বিদেশি বিনিয়োগ টানতে বিডার ‘হিটম্যাপ’
Published: 19th, January 2025 GMT
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা, সমন্বয়হীনতাসহ নানা জটিলতা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব সমস্যা দূর করতে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলো পুরোপুরি দূর করা সম্ভব হয়নি। এসব কারণে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ কম। কয়েক বছর ধরে বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় এক জায়গায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে কৃষি, ওষুধ, নবায়নযোগ্য শক্তি খাতসহ ১৯টি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণে ‘হিটম্যাপ’ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। রোববার সংস্থাটি এটি প্রকাশ করেছে।
বিডার কর্মকর্তারা জানান, হিটম্যাপ হলো বাংলাদেশে কীভাবে আরও বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আনা যায়, তার একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। অর্থাৎ এটি ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ প্রচেষ্টার একটি রূপরেখা। হিটম্যাপ বিনিয়োগের প্রচারে কৌশলগত দিকনির্দেশনা দেবে, যা ১৯টি সম্ভাবনাময় খাতে এফডিআই আকর্ষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিডার তথ্যমতে, সর্বশেষ গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১৮৬টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। তারা মোট ১৯ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এর পরিমাণ আগের তিন মাসের (এপ্রিল-জুন) তুলনায় প্রায় চার ভাগের এক ভাগ। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা, ডলার সংকট, বছর বছর বিনিয়োগনীতির পরিবর্তন, সংস্থাগুলোর সক্ষমতার অভাব ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, কর কাঠামোতে বারবার পরিবর্তন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকট এবং ঋণের উচ্চ সুদ হারের কারণে সার্বিকভাবে জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ কমছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, এফডিআই হিটম্যাপ শুধু একটি পরিকল্পনা নয়, এটি ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ প্রচেষ্টার রূপরেখাও। আগামীতে যে কোনো রোডশো, দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি বা নীতিগত সহায়তা এই তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণ অনুযায়ী পরিচালনা করা হবে। বিডার ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন, বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও এফডিআই বর্তমানে জিডিপির মাত্র শূন্য পাঁচ শতাংশ। যেখানে বৈশ্বিক গড় ৩ থেকে ৪ শতাংশ। হিটম্যাপ বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়াতে খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার প্রদান, বিনিয়োগকারী বাজার শনাক্তকরণ এবং জাতীয় লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কৌশল তৈরিতে সাহায্য করবে।
১৯টি অগ্রাধিকার খাত
এফডিআই হিটম্যাপ ১৯টি খাতকে তিনটি প্রধান মানদণ্ডের ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। যেমন– বাজার প্রস্তুতি ও সম্ভাবনা, ইনপুট ফ্যাক্টরের প্রাপ্যতা ও জাতীয় লক্ষ্যের (এসডিজি ও ইএসজি) সঙ্গে কৌশলগত সংযোগ। ক্যাটেগরি ‘এ’-কে বলা হয়েছে তাৎক্ষণিক লক্ষ্য। এ ক্যাটেগরি মূলত উচ্চ বাজার প্রস্তুতি, দ্রুত প্রবৃদ্ধি এবং অনন্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাসম্পন্ন খাত। এতে রয়েছে মৌলিক পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস (এপিআই ছাড়া), কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, আইটি-সক্ষম সেবা, উন্নত টেক্সটাইল এবং নবায়নযোগ্য শক্তি। ক্যাটেগরি ‘বি’-কে বলা হচ্ছে– দ্রুত প্রবেশযোগ্য খাত বা মধ্যম মানের বাজার প্রস্তুতি; কিন্তু শক্তিশালী প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাসম্পন্ন খাত। এ ক্যাটেগরিতে রয়েছে অটোমোটিভ পার্টস, ফুটওয়্যার, হালকা প্রকৌশল ও চামড়া। এ ছাড়া ক্যাটেগরি ‘সি’-কে বলা হচ্ছে, কাস্টমাইজড চুক্তি। অর্থাৎ উন্নয়ন সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ইনপুট চ্যালেঞ্জ সমাধানে বিশেষ চুক্তি প্রয়োজন। এ ক্যাটেগরিতে আছে লজিস্টিকস ও ইলেকট্রনিকস ও অ্যাসেম্বলি। ক্যাটেগরি ‘ডি’-কে বলা হচ্ছে নীতি ও সক্ষমতা উন্নয়ন। এটি দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত সহায়তা এবং ইকোসিস্টেম উন্নয়নের প্রয়োজনীয় খাত। এতে রয়েছে ইভি ব্যাটারি, মেডিকেল ডিভাইস, টেকনিক্যাল টেক্সটাইল, খেলনা, অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস, সেমিকন্ডাক্টর ও প্লাস্টিক খাত।
বিডা জানিয়েছে, হিটম্যাপের কার্যকারিতা সফল করতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ফোরাম, রোডশো এবং নীতি উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি একটি পাবলিক-প্রাইভেট উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন করে নীতিগত ঘাটতি পূরণ এবং ইকোসিস্টেম শক্তিশালীকরণের কাজ করবে। হিটম্যাপটি প্রতি বছর পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করা হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান যে তিন কারণে পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে না
বিশ্বরাজনীতিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি একটি বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ইস্যু। পশ্চিমা শক্তিগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, বহু বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে, ইরান নাকি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বা যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, যা এ দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে। অন্যদিকে ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
প্রশ্ন হলো, যদি ইরান সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাইত, তাহলে গত দুই দশকে তা তৈরি করেনি কেন? আর যদি তা না-ই চায়, তাহলে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাচ্ছে কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে ইরানের ধর্মীয় অবস্থান, কৌশলগত চিন্তা, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির দ্বিচারিতা একত্রে বিশ্লেষণ করতে হবে।
আরও পড়ুনইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুত হবে০৬ জুলাই ২০২৫ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা ও নৈতিক অবস্থান২০০৩ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া জারি করেন। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, মজুত কিংবা ব্যবহার ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।’ এ সিদ্ধান্ত শুধুই ধর্মীয় নয়, বরং একটি নৈতিক অবস্থানও, যেখানে নিরীহ মানুষ হত্যাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পারমাণবিক বোমা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে না, বরং শহর, জনপদ ও লাখ লাখ নিরীহ মানুষের প্রাণ হরণ করে। ইসলামের যুদ্ধনীতিতে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
ইরান মনে করে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার শুধু মানবতার বিরুদ্ধে নয়, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিরুদ্ধে চরম অন্যায়। হিরোশিমা-নাগাসাকির দৃষ্টান্ত এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ দেয়।
কৌশলগত ও সামরিক বাস্তবতাঅনেকের ধারণা, পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেই একটি দেশ নিরাপদ থাকে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলেও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য হয়। উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে। এমনকি রাশিয়া, যাদের বিশ্বের সর্বোচ্চ পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর সঙ্গে কৌশলগতভাবে চাপে পড়েছে। ইসরায়েলও অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’-এ বড় ধরনের সামরিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।
এ বাস্তবতা ইরানকে বুঝিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র নয়, কার্যকর প্রতিরোধক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তাই তারা শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন এবং কৌশলগত অস্ত্র নির্মাণে জোর দিয়েছে।
সামরিক মহড়া চলাকালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের অজ্ঞাত স্থান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ছবিটি প্রকাশ করে ইরান