অমর একুশে বইমেলার প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। স্টল নির্মাণ নিয়ে হাতুড়ি–বাটালির ঠুকঠাক এখনো চলছে। বারোয়ারি মেলার আবহ আবার ফিরতে শুরু করেছে প্রবেশপথে। বিশেষ করে টিএসসির পাশের ফটকের সামনে থেকে মেলার মূল প্রাঙ্গণ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে বসেছে হরেক পণ্যের পসরা। সেখানে কচি ডাবের পুডিং থেকে শুরু করে চুড়ি, ফিতা, ইমিটেশনের গয়না, ভিউকার্ড, কাপড়ের পুতুলসহ বিকোচ্ছে অনেক কিছু।
গতকাল শনিবার বিকেলে দেখা গেল, মেলার ভেতরেও চলছে ফেরিওয়ালাদের অবাধ বেচাকেনা। গাছে গাছে এখন আমের মুকুল দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কে জানে কোথা থেকে এসব ফেরিওয়ালা ডালাভরা কাঁচা আম এনে বিক্রি করছেন কাসুন্দি মাখিয়ে। আছে চিনাবাদামওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালা এমন নানা পদের ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতার দল। একাডেমি তাদের প্রতি সদয় হলেও বই বিক্রেতাদের অনেকেই এ নিয়ে বেশ উষ্মা প্রকাশ করলেন। অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বললেন, এভাবে চলতে থাকলে বইমেলা আবার বারোয়ারি মেলায় পরিণত হবে।
গতকাল মেলার তথ্যকেন্দ্রে নতুন বইয়ের নাম এসেছে ১০২টি। প্রবীণ অভিনয়শিল্পী দিলারা জামান বিকেলে স্বপ্ন-৭১–এর স্টলে আমিনা মাহমুদ মিনার কবিতা তোমাকে চাই বারবার–এর মোড়ক উন্মোচন করেন। তিনি বললেন, বয়সের কারণে এত ভিড়ের মধ্য বইমেলায় আসতে পারেন না। অনেক দিন পর মেলায় এসে পুরোনো দিনের অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে। মেলার পরিবেশ বেশ ভালো লেগেছে তাঁর।
মেলায় এবারের নতুন বইয়ের মধ্যে আগামী প্রকাশনী এনেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের উপন্যাস জুলাই ক্যালাইডোস্কোপ। প্রথমা প্রকাশন এনেছে মাসউদ আহমাদের অদ্বৈত মল্লবর্মণের জীবন ও সময়কেন্দ্রিক উপন্যাস তিতাসের বুনো হাঁস, ভাষা প্রকাশ এনেছে লোকসাহিত্যবিষয়ক বই যাকির সাইদ সংগৃহীত ও সম্পাদিত মুন্সীগঞ্জের মেয়েলি গীত, রিদম প্রকাশনা সংস্থা এনেছে জসিম মল্লিকের উপন্যাস তোমার স্বপ্নের হাতে, বিশ্বসাহিত্য ভবন এনেছে রকিবুল হাসানের প্রবন্ধ সংস্কৃতি পরম্পরা: অভিঘাত অভিজ্ঞান, ঐতিহ্য এনেছে মেসবাহ্ কামালের কবিতা পৃথিবী শোষণহীন একদিন, বাংলা প্রকাশ এনেছে ড.
গতকাল প্রথমা প্রকাশনের স্টলে শিশুতোষ বই বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আছে বাদল সৈয়দের মৃথিবী ও ইসমাইল আরমানের আজব কারিগর। বিক্রেতারা জানালেন, বড়দের বইয়ের মধ্যে ফারুক চৌধুরীর আত্মজীবনী জীবনের বালুকাবেলায়, মতিউর রহমানের রাজনীতিবিষয়ক বই মুক্ত গণতন্ত্র রুদ্ধ রাজনীতি, আতাউর রহমান খানের স্বৈরাচারের দশ বছর, মিজানুর রহমানের ঢাকা পুরাণ–এর কাটতি বেশি ছিল।
আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল শনিবার শিশুপ্রহর থাকবে না। তবে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ছিল শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা। আর বিকেলে মেলামঞ্চে ছিল ‘একজন মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। মূল প্রবন্ধে বিশিষ্ট অনুবাদক রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী বলেন, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ছিলেন একাধারে শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, প্রশাসক, কবি, লেখক, অনুবাদক ও সুফিবাদ চর্চাকারী। তাঁর লেখালেখির জগৎ বিচিত্র। তিনি ভাষা, সমাজ, শিক্ষা প্রসঙ্গে জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ যেমন লিখেছেন, তেমনি রচনা করেছেন সুখপাঠ্য ভ্রমণকাহিনি। অনুবাদের ক্ষেত্রেও তিনি তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। খালিকুজ্জামান ইলিয়াসের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন আবদুস সেলিম ও মোহাম্মদ হারুন রশিদ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র উপন য স প রবন ধ রহম ন গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?