গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া বোঝা কমাতেই অন্তর্বর্তী সরকারকে বেশি সময় দিতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, শুধু জ্বালানি খাতের আর্থিক বোঝাই বর্তমান সরকারকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে।

‘বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া: ক্লাইমেট পলিসি অ্যান্ড দ্য গ্রিন এনার্জি ট্রানজিশন’ শীর্ষক সংলাপে রিজওয়ানা হাসান এ কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে মঙ্গলবার এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সংলাপে সভাপতিত্ব করেন।

সংলাপে উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতির মানদণ্ডে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সব দেশের পদ্ধতি এক নয়। তাই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসা কিছু দেশের জন্য কঠিন হতে পারে। তবে কার্বন নিঃসরণে বেশি ভূমিকা রাখা দেশগুলোকেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বড় দায়িত্ব নিতে হবে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা আগের আমলের যে ঋণের ভার বহন করে চলেছি, সেটা অবিশ্বাস্য। টাকা ছাপিয়ে আমরা কিন্তু সেটা পরিশোধ করছি না। প্রবাসী ভাইদের পাঠানো রেমিট্যান্স দিয়েই এটা মেটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি। তবে প্রকল্প এনে টাকা পাচারের সংস্কৃতি বন্ধ করা গেছে।’ তিনি বলেন, সব ত্রুটিযুক্ত চুক্তি বাতিল করার দাবি আসতে পারে; কিন্তু এর অনেকগুলো আইনিভাবেই বৈধ। সে প্রক্রিয়া মাথায় রাখতে হচ্ছে। জ্বালানির চাহিদাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। বর্তমান আর্থিক অবস্থায় নতুন করে বড় বিনিয়োগের সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিজেরই তিন শূন্যের তত্ত্ব আছে। তাঁর মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নির্গমন একটি বড় লক্ষ্য। রূপান্তরের ধারাটা সূচনা করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই ভাবছে। তিনি বলেন, ‘কিছু জায়গায় আমরা কাজ করতে পারি। যেমন বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর জোর দিতে বলতে পারি। এ ছাড়া সেচের কাজগুলো যেন সৌরশক্তির মাধ্যমে করা হয়, সেটাও ভাবতে হবে। তবে সবচেয়ে জরুরি হলো টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (স্রেডা) প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করা। এসবই জাতীয় পর্যায়ের ব্যবস্থা।’

সংলাপে অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক দূত ক্রিস্টিন টিলি বলেন, অস্ট্রেলিয়াতেও জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর অর্থনীতি ছিল। কারণ, দেশটিতে প্রচুর কয়লা আছে। সম্প্রতি প্রচুর গ্যাসও যোগ হয়েছে। ফলে সস্তায় জ্বালানি পাওয়া যায়। এরপরও অস্ট্রেলিয়া সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণের দেশে পরিণত হওয়া এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া কয়লা ও গ্যাস রপ্তানি করে। এটাও পরিবর্তন হবে। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়া সহযোগিতা বাড়াতে চায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন, বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল বলেন, ‘আমাদের ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ জলবায়ুকেন্দ্রিক। আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও কাজ করে যেতে হবে। কারণ, এটা জরুরি। লক্ষ্যপূরণের সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে। অস্ট্রেলিয়ার সাহায্যে সেটা গতি পাবে।’

বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুসান রাইল। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক দূত নিয়োগের মাধ্যমে বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে জলবায়ু সমস্যা নিয়ে কাজ বৃদ্ধি করতে অস্ট্রেলিয়ার আগ্রহ স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু ও জ্বালানি নিয়ে কাজ করার ইতিহাসও দীর্ঘদিনের।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। প্রবন্ধ থেকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় অঞ্চলের দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সার্বিক জলবায়ু বিষয়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অস্ট্রেলিয়া এ বিষয়ে অনেক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ জলবায়ু নীতি অভিযোজন এবং প্রশমনবিষয়ক। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও জোরালোভাবে কাজ করতে হবে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতিবছরে ২২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। অথচ বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। ১৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। কার্বন নির্গমন কমাতে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিল থেকে জরুরি ভিত্তিতে ন্যায্য অংশ পাওয়ার আশা করে বাংলাদেশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট ক জ কর সরক র জলব য় র জলব

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৪ জুলাই এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আজ রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর এস এম মঈনুল করিম।

তিনি বলেন, আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমরা আশা করছি দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে পারব।

এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়  ৪ আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এদিন সকালে প্রিজনভ্যানে করে সাবেক এসআই আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

গত ৯ এপ্রিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ হত্যার ঘটনায় ৪ জনকে হাজির করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে ১৫ জুনের মধ্যে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ