Prothomalo:
2025-09-18@10:01:07 GMT

মুখ ও চোয়ালের ব্যথা

Published: 5th, February 2025 GMT

মুখ ও চোয়ালের (ওরাল ও ম্যাক্সিলোফেসিয়াল) ব্যথা নানা কারণে হতে পারে। এই ব্যথা অনেক সময় সাধারণ অসুবিধা থেকে শুরু করে গুরুতর শারীরিক সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। তবে মুখ ও এর আশপাশে ব্যথা খুবই অস্বস্তিকর ও কষ্টদায়ক। অনেক সময় এতে খাবার গ্রহণ ও পুষ্টিতে সমস্যা হয়।

দাঁতের ব্যথা: দাঁতের ব্যথা সাধারণত ক্যাভিটি, মাড়ি সংক্রমণ বা দাঁতের ক্ষয় থেকে সৃষ্টি হয়। দাঁতের সঠিক যত্ন না নিলে এটি ক্রমে বাড়তে পারে এবং সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। দাঁতের কারণে সৃষ্ট ব্যথা গাল, চোয়াল, গলা এমনকি মাথা পর্যন্ত ছড়াতে পারে। তাই মুখ ও এর আশপাশে ব্যথা হলে দাঁতে কোনো সমস্যা আছে কি না, তা প্রথমে পরীক্ষা করা জরুরি।

চোয়ালের বা গালের ওপর দিকে আছে প্যারেটিড গ্রন্থি। এই গ্রন্থিতে অনেক সময় প্রদাহ ও সংক্রমণ হতে পারে। তখন মুখ-চোয়ালজুড়ে ব্যথা হয়।

চোয়ালের ব্যথা: চোয়ালের সন্ধির নাম টেমপোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট। চোয়ালের ব্যথা তাই সাধারণত এই টেমপোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্টের (টিএমজে) সমস্যার কারণে হয়। অতিরিক্ত চাপ, দাঁত ঘষা বা চোয়ালের মাংসপেশির সমস্যার কারণে এটি দেখা দিতে পারে। আবার কিছু বাতরোগের কারণেও এই সন্ধিতে প্রদাহ হতে পারে।

মুখের ভেতরে ঘা: মুখের ভেতরে ঘা, ক্ষত বা আলসার এবং সংক্রমণ থেকে মুখগহ্বরে জ্বালা ও ব্যথা হতে পারে। এটি তীব্র অ্যাসিডিক বা গরম খাবারের কারণে হতে পারে। আবার নানা রকম জটিল রোগেও মুখে ঘা হয়।

ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া: এতে মারাত্মক ব্যথা হয়, যা মুখ ও চোয়ালের স্নায়ু ট্রাইজেমিনাল নার্ভের প্রদাহ বা চাপের কারণে হয়। এটি তীক্ষ্ণ, তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে। মুখ নাড়লে যেমন টুথব্রাশ করতে গেলে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়।

মাড়ির সমস্যা: মাড়ির রোগ যেমন জিঞ্জিভাইটিস বা পেরিওডন্টাইটিস, মাড়িতে ব্যথা ও রক্তক্ষরণের কারণ হতে পারে।

গ্ল্যান্ডের ব্যথা: চোয়ালের বা গালের ওপর দিকে আছে প্যারেটিড গ্রন্থি। এই গ্রন্থিতে অনেক সময় প্রদাহ ও সংক্রমণ হতে পারে। তখন মুখ-চোয়ালজুড়ে ব্যথা হয়। এর একটি পরিচিত উদাহরণ মাম্পস। এই ভাইরাসের সংক্রমণে প্যারোটিড গ্রন্থি ফুলে যায় ও তীব্র ব্যথা হয়। মুখ হাঁ করতেও কষ্ট হয়।

প্রতিকার ও পরামর্শ

মুখ, মাড়ি, দাঁত বা হাড়ের যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। দাঁতের সঠিক যত্ন, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত মুখ পরিষ্কার রাখা এবং স্ট্রেস কমানোর মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। জটিল ক্ষেত্রে ডেন্টিস্ট বা ওরাল ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মুখ ও চোয়াল এবং আশপাশের ব্যথা অবহেলা করলে এটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় রূপ নিতে পারে। তাই প্রাথমিক অবস্থাতেই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

ডা.

জেবিন জান্নাত জুঁই: ডেন্টাল ইউনিট, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ক রমণ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’

নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে জেন–জিদের বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে এ জয় এসেছে চড়া মূল্যে।

বিক্ষোভের সংগঠকদের একজন তনুজা পান্ডে। তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত হলেও এর সঙ্গে মানসিক আঘাত, অনুশোচনা ও ক্ষোভের মিশ্র বোঝাও যোগ হয়েছে।’

হিমালয়ের দেশ নেপালে গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অস্থিরতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিক্ষোভে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও গত বছরের জুলাইয়ে চালু হওয়া হিলটনের মতো বিলাসবহুল হোটেলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এখনো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক সংকটবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আশীষ প্রধান বলেন, ‘এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।’

তবে আশীষ আরও উল্লেখ করেন, বিক্ষোভের কারণে সরকারি সেবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সমান্তরাল হতে পারে। ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতে এ ধ্বংসযজ্ঞ সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিক্ষোভে সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০টি স্থানীয় সরকারি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।আশীষ প্রধান, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের কারণে প্রায় তিন লাখ কোটি নেপালি রুপির (২ হাজার ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। এ সময় নেপালের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

৮ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরুর দুই দিন আগে ২৪ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী তনুজা পান্ডে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে তিনি অঞ্চলটির অন্যতম সংবেদনশীল পর্বতশ্রেণি চুরেতে একটি খনি দেখান। তিনি লিখেছিলেন, ‘নেপালের সম্পদের মালিকানা শুধু জনগণের। রাজনীতিবিদদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নয়।’ এ সময় সমবয়সীদের প্রতি ‘দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে’ বিক্ষোভের আহ্বান জানান তিনি।

এশিয়ায় তরুণদের অন্যান্য আন্দোলনের মতো নেপালের জেন–জিদের বিক্ষোভও ছিল নেতৃত্বহীন। দীর্ঘদিন ধরে ‘নেপো বেবিজ’দের (ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের সন্তানদের) বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর অভিযোগ আনা হয়।

সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে প্রাদেশিক মন্ত্রীর ছেলে সৌগত থাপাকে দেখা গেছে। ছবিতে তাঁকে লুই ভুতোঁ, গুচি, কার্টিয়ারসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি একটি ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর জবাবে সৌগত দাবি করেন, ছবিটি নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাবা ‘জনসেবা থেকে উপার্জিত প্রতিটি রুপি’ জনগণের কাছে ফেরত দিয়েছেন।

তনুজা পান্ডে বলেন, এটা দুঃখজনক যে শিক্ষিত তরুণেরাও দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এখানে যে বেতন দেওয়া হয়, তা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অনেক কম।

নেপালের গণতন্ত্র খুব একটা পুরোনো নয়। মাওবাদীদের নেতৃত্বে এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে নেপাল একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। সেই সময় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিশ্রুত স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসেনি। ১৭ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং কোনো নেতাই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

নেপালের কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও কারফিউ চলাকালে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন আন্দোলনকারীরা। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নেপাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ