খুলনায় কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু
Published: 9th, February 2025 GMT
খুলনা জেলা কারাগারে বন্দী আওয়ামী লীগের এক নেতা মারা গেছেন। আজ রোববার দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এই সময় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
আক্তার শিকদার খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৮ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলালের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগে গত ৪ নভেম্বর তেরখাদা থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার আসামি ছিলেন তিনি। আক্তার শিকদার গত ২৭ জানুয়ারি খুলনার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে খুলনা কারাগারে ছিলেন আক্তার শিকদার। আক্তার শিকদার দুপুরের দিকে মারা গেলেও ঘটনাটি জানাজানি হয়েছে রাত সাড়ে আটটার পর।
খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মো.
জেলার আরও বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, স্ট্রোকের কারণে আক্তার শিকদার মারা গেছেন। লাশের সুরতহাল করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। আগামীকাল ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে আক্তার শিকদারের লাশ হস্তান্তর করা হবে।’
আক্তার শিকদারের চাচাতো ভাই মিলন শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, তেরখাদা থানায় হওয়া একটি মামলায় আক্তার শিকদারসহ আরও ১০-১৫ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত তাঁদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে খুলনার কারাগারে ছিলেন আক্তার শিকদার।
মিলন শিকদার আরও বলেন, আক্তার শিকদারের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাঁর স্ত্রী ঢাকায় মেয়ের বাড়িতে ছিলেন। বেলা তিনটার দিকে ঘটনা শোনার পর তিনি খুলনার উদ্দেশে রওনা হন।
তেরখাদা থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের মোকামপুর বাজার খেয়াঘাট এলাকায় কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলালের গাড়িবহরে হামলা করা হয়। ওই ঘটনায় গত বছরের ৪ নভেম্বর রাতে উপজেলা বিএনপির সদস্য আজিজুল হাকিম বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে ২০৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন।
তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, কারাগারে যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তিনি এই মামলার আসামি ছিলেন। এই মামলায় জামিনের আবেদন করে তিনি কারাগারে গিয়েছিলেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষ চিন্তা করতে পারেনি, তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে: জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘আমাদের সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল, আমরাও তাদের সঙ্গে ছিলাম। তারা ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছে। এক বছর আগেও মানুষ চিন্তা করতে পারেনি যে তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু আজ সারা দেশের জনগণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং ইচ্ছেমতো কেড়েও নেন। তা আমরা জুলাই বিপ্লবে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি।’
আজ সোমবার সন্ধ্যায় খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘সহযোগী সদস্য সংগ্রহ অভিযান-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথাগুলো বলেন।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন নিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘২০১৪ সালে তারা ষড়যন্ত্র করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করেছিল। কেউ নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল ইতিহাসের আরেক কালো অধ্যায়। যেখানে রাতেই ভোট হয়ে গিয়েছিল। আর এসব নির্বাচনে হাসিনাকে সঙ্গ দিয়েছে জাতীয় পার্টি। আমরা একটা কালো যুগ পার করেছি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষের সব অধিকার হরণ করেছিল। মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। মানুষকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেয়নি। তারা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয়নি।’ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যারা হাত-পা হারিয়েছে, যারা নির্যাতিত হয়েছে, তারা কখনোই এসব খুনিকে ক্ষমা করবে না। খুনিদের বিচার করতে হবে এবং সব স্তরে সংস্কার করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে, যেখানে কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব থাকবে না। নির্বাচন জনগণের অধিকার। জনগণই তাঁদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যাঁরা নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার করতে চাইবেন, জনগণ তাঁদের প্রতিহত করবেন।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতার দম্ভে মানুষের ওপর লাগামহীন জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা না করে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জেল-জুলম, গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তারা মনে করেছিল যে তাদের এমন অপশাসন ও দুঃশাসন কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কিন্তু আল্লাহ জালিমদের ছাড় দিলেও ছেড়ে দেন না।’
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রসঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে, বেকারত্ব ও চাঁদাবাজি থাকবে না। যেখানে মা-বোনেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। আমরা সাম্যের ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
খানজাহান আলী থানা জামায়াতের আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও বায়তুল মাল সেক্রেটারি হাফেজ আমিনুল ইসলাম। গণসংযোগের সময় স্থানীয় মার্কেটের ব্যবসায়ী, পথচারী, স্থানীয় বাসিন্দা, গাড়িচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দাওয়াত দেওয়া হয়।