বাংলাদেশে নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ ৩৬.৩% থেকে বেড়ে ৪২.৬৭% হয়েছে। মাঝারি ও উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিনিধিত্ব এখনও আশঙ্কাজনকভাবে কম। এর কারণ সামাজিক রীতি, প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য এবং পারিবারিক দায়িত্বের কারণে কর্মজীবনে বিরতি। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার লক্ষ্যে অক্সফাম ও ওয়াটারএইড যৌথভাবে শুরু করেছে ‘অনির্বাণ-রাইজ অ্যান্ড লিড’ কর্মসূচি।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীর শেরাটন হোটেলে দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এতে বিভিন্ন খাতের প্রধান ব্যক্তিত্ব, উন্নয়ন সংস্থা এরং নীতিনির্ধারকরা অংশ নেন। এই কর্মসূচি মধ্যপর্যায়ের পেশাজীবী নারীদের ক্ষমতায়ন এবং বিরতির পর তাদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ ও নেতৃত্বে সহায়তা করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমাইরা আজম বলেন, ‘জ্ঞান থাকলে সফল হবেন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন কথা বলার আত্মবিশ্বাস, সাবলীল উপস্থাপনা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা।’

অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে বলেন, ‘অগ্রগতির পরও অনেক নারী অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন, যা তাদের কর্মজীবনে প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে।’

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘কর্মজীবনে বিরতি কখনোই একজন নারীর সম্ভাবনা নির্ধারণ করতে পারে না।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের উইমেনস রিটার্নশিপ প্রোগ্রামের প্রকল্প সমন্বয়ক নুসরাত আনোয়ার এবং অক্সফাম বাংলাদেশের ইকোনমিক ইনক্লুশন অ্যান্ড জাস্টিস বিভাগের প্রধান বিদোওরা তাহমিন খান।

‘ব্রেকিং ব্যারিয়ার্স: আধুনিক কর্মক্ষেত্রে নারীর নেতৃত্ব’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়। এটি পরিচালনা করেন লিডারশিপ কোচ ও অর্গানাইজেশনাল ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট চেঞ্জম্যানট্রাস। আলোচনায় অংশ নেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস, লিডারশিপ কোচ ও ওডি কনসালট্যান্ট, চেঞ্জম্যানট্রাস উমা চ্যাটার্জি, ইনোভেশন কানসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.

রুবাইয়াত সরওয়ার, এশিয়ান ডেভেলপমেন্টের হোসনে আরা বেগম ও সিআইএমএমওয়াইটির কমিউনিকেশনস ম্যানেজার মাহেরিন আহমেদ। অনুষ্ঠান শেষে নারীদের জন্য ‘ল্যাবটক অ্যান্ড ক্যারিয়ার ফেয়ার’ অনুষ্ঠিত হয়।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ