পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিকমানের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবার ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করা হয়েছে। এ গ্রুপটিতে ১০ জন সদস্য রয়েছেন। পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ক্লিন ইমেজের অধিকারী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠিত হয়েছে।

ইতিপূর্বে গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ এর পরামর্শে এবং তাদের কাজের সহযোগিতায় এই ফোকাস গ্রুপ গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি বিএসইসির এক আদেশে এ ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

১৬ লাখ শেয়ার কিনবেন এসিআইয়ের চেয়ারম্যান

পুঁজিবাজার: সূচকের পতন দিয়ে সপ্তাহ শুরু

চলতি মাসে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানের পুঁজিবাজারের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ কর্তৃক ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্যরা হলেন-ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, সিএফএ, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো.

মনিরুজ্জামান, সিএফএ, ইডিজিই এএমসি প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আলী ইমাম, মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি মো. আশিকুর রহমান, এ কে খান সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়া, ক্যাল বাংলাদেশের এমডি ও কান্ট্রি হেড অ্যান্ড্রু দেশন পুষ্পরাজাহ, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) জিএম ও সিটিও (ভারপ্রাপ্ত) এম ইমাম হোসেন, আহমেদ শেখ রায় অ্যান্ড কোং এর পার্টনার শেখ তারেক জহির, আহমেদ হক সিদ্দিকী অ্যান্ড কোং এর ম্যানেজিং পার্টনার মো. ওয়াদুদ আহমেদ এবং আইসিএবির সদস্য দীপক কুমার রায়।

বিএসইসির সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, আলোচনা ও সার্বিক বিবেচনাপূর্বক কমিশন কর্তৃক গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ এর পরামর্শে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ এর আদেশ জারির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ এর সদস্যদের সম্মানী হিসাবে সভায় উপস্থিতির ভিত্তিতে প্রত্যেক সদস্যকে সভাপ্রতি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।

ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়, গঠিত টাস্কফোর্সের অধীনে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক ফোকাস গ্রুপ থাকবে। প্রতিটি ফোকাস গ্রুপ নির্দিষ্ট বিষয়ে কাজ করবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে টাস্কফোর্সকে সুপারিশ করবে। উল্লেখ্য, কমিশনকে অবহিত করে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ উপযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা একটি ফোকাস গ্রুপ তৈরি করেছি। বিশেষ করে মিউচুয়াল ফান্ড বা মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউজ বা রিপোটিং ও গভর্নেন্স নিয়ে কাজ করা ক্লিন ইমেজের ব্যক্তির নিয়ে আমরা এ গ্রুপটি গঠন করেছি। আমরা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মতামত নিয়েছি। যাতে করে কেউ বলতে না পারে যে, আমরা প্রাক্টিক্যালি লোকদের নেইনি। যারা প্রকৃতই প্রাকটিশনার, ক্লিন ইমেজ রয়েছে-এ ধরনের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আমরা ফোকাস গ্রুপ গঠন করেছি। এছাড়া আমরা কনসালটেশর গ্রুপও তৈরি করেছি। অর্থাৎ আমরা পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাকটিক্যাল ও থিউরিটিক্যাল ব্যক্তিদের নিয়ে গ্রুপ করেছি।”

পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের আরেক সদস্য হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমাদের কাজের সহযোগিতার জন্যই বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ফোকাস গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। তারা আমাদের গ্রুপভিত্তিক বিভিন্ন কাজে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবেন। বিশেষ করে পুঁজিবাজার সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন-কানুনের ব্যবহার, আন্তর্জাতিক প্রাকটিস, রিসার্চ ও অ্যানালাইসিস করার কাজে সহায়তা করবেন। তবে তারা আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন। আমরা পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স ১৭টি বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে প্রত্যেক বিষয়বস্তুকে নিয়ে গ্রুপ করে কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক বিষয়বস্তু কেন্দ্রিক ফোকাস গ্রুপ থেকে একজনকে টিম লিডার করে বাকি দুই-একজনকে নিয়ে গ্রুপ করা হচ্ছে। আমরা যেহেতু বিএসইসির কোনো কর্মকর্তার সহায়তা নিচ্ছি না, সেহেতু ফোকাস গ্রুপের পূর্ণ সহযোগিতা নিচ্ছি।”

পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমাদের বেশ কয়েকটি মিটিংও হয়েছে। তবে ফোকাস গ্রুপের সদস্যরা সবাই একই মিটিংয়ে থাকেন না। কারণ এই গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন বিষয়বস্তুর ওপর বিভিন্ন গ্রুপে কাজ করছেন।”

পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের আরেক সদস্য মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশিকুর রহমান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা কাজ শুরু করেছি। তবে এই মুহূর্তে এরচেয়ে বেশি কিছু বলার সুযোগ নাই।”

পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি
এই টাস্কফোর্সের মূল দায়িত্ব হবে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত কার্যক্রম পরিচালনা করা। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের আকার তথা ‘জিডিপি ও বাজার মূলধন’-এর অনুপাত কম হওয়ার প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করে উত্তরণের জন্য সরকারের আর্থিক খাতের নীতি প্রণয়নের প্রস্তাবনা।

দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নের জন্য সরকারের আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কমিশনের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ প্রণয়ন করা।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পুঁজিবাজারের সুশাসন উন্নীত করার লক্ষ্যে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ করা ও সমাধানের সুপারিশমালা প্রণয়ন।

বিএসইসির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ, অভ্যন্তরীণ সুশাসন, অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে প্রযুক্তি ও অটোমেশনের প্রয়োগ, তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশাসনিক কাঠামোর সুপারিশ, মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কমিশনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, সেমিনার, কর্মশালায় অংশগ্রহণসহ অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয়ে সুপারিশ প্রদান।

ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, সিসিবিএলের তদারকি কার্যক্রম বিশ্বমানে উন্নীত করাসহ উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুগোপযোগী করার সুপারিশ প্রণয়ন।

প্রাইভেট প্লেসমেন্ট/অফারের মাধ্যমে ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ ইস্যু সংক্রান্ত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইস্যু অব ক্যাপিটাল) রুলস, ২০০১ যুগোপযোগী করার সুপারিশ প্রণয়ন।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, কর্পোরেট ডিজক্লোজার, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের সঠিকতা নিশ্চিত করাসহ কর্পোরেট গভর্ন্যান্স, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং বাজারের গভীরতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন।

ডেট ও ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ ইস্যুর আবেদনের ক্ষেত্রে দাখিলকৃত তথ্য-উপাত্ত, দলিল-দস্তাবেজ, সম্পদ পুনঃমূল্যায়ন প্রতিবেদন, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তুতকারী পক্ষসমূহ, যেমন: ইস্যুয়ার কোম্পানি, ইস্যু ম্যানেজার ও আন্ডার রাইটার (মার্চেন্ট ব্যাংকার), ডেল্যুয়ার এবং অডিটরসহ অন্যান্য পক্ষসমূহের দায়-দায়িত্ব ও সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন।

বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ সংশ্লিষ্ট বিধিমালা, যেমন: সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা ১৯৯৬, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা-২০০১ সহ সংশ্লিষ্ট বিধিমালা যুগোপযোগী করার সুপারিশ প্রণয়ন।

ডেট ও ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ ইস্যু সংক্রান্ত বিধি-বিধান, যেমন: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস ২০১৫, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রাইট ইস্যু) রুলস ২০০৬, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ডেট সিকিউরিটিজ) রুলস ২০২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইনভেস্টমেন্ট সুকুক) রুলস ২০১৯, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সম্পদভিত্তিক সিকিউরিটি ইস্যু) বিধিমালা-২০০৪ সংশ্লিষ্ট বিধিমালা যুগোপযোগী করার সুপারিশ প্রণয়ন।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়মিত পরামর্শ ও সমন্বয়ের গাইডলাইন এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন।

বাজারে কারসাজি, সুবিধাভোগী ব্যবসায় লেনদেন ও অন্যান্য অনিয়মের বিচার ও জরিমানায় সমতা আনয়নের জন্য বিদ্যমান আইনের শাস্তির ধারার অধীনে একটি সুনির্দিষ্ট পেনাল কোড বা শান্তির বিধিমালা প্রণয়ন করা।

মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ যুগোপযোগী করাসহ বিদ্যমান ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও বিজনেস ইন্টেলিজেন্স মডিউল-সমৃদ্ধ বিশ্বমানের অনলাইন ও অফলাইন সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম বা বাজার তদারকি বাবস্থার কার্যকারিতা নিরুপণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ প্রণয়ন।

বর্তমান বাজার কাঠামোর মূল্যায়ন, বাজারের গভীরতা, তারল্য ও পণ্য বৈচিত্র্যকে বিবেচনাপূর্বক দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কিভাবে আরো আকৃষ্ট করা যায়, সেই কৌশল প্রণয়নে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান।

পুঁজিবাজারের কার্যক্রমে অটোমেশন বৃদ্ধির মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সুশাসন এবং বিনিযোগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন এবং পুঁজিবাজার উপযোগী ফিনটেক টেকনোলজি প্রচলন এবং পুঁজিবাজারের প্রযুক্তিগত সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ প্রণয়ন।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর (বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইডিআরএ, এমআরএ, এনবিআর, আরজেএসসি ইত্যাদি) সঙ্গে সমন্বয়ের উপায় নির্ধারণে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি বা নির্দেশিকা প্রণয়ন।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাথে অতালিকাভুক্ত কোম্পানি বা তালিকাভুক্ত কোম্পানির মার্জার, অ্যামালগামেশন, একুইজেশনের মাধ্যমে কোনো শেয়ার ইস্যু সংক্রান্ত বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত স্কিম অনুমোদনের পূর্বে বিএসইসি থেকে অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বিষয়ে সুপারিশমালা প্রণয়ন।

এছাড়া টাস্কফোর্সের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি কার্যপরিধিতে সংযোজন করা যাবে।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র র স প র শ প রণয়ন গ র প র সদস য ব এসইস র র জন য স প র টন র সহয গ ত ব যবস থ র সহয গ আর থ ক ক জ কর গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৯ দাবি সংবাদকর্মীদের 

‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর করাসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের সুরক্ষায় ৩৯ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।

শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।

আরো পড়ুন:

‘সাম্য, মর্যাদা ও আলোকিত সমাজের স্বপ্নে ৭১ ও ২৪ এর তরুণরা’

শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিলে কেউ যেন খুনের কনটেক্সট না ভুলে যান: প্রেস সচিব

বিএফইউজের দাবিগুলো হলো:
০১. ‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর করতে হবে।

০২. অবিলম্বে স্বাধীন ও কার্যকর তথ্য কমিশন গঠন করতে হবে।

০৩. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, রেডিও, সংবাদ সংস্থা, অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন ও দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও কার্যত তা হচ্ছে না। অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমে নবম ওয়েজ বোর্ড কার্যকর হয়নি। অথচ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে। তাই, বর্তমান সরকারকে দ্রুত নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন এবং দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

০৪. সাংবাদিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। একইভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেও যেকোনো মূল্যে সুরক্ষা দিতে হবে। আইনি কাঠামো দ্বারা সুরক্ষা না দিলে সাংবাদিক সমাজ প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে থাকবে এবং বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়ত তা-ই হচ্ছে।

০৫. সাংবাদিকদের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহে দুই দিন ছুটি ভোগ করে, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও দুই দিন ছুটির ব্যবস্থা চালু আছে। সাংবাদিকদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন সাপ্তাহিক ছুটিও পান না। এতে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়ছে।

০৬. সাংবাদিক হত্যা, হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে।

০৭. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে।

০৮. আইন অনুযায়ী সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য পৃথক শ্রম আদালত স্থাপন করতে হবে। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সাংবাদিকরা নানাভাবে হয়রানি ও হামলা-মামলার শিকার হন। এসব মামলা ঘাড়ে নিয়ে কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হয়। থানা বা কোর্ট নয়, সংবাদসংক্রান্ত সব মামলা শ্রম আদালতে করতে হবে।

০৯. সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা, রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন, মাল্টিমিডিয়ার জন্য একটি ‘সমন্বিত জাতীয় সংবাদমাধ্যম নীতিমালা’ প্রণয়ন করতে হবে। এই সমন্বিত নীতিমালার আওতায় প্রতিটি ভিন্ন গণমাধ্যমের জন্য ভিন্ন নীতিমালা থাকবে। অনেক নীতিমালা প্রণয়ন না করে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে সেটি প্রয়োগ করা ও মেনে চলা সহজ হবে।

১০. সংবাদপত্র, অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদ সংস্থা ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য অভিন্ন ওয়েজ বোর্ড করতে হবে। বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য ওয়েজ বোর্ড থাকলেও টেলিভিশন ও অনলাইনের জন্য কোনো ওয়েজ বোর্ড নেই। তাই, টেলিভিশন সাংবাদিকদের চাকরি শেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। এটা অত্যন্ত অমানবিক।

১১. রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সব স্তরে এবং আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হবে, তত দিন পর্যন্ত স্বাধীন সাংবাদিকতাও সম্ভব হবে না। বর্তমানে ব্যাপক হারে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব সম্পাদনে রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে হচ্ছে কারণে-অকারণে। মামলা-গ্রেপ্তারেও পিষ্ট হচ্ছে।

১২. কথায় কথায় সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি বন্ধ এবং ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বহাল করতে হবে।

১৩. চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়া অথবা অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের দেনা-পাওনা ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

১৪. কোনো গণমাধ্যম নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র ছাড়া এবং বিনা বেতনে কোনো সাংবাদিককে অস্থায়ী, স্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারবে না।

১৫. মফস্বলের সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন দিতে হবে। জেলা পর্যায়ে কিছু পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল বেতন দিলেও অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ উপজেলা প্রতিনিধিদের এক টাকাও বেতন দেয় না। উপন্তু, তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য চাপ দেওয়া হয়। সংবাদকে উপেক্ষা করে বিজ্ঞাপনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিতে না পারলে চাকরিচ্যুত করা হয়। এগুলো বন্ধ করতে হবে।

১৬. তিন বছর সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার পর ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে পদোন্নতি দিতে হবে।

১৭. সরকার ও গণমাধ্যম কর্তৃক দ্রুত সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

১৮. বছরের শুরুতে আগের বছরের গড় মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যান্য ভাতার ক্ষেত্রে অন্তত দুই বছর পর পর মুদ্রাস্ফীতি সামঞ্জস্য করে বিবেচনা করতে হবে।

১৯. পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্টে ক্যামেরা, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, গাড়ি, মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। শারীরিক ক্ষতির জন্য দুর্ঘটনা বীমা থাকতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা মালিকপক্ষকেই নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্ট কাভারের জন্য প্রতিষ্ঠানকে অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। সংবাদকর্মীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং দুর্ঘটনা ভাতার ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্থায়ী সংবাদকর্মীদের জন্য দুর্ঘটনা বীমা ও চিকিৎসা বীমার ব্যবস্থা, জীবন বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা করতে হবে। সংবাদকর্মীদের আইনি সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠানে আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে। নারী সংবাদকর্মীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, বিশেষ করে তাদের জন্য আলাদা রেস্ট রুম রাখতে হবে।

২০. সাংবাদিকদের তৈরি প্রতিবেদনের কারণে যেসব ফৌজদারি মামলা আছে, তা প্রত্যাহার ও বাতিল করতে হবে।

২১. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে।

২২. কোনো গণমাধ্যমকে গোয়েন্দা সংস্থা কোনো ধরনের নির্দেশনা দিতে পারবে না।

২৩. প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা কোনো সংবাদমাধ্যম/গণমাধ্যম পরিচালিত হতে পারবে না।

২৪. সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের রিপোর্ট প্রতি তিন মাস অন্তর সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে জমা দিতে হবে। এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, মনিটরিং করতে হবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে সত্যিকার অর্থে ওয়েজ বোর্ড কার্যকর করেছে কি না, সেটা সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

২৫. সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক হতে হবে। সাংবাদিকদের শুরুতে বেতন ন্যূনতম ৩৫ হাজার টাকা হতে হবে এবং প্রতিবছর ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে।

২৬. রেডিও, টেলিভিশনের লাইসেন্স প্রদানে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিআরসিকে পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে। দলীয় বিবেচনায় নয়, যোগ্যতায় হতে হবে লাইসেন্সপ্রাপ্তির মূল ভিত্তি।

২৭. কোনো সাংবাদিক যত দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করার মতো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন, তার বিরুদ্ধে যদি আর্থিক দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো প্রমাণিত অভিযোগ না থাকে, তা হলে তাকে অবসর দেওয়া যাবে না।

২৮. সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন পরশোধ করতে হবে।

২৯. দেশে সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনো সেকেলে রয়েছে গেছে। কেউ যদি যথাযথভাবে সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হয়, সেক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়াও অনলাইনভিত্তিক করতে হবে। নিবন্ধন পেতে হয়রানি, ঘুষ দাবিসহ সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে সংবাদমাধ্যমের অবমূল্যায়ন ও হয়রানি বন্ধ করে যেকোনো এক জায়গায় সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধন-সংক্রান্ত বিশেষ সেল রাখা যেতে পারে। ভেরিফিকেশন থেকে শুরু করে নিবন্ধনসহ সব কিছু বিশেষ সেলের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা করবেন।

৩০. চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর বর্তমানে প্রিন্ট পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ও বিজ্ঞাপন হার নির্ধারণ করে থাকে। এখানে অনেক শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। যেসব পত্রিকা দৈনিক ৫০০ কপিও ছাপা হয় না, সেসব পত্রিকা লাখ লাখ কপি ছাপানোর ভুয়া তথ্য দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে বেশি বিজ্ঞাপন রেট নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অর্থের বিনিময়ে রেট আপ-ডাউন বন্ধ করতে হবে।

৩১. সংবাদমাধ্যমের বিজ্ঞাপন রেট বাড়াতে হবে। ৯০০ টাকা রেট দিয়ে এখনকার সংবাদমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। এখনকার মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় রেট আরো অন্তত ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। একই কথা রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমের জন্যও প্রযোজ্য। সব মিডিয়ার জন্যও বাস্তবসম্মত বিজ্ঞাপন নীতিমালা করতে হবে;

৩২. রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। ঠিক তেমনই করপোরেট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিমালিকানাধীন টিভি-রেডিও ও সংবাদপত্রকে মালিকের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থের প্রভাব থেকে মুক্ত করার একটা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৩৩. কথায় কথায় সংবাদমাধ্যম ডিক্লারেশন বাতিল বন্ধ করতে হবে। সরকার কোনো সংবাদমাধ্যম বন্ধ করলে সরকারকে অন্তত ৬ মাস ওই মিডিয়ার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বহন করতে হবে।

৩৪. নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক/গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নাগরিকের নির্বাচনী তথ্য জানার অধিকারকে সংকুচিত করবে। বিশেষ করে, নির্বাচনকেন্দ্রিক সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ চলাচল, পর্যবেক্ষণ ও তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। আমরা অবিলম্বে এই নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি।

৩৫. নিউজ প্রিন্টের আমদানি শুল্ক ২ শতাংশ (বর্তমানে প্রযোজ্য ৫ শতাংশ), ভ্যাট ১৫ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৫ শতাংশ ও অগ্রিম কর (এটি) ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ন্যূনতম ১ শতাংশ করতে হবে। সংবাদপত্র শিল্পকে সেবামূলক শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে করপোরেট ট্যাক্স সর্বনিম্ন নির্ধারণ অথবা অবলোপন করতে হবে।

৩৬. সামগ্রিক মিডিয়াকে শিল্প ঘোষণা করে এই শিল্পের বিকাশে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বিগত দিনে আমরা দেখেছি, সরকারের পছন্দমতো সংবাদ না করলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হুমকি দিয়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হয়েছে। সংবাদের কারণে কোনো গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন বন্ধ করাকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৩৭. সাংবাদিকতাকে বাধাহীন করতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য ভয়হীন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩৮. রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচনী ইশতেহারে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

দাবিগুলো উপস্থাপন করে সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, “আমরা এমন একটি পরিবর্তিত সংবাদমাধ্যম চাই, যেখানে একজন সাংবাদিক কোনো পক্ষের চাপ ছাড়াই ঘটনার গভীরে গিয়ে সত্য তুলে ধরতে পারবেন। যেখানে অনুসন্ধানই হবে সত্যের সমাহার আর দায়িত্ববোধ হবে সাংবাদিকতার মূলশক্তি।”

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার, এ কে এম মহসিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বাছির জামাল, এরফানুল হক নাহিদ, রফিক মুহাম্মদ, রাশেদুল হক, দিদারুল আলম, সাঈদ খান, আবু বকর, অপর্ণা রায়, মোদাব্বের হোসেন, খন্দকার আলমগীর, ডিএম অমর, আল আমিন প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৯ দাবি সংবাদকর্মীদের