দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের রিসিভার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিনকে। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি'র ৫ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘোষণা টিভি স্ক্রলে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তাকে পদ থেকে সরানো ও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ ৬টি সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৬ষ্ঠ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। 

গত ২৮ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। সভায় অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক), শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বিষয়ে বিগত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের লে-অফকৃত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ করা এবং শ্রমিকদের শ্রম আইন মোতাবেক পাওনা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে পরিশোধ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বেক্সিমকোর লে-অফকৃত কোম্পানিসমূহ বন্ধ প্রক্রিয়া নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৫ম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘোষণা টিভি স্ক্রলে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় রিসিভার এর ভূমিকা নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে রিসিভারের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং রিসিভার পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

এছাড়া, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ঋণ দানকারী জনতা ব্যাংকসহ সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কিসের ভিত্তিতে বা কি কি ডকুমেন্টের বিপরীতে ঋণ প্রদান করেছে এবং এক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে ফরেনসিক অডিটসহ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। দ্রুত সভা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সংশ্লিষ্ট এনসিবি এবং প্রাইভেট ব্যাংকসমূহ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি. এবং শাইনপুকুর সিরামিকস লি: এর মর্টগেজকৃত শেয়ার, সম্পদ ইত্যাদি বিক্রির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উপর আলোচনা হয়।

সভায় বিবিধ বিষয়ের মধ্যে নায়াগ্রা টেক্সটাইলস্ লিমিটেড এর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক সংখ্যা, দায়-দেনা, বকেয়া বেতন-ভাতা ইত্যাদি সরেজমিন পরিদর্শন পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়েও আলোচনা হয়।

সভায় সর্বসম্মতিতে গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর লে-অফকৃত কোম্পানিগুলো কর্তৃপক্ষ বন্ধ করবে। শ্রম আইনের অধীনে শ্রমিকদের আইনানুগ পাওনাদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে। এ বিষয়ে সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

বেক্সিমকোর লে-অফকৃত কোম্পানিসমূহ বন্ধ প্রক্রিয়া নিয়ে উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘোষণা টিভি স্ক্রলে প্রেরণের ব্যবস্থা না করায় অর্থাৎ কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক রিসিভারকে সাময়িক বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রিসিভার পরিবর্তনের জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণপ্রদানকারী জনতা ব্যাংকসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিসের ভিত্তিতে বা কি কি ডকুমেন্টের বিপরীতে ঋণ প্রদান করেছে এবং এক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে  ফরেনসিক অডিটসহ চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্যঃপূর্বক সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ এবং শাইনপুকুর সিরামিকস লি: ০২ (দুই) টি প্রতিষ্ঠানের মর্টগেজকৃত শেয়ার, সম্পদ ইত্যাদি বিক্রির লক্ষ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে নিয়ে দ্রুত সভা করে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করবে।

নায়াগ্রা টেক্সটাইলস্ লিমিটেড এর আবেদনে বর্ণিত বিষয়টি অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক সংখ্যা, দেয়-দেনা, বকেয়া বেতন-ভাতা ইত্যাদি সরেজমিন পরিদর্শন করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর প্রতিবেদন প্রেরণ করবে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের দায়-দেনা, বকেয়া বেতন-ভাতা ইত্যাদি পরিশোধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপে এই ‘রিসিভার’ নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই রিসিভারের কাজ হচ্ছে গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিনকে রিসিভার পদে নিয়োগ দেওয়া হয় গত ৫ সেপ্টেম্বর।

ঢাকা/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ রহণ করব য় ব যবস থ উপদ ষ ট কম ট র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ