরণ ও উপাসনা। বন্ধু মহলে তারা ছিলেন আলোচিত। অম্ল-মধুর সম্পর্কে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। এরপর এক সময় রাম চরণ দেশের বাইরে যান। তখন পরস্পরের সঙ্গ মিস করতেন তারা। সবাই ধরেই নিয়েছিল প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন দু’জন। কিন্তু তখনও পরস্পরকে বন্ধুই ভাবতেন তারা। রাম চরণের ‘মাগাধীরা’ সিনেমাটি মুক্তির পরই মূলত উপাসনার সঙ্গে এই অভিনেতার প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। দু’জনের পরিবারের মধ্যে বেশ মধুর সম্পর্ক ছিল, এজন্য বিয়ে নিয়েও কোনো ঝামেলা হয়নি।
২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর হায়দরাবাদের টেম্পল ট্রি ফার্মসে রাম চরণ ও উপাসনার বাগদান হয়। জাঁকজমকপূর্ণ এই আয়োজনে ছিলেন দুই পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনরা। তাদের বাগদান নিয়ে ভক্তদের মধ্যে বেশ উন্মাদনা ছিল। তাকে নিয়ে মিডিয়ার মাতামাতিতে বেশ বিব্রত ছিলেন উপাসনা। তবে সবকিছু বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন রাম চরণ। ২০১২ সালের ১৪ জুন পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের উপস্থিতিতে এই জুটির বিয়ে ও বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের পর যৌথ সিদ্ধান্তে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করেন রাম চরণ-উপাসনা। এই ডিম্বাণু থেকেই তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। এ নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন উপাসনা।
উপাসনার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১৩০ কোটি রুপি। রাম চরণের মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৩৭০ কোটি রুপি। রাম চরণ-উপাসনার সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়েছে। এই দম্পতির হায়দরাবাদের জুবিলি হিলসে একটি বাংলো রয়েছে, যার দাম ৩০ কোটি রুপি। বিলাসবহুল বাংলোতে রয়েছে—সুইমিং পুল, একটি টেনিস কোর্ট, একটি বিশাল মন্দির, একটি জিমনেশিয়াম। তাছাড়া মুম্বাইয়ের একটি পেন্টহাউজের মালিকানাও রয়েছে রাম চরণ-উপাসনার।
ঢাকা/শান্ত