রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের সম্বন্বয়ে যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে তা হবে বিশ্বের রোল মডেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্বাস দেওয়ায় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজ শহীদ মিনারের এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল ঘোষিত ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে ২৪ ঘণ্টা পর নতুন কর্মসূচির ঘোষণার আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা‌। একইসাথে আরো ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী সাগর। তিনি বলেন, “আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলের দাবি নিয়ে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলন–কর্মসূচি করে আসছি। আমাদের দাবি ছিল অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে আমাদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেটা আসলে আর সংস্কার নয়; আমরা চূড়ান্ত মুক্তির আন্দোলন শুরু করেছি দাবি বাস্তবায়নে সরকার ইউজিসির সমন্বয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর একটি উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেয়। যে কমিটি খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।”

আরো পড়ুন:

বাস শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ৩

সিভিল এভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু

তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা ভর্তি নিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম, যেহেতু সাত কলেজ একটা প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে যেন ঢাবি আর শিক্ষার্থী ভর্তি না নেয়। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা গত ২৬ জানুয়ারি ঢাবির প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড.

মামুন আহমেদের কার্যালয়ে দেখা করতে যাই। সেখানে তিনি আমাদের সাত কলেজের প্রতিনিধিদের লাঞ্ছিত করে বের করে দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ জানান।”

“ওইদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের নিউমার্কেট ও নীলক্ষেত এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাকিবসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। রাকিব এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। গত ২৭ জানুয়ারি সাত কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদের কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলসহ একাধিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

জাকারিয়া বারী সাগর বলেন, “মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘সাত কলেজ নিয়ে নতুন একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে’। তিনি বলেছেন, ‘নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে সময়ের প্রয়োজন। এটার মডেল কী হবে সেটা নিয়ে কাজ হচ্ছে’। শিক্ষা উপদেষ্টা শুরু থেকে আমাদের দাবির বিষয়ে ইতিবাচক ছিলেন। তিনি এর আগেও আমাদের দাবি বাস্তবায়নে বিভিন্ন সময় আশ্বস্ত করেছে। আমাদের বিশ্বাস, উপদেষ্টার আশ্বাস অনুযায়ী আমরা খুব শিগগিরই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় পাব।”

সংবাদ সম্মেলনে নতুন ৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়:
১.শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রকাশ করতে হবে।
২.এক মাসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
৩.সব বর্ষের চলমান পরীক্ষা পূর্বঘোষিত রুটিন অনুযায়ী চলমান হবে।
৪.বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর সাথে সাথেই চলমান সব শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৫.উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাত কলেজের চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং সাত কলেজের অধ্যক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সাথে আগামী দুই দিনের মধ্যে টেবিল টকের আয়োজন করতে হবে।

ঢাকা/রায়হান/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঢ ক কল জ কল জ র শ ক ষ র থ স ত কল জ র সরক র চলম ন

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ