বাংলাদেশ দূতকে তলব করে ঢাকার ওপর দোষ চাপাল ভারত
Published: 7th, February 2025 GMT
আবারও বাংলাদেশ দূতকে তলব করল ভারত। দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনার মন্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত ও এর সঙ্গে দিল্লির কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দূতকে জানানো হয়েছে। শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ‘বাংলাদেশ নেতিবাচকভাবে ভারতকে চিত্রিত করছে’ বলেও দিল্লির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুক্রবার ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মো.
এর আগে জানুয়ারির মাঝামাঝি সীমান্তে স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশের দূতকে তলব করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য একান্ত তাঁর ব্যক্তিগত; এর সঙ্গে ভারতের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁর এসব বক্তব্যের সঙ্গে ভারতের অবস্থানকে মিশিয়ে দেখা, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ইতিবাচকতায় সাহায্য করবে না। যদিও ভারত সরকার পরস্পরের জন্য উপকারমূলক সম্পর্কের জন্য প্রচেষ্টা করবে। সেই সঙ্গে ভারত আশা করে, বাংলাদেশ পরিবেশকে নষ্ট না করে একইভাবে প্রতিদান দেবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ক্রমাগত মিথ্যা ও বানোয়াট মন্তব্য ও বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। এসব বক্তব্য থামাতে ভারতের দূতকে তলব করে তাঁকে শক্ত একটি প্রতিবাদ পত্র দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দুই দেশের কূটনীতিকদের পাল্টাপাল্টি তলবের মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়েও বিষয়টি উঠে এসেছে। শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল দাবি করেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের জন্য ভারত দায়ী নয়। এটা তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত; এতে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।