কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। বালুচরে পড়ে আছে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা সামুদ্রিক একটি মা কাছিম। কাছিমের পিঠে দাঁড়িয়ে আছেন একজন তরুণ। আশপাশে বহু পর্যটক। এমন একটি ছবি আজ মঙ্গলবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিটি দেখে সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। ছবির পরিপার্শ্ব দেখে বোঝা যায় এটি কক্সবাজারের সুগন্ধা সৈকত। তবে এটি কখন তোলা হয়েছে, তা উল্লেখ নেই।

আজ সকালে এই ছবি দেখে একসঙ্গে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী পোস্ট করেন। সেখানে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন। আবদুল মান্নান নামের একজন লিখেছেন, ‘কখন মানুষ হব?’ রেজাউল করিম নামের একজনের মন্তব্য, ‘এর চেয়ে বাজে ছবি আর হয় না। বিবেকহীন।’

ছড়িয়ে পড়া ছবিটি দেখে কক্সবাজারের একাধিক পরিবেশবিজ্ঞানী এটি ‘অলিভ রিডলে’ প্রজাতির কাছিম বলে নিশ্চিত করেছেন। গভীর সাগরের হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই প্রজাতির মা কাছিম কক্সবাজার সৈকতে ছুটে আসে ডিম পাড়তে। প্রতিটি অলিভ রিডলে কাছিম ৬০-১২০টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। সমুদ্র পরিবেশ রক্ষার ঝাড়ুদার হিসেবে পরিচিত নিরীহ প্রজাতির এই কাছিমের পিঠে মানুষের দাঁড়িয়ে থাকার ছবি মানতে পারছেন না তাঁরা।

ছবিটিতে নির্দিষ্ট দিনক্ষণের উল্লেখ না থাকলেও পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এখন সামুদ্রিক কাছিমের প্রজনন ঋতু চলছে। সে কারণে মা কাছিম দলবেঁধে আসছে ডিম পাড়তে। কিছুদিন ধরে নৌযান, জেলেদের জাল, দূষণসহ নানা কারণে মারা পড়ছে মা কাছিম।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক মো.

জমির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজারের ডিম পাড়তে এসে সাগরে নিষিদ্ধ জলে আটকে বহু কাছিমের মৃত্যু হচ্ছে। জোয়ারের পানিতে কিছু মরা কাছিম সৈকতে ভেসে আসছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কত কাছিমের মৃত্যু হয়েছে অথবা সৈকতে ভেসে এসেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পরিবেশ অধিদপ্তরে নেই। সুগন্ধা পয়েন্টে কাছিমের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাটি অমানবিক। এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে কাছিমের পাড়া ডিম সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে সংরক্ষণের মাধ্যমে বাচ্চা ফোটানোর কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নেকম। নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপক ও মেরিন বায়োলজিস্ট আব্দুল কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, কাছিম নিরীহ প্রাণী, জীবিত হোক আর মৃত হোক, তার পিঠে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করার মতো বিবেকবিহীন কাজ আর হতে পারে না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি

শোবিজের একঝাঁক একঝাঁক অভিনয়শিল্পীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। প্রথমে ইরেশ যাকের, তারপর সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নিপুণসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গতকাল অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে রাজধানীর রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চর্চা চলছে। এ নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

সিদ্দিকের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনা ঘটনা নিয়ে আজাদ আবুল কালাম গণমাধ্যমে বলেন, “সিদ্দিকের সঙ্গে যা ঘটেছে, এটা তো মব। এই মব ভায়োলেন্সকে তো ঠেকাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে, মব ভায়োলেন্সকে নীরবে বলা হচ্ছে, করে যাও। আমাদের কিছুই করার নেই। একজনের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা থাকতে পারে। অভিনেতা হিসেবে সিদ্দিক সবার কাছে পরিচিত। কিছু লোক তাকে এভাবে রাস্তায় ধরে মেরে দেবে!”

প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আজাদ আবুল কালাম বলেন, “দলবদ্ধভাবে সিদ্দিককে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, আক্রমণ করেছে, গায়ে থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলেছে, এরপর থানায় সোপর্দ করেছে। থানায় যদি সোপর্দ করতেই হয়, তাহলে প্রথমে কেন আইন হাতে তুলে নিল? তাকে হেনস্তা করে আইনের হাতে তুলে দেবে— এই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এটা তো একটা সময় নানা স্তরে হবে। এসব কর্মকাণ্ড সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যেখানে মব ভায়োলেন্স, সেখানে কঠোর হস্তে দমন করবে।”

ঢালাওভাবে অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে বিস্মিত আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, সবাইকে মামলার মধ্যে ফেলতে হবে। ৩০০-৪০০ জন মামলার আসামি, এটা অবাস্তব একটা অবস্থা। একজন সুবর্ণা মুস্তাফার মতো শিল্পী রাস্তায় গিয়ে মানুষকে গুলি করবে? যে মানুষটি মামলা করেছেন, তিনি আন্দোলনের সময় আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন; তিনি মামলা করেছিলেন অনেক লোকের নামে। মামলার নথিতে শিল্পীদের অনেকের নাম দেখলাম, তারা রাস্তায় নেমে মানুষকে গুলি করবে!”

সরকারিভাবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা উচিত বলে মনে করেন আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, “সরকারিভাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা। নিরুৎসাহিত করা। যে ব্যক্তি মামলা করছেন, যদি প্রমাণিত হয়, শিল্পীরা কেউই গুলি করেনি, তখন তো এটা মিথ্যা মামলা হবে। এ রকম মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে, যে ব্যক্তি শিল্পীদের নামে মামলা করেছেন, তার কী শাস্তি হবে, তারও বিধান থাকতে হবে।”

“কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা জানানোর একটা প্রক্রিয়া আছে। শুধু শিল্পী না, একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনি তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত তাকে অপরাধী বলতে পারেন না। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে পারেন না। মামলা করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা শুরু করলেন, এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, এটাই যদি আমাদের মনস্তত্ত্ব হয়, তাহলে বিভক্তি আরো বাড়বে।” বলেন আবুল কালাম আজাদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
  • গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষ, হাতুড়িপেটায় একজন নিহত
  • সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি