ফরিদপুরের শ্রমিক লীগ নেতা নাছিরকে গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম
Published: 19th, January 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যা ও হামলার একাধিক মামলার আসামি ফরিদপুর জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম নাছিরসহ জড়িতদের পাঁচ দিনের মধ্যে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আলটিমেটাম দেন ফরিদপুরের অন্যতম ছাত্র সমন্বয়ক সোহেল রানা।
তিনি বলেন, ‘এই নাছির ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরাসরি তাঁর বাহিনী নিয়ে হামলায় অংশ নেন। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও হামলাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে নাছিরসহ হামলা ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না করলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশনে বসব আমরা।’
তবে সংবাদ সম্মেলনে জেলা শ্রমিক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি জুবায়ের জাকিরকে দেখা গেছে। তাঁকে সেখানে দেখে হতবাক ফরিদপুরের সাধারণ মানুষ ও ছাত্রসমাজ। অথচ তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় বক্তব্য দিতে দেখা যায় গোলাম নাছির ও জুবায়ের জাকিরকে। তারা দু’জনই শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা। ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। এ বিষয়গুলো মেনে নিতে পারেননি ছাত্র সমন্বয়করা।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলায় জড়িতদের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সমন্বয়ক আবরাব নাদিম ইতু, নিরব ইমতিয়াজ শান্ত, মেহেদী হাসান হৃদয়, সাজিদ খান, আবু নাঈম, জেবা অতশি, সিফাত, ওয়ালিদ আশরাফ, তাহসিন জেবা, ফারহান নাইব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র সমন
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ছোড়া ১০টি গুলি লাগে শহীদুলের শরীরে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে শহীদুল ইসলাম নামের এক দোকান কর্মচারীকে গুলি করে খুনের মামলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ ২৩২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ছোড়া গুলিতে শহীদুল নিহত হয়েছেন। তাঁর বুক, পেট ও পিঠে ১০টি গুলি লাগে।
গত ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম আদালতে অভিযোগপত্রটি জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক মো. ফয়সাল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রামে হওয়া ১৫১টি মামলার মধ্যে এটিই প্রথম অভিযোগপত্র। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ২৫ আগস্ট অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ছোড়া ১০টি গুলি লেগেছে শহীদুলের শরীরে। শটগান ও বন্দুক থেকে এসব গুলি ছোড়া হয়। তবে কার কার ছোড়া গুলিতে শহীদুলের মৃত্যু হয়েছে, সেটি অভিযোগপত্রে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি।২০২৪ সালের ৩ আগস্ট নগরের জুবিলি রোড এলাকায় জুতার দোকানের কাজ শেষে বাজারসদাই নিয়ে চান্দগাঁওয়ের বাসায় ফিরছিলেন শহীদুল ইসলাম। বাসার পাশে বহদ্দারবাড়ি এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা হয়। সেদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে আন্দোলনকারীদের ওপর ছোড়া গুলি এসে লাগে শহীদুল ইসলামের বুক, পেট ও পিটে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত শহীদুলের ভাই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গত বছরের ১৯ আগস্ট চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন। এতে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ছোড়া ১০টি গুলি লেগেছে শহীদুলের শরীরে। শটগান ও বন্দুক থেকে এসব গুলি ছোড়া হয়। তবে কার কার ছোড়া গুলিতে শহীদুলের মৃত্যু হয়েছে, সেটি অভিযোগপত্রে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তির শরীরে ১০টি গুলি লেগেছে। যাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন আর যাঁদের নির্দেশে গুলি করা হয়েছে, তাঁদের অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে।
পিস্তল হাতে চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন ফরহাদ, যুবলীগ কর্মী মো. জালাল ওরফে ড্রিল জালাল ও মো. মিজানকেও দেখা গেছে। শটগান হাতে ছিলেন যুবলীগ কর্মী মো. তৌহিদ। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর মো. এসরালের অনুসারী। এসরাল আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অস্ত্র হাতে থাকা ফিরোজ, জালাল, তৌহিদ ও ঋভু মজুমদার এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন।অভিযোগপত্রে রয়েছে, ঘটনার দিন শটগান থেকে গুলি করা যুবলীগ কর্মী তৌহিদুল ইসলামকে গত বছরের ২২ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আরেক অস্ত্রধারী মো. ফিরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তৌহিদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে খুনের ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৪২ জনের নাম বলেন। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া ১৫টি ভিডিও ও ৪১টি স্থিরচিত্রে বিশ্লেষণ করেও ঘটনায় জড়িত আসামিদের শনাক্ত করে পুলিশ। এসব ভিডিও ও ছবি যে সম্পাদিত নয়, তা ঢাকায় সিআইডির ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
হাছান মাহমুদ, মহিবুল হাসান, সাইফুজ্জামান ছাড়াও অভিযোগপত্রের ২২৩ আসামির মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও রেজাউল করিম চৌধুরী; সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, এস এম আল মামুন, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ সালাম, দিদারুল আলম, নোমান আল মাহমুদ; চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম; চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক, শৈবাল দাশ, জহুরুল আলম প্রমুখ। তাঁদের মধ্যে আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এবং এম এ লতিফ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
অস্ত্র হাতে যাঁরা ছিলেনঅভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন পিস্তল হাতে ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী। তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কাটা বন্দুক হাতে ছিলেন যুবলীগের নেতা পরিচয় দেওয়া তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মো. ফিরোজ। তিনি নিজেকে আ জ ম নাছিরের অনুসারী পরিচয় দেন। তবে তিনি কোনো পদে নেই। শটগান হাতে ছিলেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগঠক মো. দেলোয়ার। তিনি হেলাল আকবরের অনুসারী। পিস্তল হাতে ছিলেন যুবলীগের কর্মী এন এইচ মিঠু ও ঋভু মজুমদার। তাঁরা দুজন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নুরুল আজিম শিক্ষামন্ত্রীর অনুসারী।
পিস্তল হাতে চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন ফরহাদ, যুবলীগের কর্মী মো. জালাল ওরফে ড্রিল জালাল ও মো. মিজানকেও দেখা গেছে। শটগান হাতে ছিলেন যুবলীগের কর্মী মো. তৌহিদ। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর মো. এসরালের অনুসারী। এসরাল আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অস্ত্র হাতে থাকা ফিরোজ, জালাল, তৌহিদ ও ঋভু মজুমদার এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
মৃত্যুর আগে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চান নিহত শহীদুল ইসলামের মা শামসুন নাহার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা গুলি করে মেরেছে, তাদের ফাঁসি না দেখে যেন আমার মৃত্যু না হয়।’
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রামের ১৫১টি মামলার মধ্যে ৬৯টি হয়েছে নগর ও জেলার ৯টি থানায়। বাকিগুলো আদালতে হওয়া নালিশি মামলা (সিআর)। এসব মামলায় নাম উল্লেখ থাকা আসামির সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৫০। অজ্ঞাতপরিচয় আসামির সংখ্যা অন্তত ৩০ হাজার। আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর নাম যেমন রয়েছে, তেমনি আবার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন এমন ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষও রয়েছেন। থানায় হওয়া ৬৯ মামলায় ১৫ জুলাই পর্যন্ত আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন ১ হাজার ২০১ জন। আসামির বিপরীতে গ্রেপ্তার ৫ শতাংশ। ৬৯টি মামলার মধ্যে ১৫টিই হত্যা-মামলা।