হাবিপ্রবির ডাস্টবিনগুলো হাসিনাবিনে রূপান্তর শিক্ষার্থীদের
Published: 3rd, February 2025 GMT
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) পূর্ব থেকে স্থাপিত ডাস্টবিনগুলোতে শেখ হাসিনার ব্যাঙ্গাত্মক ছবি সাটিয়ে তা হাসিনাবিনে রূপান্তর করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ডাস্টবিনগুলো তারা হাসিনাবিনে রূপান্ত করেছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশের মাটিতে স্বৈরশাসন চালিয়েছে, তাতে তার জায়গা এ ডাস্টবিনেই হওয়া উচিত। ডাস্টবিনে কেউ ময়লা না ফেললেও হাসিনাবিনে ঠিকই ময়লা ফেলবে। এর অন্যতম কারণ স্বৈরশাসক হাসিনার প্রতি ছাত্র-জনতার ব্যাপক ঘৃণা রয়েছে।
হাসিনাবিনের বিষয়ে জানতে চাইলে মেকানিকাল বিভাগের ২০তম ব্যাচের নাজমুল হাসান ইমন বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্থান অমর একুশে বইমেলায় দেখেছেন আপনারা। তার স্থান মূলত ডাস্টবিনেই। তার স্বৈরাচারী শাসনে মানুষ এতদিন ত্যাক্ত-বিরক্ত ছিল। আমরা মনে করি, খুনি হাসিনার অবস্থান নিঃসন্দেহে ডাস্টবিনে হওয়া উচিত। তাই তাকে ডাস্টবিনে স্থান দেওয়া হয়েছে “
এগ্রিকালচার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো.
তিনি বলেন, “স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে যে বিজয় শিক্ষার্থীরা অর্জন করেছেন, তা আমাদের সবাইকে সমুন্নত রাখতে হবে। বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ কর্তৃত্ববাদী শাসনের পুনরুত্থান মেনে নেবে না। কেউ হয়তো ডাস্টবিনে ময়লা ফেলবে না, কিন্তু হাসিনাবিনে ঠিকই ময়লা ফেলবে। কোন ভারত বাদ না, পাক বাদ না, এক বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সজিব বলেন, “বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা খুনি হাসিনার স্বৈরশাসনকে লাল কার্ড দেখিয়েছে। কিন্তু তার নির্লজ্জ পেটুয়া বাহিনী আবারো রাজনীতিতে অনুপ্রবেশের বৃথা চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে, তাদের নেত্রীর স্থান কোথায়। ফ্যাসিস্ট হাসিনার নেতা-কর্মীদের বোঝানোর জন্যই এ হাসিনাবিন স্থাপন করা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হাসিনার প্রতি তাদের ঘৃণাকে নিক্ষেপ করতে পারবেন।”
ঢাকা/সংগ্রাম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।