জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়ই অংশ নিয়ে থাকেন বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে। সে হিসেবে গত বছরের জুলাইয়ে জাতীয় দাবায় শিরোপা জেতা আন্তর্জাতিক মাস্টার মনন রেজা নীড়েরই খেলার কথা ওয়ার্ল্ড দাবায়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তুষ্ট বেশ কয়েকজন দাবাড়ু।
তাদের কথা হলো, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় খেলা পাঁচ দাবাড়ু ইতোমধ্যে দাবা অলিম্পিয়াডে খেলেছিলেন। সেই হিসেবে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বশেষ আসরের ফলাফল দিয়ে ভবিষ্যতে টুর্নামেন্টের জন্য দাবাড়ু চূড়ান্ত করার বিপক্ষে অনেকে। নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বর ভারতে অনুষ্ঠেয় ফিদে দাবা বিশ্বকাপে খেলার কথা মনন রেজা নীড়ের। অন্য দাবাড়ুরা চাচ্ছেন, বিশ্বকাপে খেলার জন্য তাদের যেন সুযোগ দেওয়া হয়। সে জন্য দাবা বিশ্বকাপের আগে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ করার দাবি বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের কাছে তুলে ধরেছেন দাবাড়ুরা। ফেডারেশন থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের চেষ্টা করছেন তারা।
নানা কারণে ২০২৩ সালে জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি। পরের বছর হয়েছিল জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ। সেই হিসেবে এই বছরও হওয়ার কথা ঘরোয়ার দাবার সর্বোচ্চ আসরটি। কিন্তু শুরুতে ফেডারেশন একটু ধীরে চলো নীতিতে হাঁটতে থাকে। কারণ, আগের সূচি অনুযায়ী জুলাইয়ে হওয়ার কথা ছিল বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ। এই কয়েক মাসের মধ্যে জাতীয় দাবা আয়োজন করাও কঠিন হতো বলে মনে করেন দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ড.
দাবা বিশ্বকাপ টিকিটের লড়াই এবার হবে জমজমাট। মনন রেজা নীড়, আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমান, তাহসিন তাজওয়ারসহ
আরও অনেকের সামনে সুযোগ ফিদে দাবা বিশ্বকাপ খেলার।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।