পীরগঞ্জে মা-মেয়ে হত্যায় গ্রেপ্তার আতিকুল তিন দিনের রিমান্ডে
Published: 10th, February 2025 GMT
রংপুরের পীরগঞ্জে মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আতিকুল ইসলামের (৩৫) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রোববার সন্ধ্যার দিকে তাঁকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায়। শুনানি শেষে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক আদালতে রিমান্ড আবেদন ও আতিকুলকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গতকাল রাত সাড়ে আটটায় ওই রিমান্ড আদেশ হাতে পেয়েছেন বলে জানান তিনি। গ্রেপ্তার আতিকুলের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের বদনাপাড়া গ্রামে।
থানা–পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দেলোয়ারা বেগমকে হত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আতিকুলকে গত শনিবার বিকেলে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে করতোয়া নদীর ধারে কাদামাটি চাপা দিয়ে রাখা দেলোয়ারার বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। দেলোয়ারার চার বছর বয়সের শিশু সায়মা দেড় মাস ধরে নিখোঁজ ছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আতিকুল জানিয়েছিলেন শিশু সায়মাকেও তিনি হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে তাঁর বাড়ির পাশে পুঁতে রেখেছেন। গতকাল সকালে মাটি খুঁড়ে পুলিশ শিশুটির পচে যাওয়া লাশ উদ্ধার করে। এরপর গতকাল দুপুরে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা গ্রেপ্তার আতিকুলের বসতবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুনপীরগঞ্জে মায়ের মাথা উদ্ধারের পর পাওয়া গেল দেড় মাস আগে নিখোঁজ মেয়ের লাশ১৯ ঘণ্টা আগেগত শুক্রবার দুপুরে পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের বড় বদনাপাড়া গ্রামের পাশে মরিচখেত থেকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে মাথাহীন এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে শনাক্ত হয় হত্যার শিকার ওই নারীর নাম দেলোয়ারা বেগম (৩০)। তিনি নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার পশ্চিম গোলমুন্ডা গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে। তাঁর বিয়ে হয়েছিল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে। পরে স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। আতিকুল ও দেলোয়ারা পরস্পরের পরিচিত। তাঁরা দুজন গ্রামগঞ্জে গানবাজনা করে বেড়াতেন।
পীরগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, আতিকুল ইসলামকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মা-মেয়েকে হত্যার প্রকৃত রহস্য জানা যাবে।
আরও পড়ুনপীরগঞ্জে মায়ের মাথা উদ্ধারের পর পাওয়া গেল দেড় মাস আগে নিখোঁজ মেয়ের লাশ১৯ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রগঞ জ জ র কর গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তানিয়া আমিরের বক্তব্য খণ্ডন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের
২০০৯ সালের বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) বিদ্রোহ নিয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমিরের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ সম্পর্কে তানিয়া আমিরের বক্তব্য, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে, তাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসেবে তার নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রতিফলিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রেস উইংয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ- সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস-এ পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। খবর বাসসের
প্রেস উইং বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের সত্য উদঘাটনে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলো উপস্থাপন করে। উদ্যোগগুলো হচ্ছে-
তদন্ত কমিশন
২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এএলএম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশন কয়েক ডজন সাক্ষীর (এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৭ জন, যার মধ্যে অফিসার, বিডিআর কর্মী এবং ভুক্তভোগীদের পরিবার অন্তর্ভুক্ত) সাক্ষ্য সংগ্রহ করেছে। এটি ‘ঘটনার প্রকৃত প্রকৃতি উন্মোচন’, সমস্ত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ এবং এমনকি যেকোনো দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র তদন্তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গোপনীয়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে কমিশন একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০০৯ সালের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য বা সাক্ষ্য থাকা যেকোনো ব্যক্তির কাছে তাদের ওয়েবসাইট বা ই-মেইলের মাধ্যমে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়।
সত্য উন্মোচনের অঙ্গীকার
স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পিলখানার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ পুনঃতদন্তের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, কমিশনের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কমিশন ইতোমধ্যেই কয়েক ডজন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করেছে এবং প্রয়োজনে তারা এমনকি শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের (যেমন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রাক্তন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ) ডাকবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার ‘প্রকৃত প্রকৃতি উন্মোচিত’ হবে, মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সম্ভাব্য সকল বিদেশী বা দেশীয় চক্রান্তের বিষয়টি খুঁজে দেখা হবে।
তথ্যের জন্য জনসাধারণের কাছে আবেদন
প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্বলিত যেকোনো নাগরিক বা সংস্থাকে তার ওয়েবসাইট বা ইমেলের মাধ্যমে এগিয়ে আসার জন্য কমিশন ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
এটি ১৬ বছর আগের একটি অপরাধের তদন্তের জটিলতা তুলে ধরে এবং তথ্যদাতাদের গোপনীয়তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে। যা সরকার বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে- তানিয়া আমিরের এমন দাবির বিপরীতে এটি স্বচ্ছ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ হওয়ার একটি আনুষ্ঠানিক প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।
আদালতের মামলা এবং মুক্তি
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, বিদ্রোহ-সম্পর্কিত মামলায় কয়েকশ’ সাবেক বিডিআর কর্মীকে জামিন দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে তানিয়া আমিরের অভিযোগ কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বন্দইদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। নিহত অফিসারদের পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানায় যে যারা সেনা অফিসারদের হত্যা করেছে তাদের সম্পূর্ণ মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। ইতিমধ্যে, বেঁচে যাওয়াদের পরিবারগুলো নতুন অভিযোগ দায়ের করেছে (যেমন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে নতুন করে বিক্ষোভের হুমকি দিয়েছে।
নিহতদের স্মরণ
অন্তর্বর্তী সরকার একই সঙ্গে নিহতদের সম্মান জানাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং পিলখানায় নিহত ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে ‘শহীদ’ মর্যাদা প্রদান করে।
প্রেস উইং জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমিরের সম্পৃক্ততা সুপরিচিত। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, তিনি এবং তার বাবা ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে সংসদীয় আসন কুষ্টিয়া-৩ এবং কুষ্টিয়া-৪ এর জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন, যা দলের সাথে সক্রিয় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত বহন করে।
‘তার পারিবারিক পটভূমি আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত: তার বাবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং পরিবার ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। যদিও তিনি স্বাধীনভাবে আইনি মামলা করেছেন, তবুও তাকে দলের রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানের সাথে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হিসেবে দেখা হয়।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে- এই সম্পৃক্ততার পরিপ্রেক্ষিতে, জেনেভা প্রেস ক্লাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে এবং ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তার সাম্প্রতিক মন্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, জেনেভা সম্মেলনে তানিয়া আমির এবং অন্যান্য বক্তারা কোনও নতুন প্রমাণ উদ্ধৃত করেননি; বরং, তারা বছরের পর বছর ধরে বিরোধী পক্ষগুলোর মধ্যে প্রচারিত দাবিগুলো (যেমন মৃত্যুর সংখ্যা, ক্ষতিপূরণ আইন, বন্দীদের মুক্তি) পুনরাবৃত্তি করেছেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।