ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর, দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও শেখ হাসিনাসহ নেতাকর্মীদের নামে মামলা প্রত্যাহার এবং হরতালের সমর্থনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মশাল মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিকে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্র ঘোষিত হরতাল ও মশাল মিছিলের খবর পেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা বিএনপি। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নেয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

সোমবার রাতে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের পাকুরতিয়া বাজার ও কুশলী ইউনিয়নের খালেক বাজারে মশাল মিছিল বের করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। যার দুইটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে মিছিলটিকে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করতেও দেখা যায়। এসময় নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত খ্যাত ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বাড়ি ভাঙচুর, দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, শেখ হাসিনাসহ নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হরতালের সমর্থনে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

ইউনুসের পদত্যাগের দাবিও জানান তারা।

অপরদিকে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্র ঘোষিত হরতাল ও মশাল মিছিলের প্রতিবাদে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতীর বাসস্ট্যান্ডের মাল্টিপারপাস পৌর সুপার মার্কেট ও ডুমুরিয়া ইউনিয়নের পাকুরতিয়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিলে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা রকম শ্লোগান দেওয়া হয়।

পরে পৌর মাল্টিপারপাস পৌর সুপার মার্কেটে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ সালাউদ্দিন ইসলাম, সদস্য সচিব মাহবুব হোসেন নাসির, যুবদলের আহ্বায়ক মুক্তার হোসেন, ছাত্রদলের আহ্বায়ক ঈসমাইল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কবিরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

এসময় বক্তারা আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্র ঘোষিত মশাল মিছিলকে প্রতিহত করা হবে। সেই সঙ্গে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সমাবেশ সফলভাবে শেষ করা হবে। আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি সফল হবে না।

এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদ আলম বলেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু লোক সীমান্ত এলাকায় মশাল মিছিল করেছে বলে শুনেছি। সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ সব সময় সজাগ আছে বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ আওয় ম ল গ ব এনপ ন ত কর ম দ র ন ত কর ম র ও সহয গ ব এনপ হরত ল আওয় ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ