জ্বালানি খাতের আর্থিক বোঝা বর্তমান সরকারকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে
Published: 18th, February 2025 GMT
গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া বোঝা কমাতেই অন্তর্বর্তী সরকারকে বেশি সময় দিতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, শুধু জ্বালানি খাতের আর্থিক বোঝাই বর্তমান সরকারকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে।
‘বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া: ক্লাইমেট পলিসি অ্যান্ড দ্য গ্রিন এনার্জি ট্রানজিশন’ শীর্ষক সংলাপে রিজওয়ানা হাসান এ কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে মঙ্গলবার এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সংলাপে সভাপতিত্ব করেন।
সংলাপে উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতির মানদণ্ডে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সব দেশের পদ্ধতি এক নয়। তাই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসা কিছু দেশের জন্য কঠিন হতে পারে। তবে কার্বন নিঃসরণে বেশি ভূমিকা রাখা দেশগুলোকেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বড় দায়িত্ব নিতে হবে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা আগের আমলের যে ঋণের ভার বহন করে চলেছি, সেটা অবিশ্বাস্য। টাকা ছাপিয়ে আমরা কিন্তু সেটা পরিশোধ করছি না। প্রবাসী ভাইদের পাঠানো রেমিট্যান্স দিয়েই এটা মেটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি। তবে প্রকল্প এনে টাকা পাচারের সংস্কৃতি বন্ধ করা গেছে।’ তিনি বলেন, সব ত্রুটিযুক্ত চুক্তি বাতিল করার দাবি আসতে পারে; কিন্তু এর অনেকগুলো আইনিভাবেই বৈধ। সে প্রক্রিয়া মাথায় রাখতে হচ্ছে। জ্বালানির চাহিদাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। বর্তমান আর্থিক অবস্থায় নতুন করে বড় বিনিয়োগের সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিজেরই তিন শূন্যের তত্ত্ব আছে। তাঁর মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নির্গমন একটি বড় লক্ষ্য। রূপান্তরের ধারাটা সূচনা করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই ভাবছে। তিনি বলেন, ‘কিছু জায়গায় আমরা কাজ করতে পারি। যেমন বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর জোর দিতে বলতে পারি। এ ছাড়া সেচের কাজগুলো যেন সৌরশক্তির মাধ্যমে করা হয়, সেটাও ভাবতে হবে। তবে সবচেয়ে জরুরি হলো টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (স্রেডা) প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করা। এসবই জাতীয় পর্যায়ের ব্যবস্থা।’
সংলাপে অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক দূত ক্রিস্টিন টিলি বলেন, অস্ট্রেলিয়াতেও জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর অর্থনীতি ছিল। কারণ, দেশটিতে প্রচুর কয়লা আছে। সম্প্রতি প্রচুর গ্যাসও যোগ হয়েছে। ফলে সস্তায় জ্বালানি পাওয়া যায়। এরপরও অস্ট্রেলিয়া সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণের দেশে পরিণত হওয়া এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া কয়লা ও গ্যাস রপ্তানি করে। এটাও পরিবর্তন হবে। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়া সহযোগিতা বাড়াতে চায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন, বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল বলেন, ‘আমাদের ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ জলবায়ুকেন্দ্রিক। আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও কাজ করে যেতে হবে। কারণ, এটা জরুরি। লক্ষ্যপূরণের সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে। অস্ট্রেলিয়ার সাহায্যে সেটা গতি পাবে।’
বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুসান রাইল। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক দূত নিয়োগের মাধ্যমে বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে জলবায়ু সমস্যা নিয়ে কাজ বৃদ্ধি করতে অস্ট্রেলিয়ার আগ্রহ স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু ও জ্বালানি নিয়ে কাজ করার ইতিহাসও দীর্ঘদিনের।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। প্রবন্ধ থেকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় অঞ্চলের দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সার্বিক জলবায়ু বিষয়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অস্ট্রেলিয়া এ বিষয়ে অনেক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ জলবায়ু নীতি অভিযোজন এবং প্রশমনবিষয়ক। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও জোরালোভাবে কাজ করতে হবে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতিবছরে ২২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। অথচ বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। ১৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। কার্বন নির্গমন কমাতে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিল থেকে জরুরি ভিত্তিতে ন্যায্য অংশ পাওয়ার আশা করে বাংলাদেশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট ক জ কর সরক র জলব য় র জলব
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫