হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢুকে পদত্যাগে চাপ দেওয়ায় প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম ‘ভয়ে স্ট্রোক’ করেছেন বলে জানা গেছে। পরে তাকে সহকর্মীরা দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শাহজাহানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। 

শাহজাহানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে শাহজাহানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০-১৫ জন যুবক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমকে পদত্যাগ করতে চাপ দেন। এ সময় তারা প্রধান শিক্ষককে আড়াই লাখ টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির হিসেব দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক অচেতন হয়ে পড়েন। পরে ফয়সল নামে এক যুবক তার ফেসবুক আইডিতে এ ঘটনার একটি ভিডিও ছেড়ে দেন। তবে তাতে তিনি দাবি করেন, শিক্ষককে পদত্যাগের কথা বলায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ওই ভিডিও ফয়সাল জানান, শিক্ষকের সঙ্গে কেউ খারাপ ব্যবহার করেনি। পদত্যাগের কথা বলায় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। 

বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কাসেম বলেন, বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে মানসিকভাবে নাজেহাল করে এক দল যুবক। চাপ সইতে না পেরে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। 

মাধবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেকেুর জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ট তদন্ত করা দরকার।

শিক্ষক আবুল কাসেম জানান, প্রধান শিক্ষক পুরোপুরি সুস্থ নন। 

বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ বিন কাসেম বলেন, এ ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মাধবপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক ষকক পদত য গ ম ধবপ র এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।” 

এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক। 

উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”

তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।

আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।” 

চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।” 

চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”

মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ