দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে বেক্সিমকো’র রিসিভার
Published: 3rd, February 2025 GMT
দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের রিসিভার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিনকে। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি'র ৫ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘোষণা টিভি স্ক্রলে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তাকে পদ থেকে সরানো ও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ ৬টি সিদ্ধান্ত হয়।
জানা গেছে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৬ষ্ঠ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
গত ২৮ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
সভায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বিষয়ে বিগত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের লে-অফকৃত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ করা এবং শ্রমিকদের শ্রম আইন মোতাবেক পাওনা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে পরিশোধ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বেক্সিমকোর লে-অফকৃত কোম্পানিসমূহ বন্ধ প্রক্রিয়া নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৫ম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘোষণা টিভি স্ক্রলে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় রিসিভার এর ভূমিকা নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে রিসিভারের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং রিসিভার পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ঋণ দানকারী জনতা ব্যাংকসহ সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কিসের ভিত্তিতে বা কি কি ডকুমেন্টের বিপরীতে ঋণ প্রদান করেছে এবং এক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে ফরেনসিক অডিটসহ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। দ্রুত সভা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সংশ্লিষ্ট এনসিবি এবং প্রাইভেট ব্যাংকসমূহ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি. এবং শাইনপুকুর সিরামিকস লি: এর মর্টগেজকৃত শেয়ার, সম্পদ ইত্যাদি বিক্রির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উপর আলোচনা হয়।
সভায় বিবিধ বিষয়ের মধ্যে নায়াগ্রা টেক্সটাইলস্ লিমিটেড এর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক সংখ্যা, দায়-দেনা, বকেয়া বেতন-ভাতা ইত্যাদি সরেজমিন পরিদর্শন পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়েও আলোচনা হয়।
সভায় সর্বসম্মতিতে গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর লে-অফকৃত কোম্পানিগুলো কর্তৃপক্ষ বন্ধ করবে। শ্রম আইনের অধীনে শ্রমিকদের আইনানুগ পাওনাদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে। এ বিষয়ে সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
বেক্সিমকোর লে-অফকৃত কোম্পানিসমূহ বন্ধ প্রক্রিয়া নিয়ে উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘোষণা টিভি স্ক্রলে প্রেরণের ব্যবস্থা না করায় অর্থাৎ কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক রিসিভারকে সাময়িক বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রিসিভার পরিবর্তনের জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণপ্রদানকারী জনতা ব্যাংকসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিসের ভিত্তিতে বা কি কি ডকুমেন্টের বিপরীতে ঋণ প্রদান করেছে এবং এক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে ফরেনসিক অডিটসহ চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্যঃপূর্বক সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ এবং শাইনপুকুর সিরামিকস লি: ০২ (দুই) টি প্রতিষ্ঠানের মর্টগেজকৃত শেয়ার, সম্পদ ইত্যাদি বিক্রির লক্ষ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে নিয়ে দ্রুত সভা করে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করবে।
নায়াগ্রা টেক্সটাইলস্ লিমিটেড এর আবেদনে বর্ণিত বিষয়টি অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক সংখ্যা, দেয়-দেনা, বকেয়া বেতন-ভাতা ইত্যাদি সরেজমিন পরিদর্শন করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর প্রতিবেদন প্রেরণ করবে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের দায়-দেনা, বকেয়া বেতন-ভাতা ইত্যাদি পরিশোধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপে এই ‘রিসিভার’ নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই রিসিভারের কাজ হচ্ছে গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিনকে রিসিভার পদে নিয়োগ দেওয়া হয় গত ৫ সেপ্টেম্বর।
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ রহণ করব য় ব যবস থ উপদ ষ ট কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।