বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা একটি স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করতে পুলিশের বন্দুকের মুখে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট বিপ্লবের ছয় মাস পর অনেকেই বলছেন, চাকরি খুঁজে পাওয়া যেন প্রতিবাদের ব্যারিকেড সামলানোর চেয়েও কঠিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ রিজওয়ান চৌধুরীর মতো যুবকদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন এখন অনেকটা ম্লান। তিনি বলেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড.

মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে তাদের কাছ থেকে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।

মূলত বেকারত্বই ছিল গত বছরের ৫ আগস্টের প্রতিবাদের প্রধান কারণ। তবে বিপ্লবের পর এই সমস্যার সমাধান হয়নি বরং আরও প্রকট হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৬০ হাজারে পৌঁছেছে যা তার আগের বছরে ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। বলা চলে ,বেকারত্বের সংখ্যা ছয় শতাংশ বেড়েছে। 

গত বছরের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে সতর্ক করে বলেছিল, দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম 'গুরুতরভাবে ধীরগতিতে' চলছে, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি দ্বিগুণের ঘরে পৌঁছেছে। তারপর ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে তৈরি হলো সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাওয়া। পাশাপাশি ব্যয়ের চাপও দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় অনেকের কাছেই শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির উচ্ছ্বাস এখন ম্লান হতে চলেছে। 

পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগ থেকে স্নাতক করা রিজওয়ান বলেন, 'যদিও ড. ইউনূস তাঁর মন্ত্রিপরিষদে ছাত্রনেতাদের রেখেছেন, তবে আমি মনে করি আমাদের দাবিগুলো উপেক্ষা করা হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধিরা প্রশাসনে থাকলেও, আমাদের কণ্ঠস্বর তারা শুনতে পাচ্ছেন কিনা সে ব্যাপারে আমি অনিশ্চিত।'

৩১ বছর বয়সী শুক্কুর আলী সাহিত্য থেকে স্নাতক পাস করে তার বৃদ্ধ ও অসুস্থ বাবা-মাকে সাহায্য করার জন্য খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। তিনি এএফপিকে বলেন, 'আমি কর্পোরেট চাকরি, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আবেদন করেছিলাম কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। এখন যে কাজ পাচ্ছি সেই কাজই করছি শুধুমাত্র আমার ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য'।

তিনি আরও বলেন, সংবাদপত্রে এখন তেমন কোনো চাকরির সংবাদ পাওয়া যায় না। এখন যেকোনো কাজই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি শুধুমাত্র একটি চাকরি চাই। 

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিশেষ করে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর কাছে এ দেশের পোশাক শিল্পের চাহিদা অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পোশাক কারখানায় কাজের সুযোগ খুবই কম। এদিকে বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে শিক্ষিতদের হার ৮৭ শতাংশ।

তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছে, তারা এই সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই কর সংগ্রহ করে সরকার জনখাতে বিনিয়োগ করবে। এতে বিপুল সংখ্যক চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তিনি আরও বলেন, আরও রাজস্ব সংগ্রহ নিশ্চিত করা এই সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার, কারণ আগের সরকার অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থায় রেখে গিয়েছিল। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন 'অত্যন্ত কঠিন' যা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এই বছরের শেষে বা ২০২৬ সালের শুরুর দিকে। এরই মধ্যে সরকার কিছু সংস্কার করতে চাইছে যার মধ্যে রয়েছে সংবিধান ও সরকারি প্রশাসনের সংস্কার, যাতে স্বৈরতন্ত্র পুনরায় ফিরে আসার আশঙ্কা না থাকে।

অনলাইন চাকরির প্ল্যাটফর্ম বিডিজবস- এর প্রধান ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘সরকারি খাত প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ গ্রাজুয়েট নিয়োগ করতে পারে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক হন। আর বেসরকারি খাত চাকরি দিতে পারে ৮৫ শতাংশ গ্রাজুয়েটকে। তবে সেখানেও আশার আলো কম। ৫ আগস্ট থেকে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে নিয়োগ ধীরগতিতে চলছে।'

ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, তরুণ চাকরিপ্রত্যাশীদের সহায়তায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে। এতে তরুণদের ব্যবসা শুরুর জন্য ঋণ প্রকল্প থাকতে হবে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ ছিল মাত্র ১৭৭ মিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশেরও কম। আগের শেখ হাসিনার শাসনামলে বিনিয়োগ ছিল ৬১৪ মিলিয়ন ডলার।

৩১ বছর বয়সী সুবীর রায় অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করে একটি সরকারি চাকরির পরীক্ষায় টিকেছিলেন কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। 

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য একটি জমি বিক্রি করেছিলেন আর এখন আমি ফাঁকা হাতে বাড়ি ফিরছি। এরপর আমি বাবার সঙ্গে ধানক্ষেতে কাজ করব।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য চ কর র বছর র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু, পুলিশ স্বাভাবিক মৃত্যু বললেও ‘অস্বাভাবিক’ বলে প্রচার

ময়মনসিংহে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা মো. রুহুল আমিন আকাশের (৩০) মৃত্যু হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বল জানিয়েছে পুলিশ ও তার পরিবার। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুকে ‘অস্বাভাবিক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে প্রচার করা হচ্ছে। আজ সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। 

জানা যায়, রুহুল আমিন আকাশ রোববার রাতে ময়মনসিংহ নগরীতে তার বোন নাফিয়া আক্তারের বাসায় বেড়াতে আসেন। সোমবার সকাল ১০টার দিকে দিঘারকান্দা শান্তিনগর আলহাজ্ব সিরাজ আলী জামে মসজিদের সামনে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান। এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এর আগে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা ঈসমাইল হোসেন এবং গৃহকর্মী মোছা. বকুল আক্তার দ্রুত এগিয়ে এসে ছাত্রলীগ নেতা আকাশের মাথায় পানি ঢেলে এবং পরে উদ্ধার করে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তবে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের ভগ্নিপতি বোম্বের সুইটস কোম্পানির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. আনিছুর রহমান সমকালকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মাত্র দেড় মাস আগে রুহুল আমিন আকাশ বিয়ে করেছিলেন। তার স্ত্রী গাজীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। 

আনিছুর রহমান বলেন, ‘গতরাতে সে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমার বাসায় বেড়াতে আসে। সন্ধ্যায় তার শারীরিক অবস্থার একটু খারাপ হলে সে বমি করে। এরপর রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে হাসপাতালে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়। পথে সে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। পরে বিষয়টি হাসপাতাল থেকে আমাদের জানানো হয়।’

এদিকে, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন জানান, ‘এটি স্বাভাবিক মৃত্যু। মৃতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তবে একটি মহল এই মৃত্যুর ঘটনাটি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।’

তবে পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বললেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা নিজ নিজ ফেসবুক পোস্টে শোক প্রকাশের পাশাপাশি এই মৃত্যুকে ‘অস্বাভাবিক এবং হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করছেন।

সোমবার বিকেল পৌনে ৪টায় ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্ট লীগ’ নামের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্টে দাবি করা হয়, ‘ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন আকাশ এর মৃতদেহ পাওয়া গেছে রাস্তার পাশে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতা রুহুল আমিন আকাশ এর অপমৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানায়।’ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার বিদেহী আত্মার শান্তি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত মো. রুহুল আমিন আকাশ নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেলায়াতলী গ্রামের বাসিন্দা মো. নওয়াব আলীর ছেলে। তিনি গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ