১০ বছরের বেশি সময় ধরে জাপানে চামড়ার জুতা রপ্তানি করছে চট্টগ্রামের টি কে ফুটওয়্যার। জাপানি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে মাসে তারা ১৫-২০ হাজার জোড়া চামড়ার জুতা রপ্তানি করছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে নজর দিচ্ছে টি কে গ্রুপ। এ জন্য গঠন করা হয়েছে রিফ ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস নামে নতুন কোম্পানি। এই কোম্পানির অধীনে দেশের বাজারে রিফ ব্র্যান্ডের চামড়ার জুতা বিক্রি করবে তারা।

সে জন্য গ্রুপটির পক্ষ থেকে আজ বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তেজকুনীপাড়ায় বিক্রয়কেন্দ্র চালু করতে যাচ্ছে। ৯৫০ বর্গফুট আয়তনের এই বিক্রয়কেন্দ্রে নারী, পুরুষ ও বাচ্চাদের জুতা পাওয়া যাবে।

জানা যায়, দেশের বাজারে জুতার ব্র্যান্ড চালুর অংশ হিসেবে গত বছর চট্টগ্রামের চান্দগাঁও ও কালুরঘাট এলাকায় দুটি বিক্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়। সেখানে ভালো সাড়া পাওয়ায় নতুন করে তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেয় তারা। তার মধ্যে একটি আজ ঢাকায় চালু হচ্ছে। তারপরই চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স এবং নাসিরাবাদে আরও দুটি বিক্রয়কেন্দ্র চালু করা হবে।

আমরা পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় বাজারে জুতার ব্যবসা শুরু করেছি। ভালো সাড়া পেলে আরও বড় আকারে এ ব্যবসা সম্প্রসারণে যাবমোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার, পরিচালক, টি কে গ্রুপ

চামড়ার ব্যবসায় রিফ লেদারের অভিজ্ঞতা তিন দশকের। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকায় ট্যানারি স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটি। সেই কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া বিদেশে রপ্তানি হয়। রিফ লেদার ২০১৯ সালে কাঁচা চামড়া থেকে ফিনিশড ধাপ পর্যন্ত কাজের জন্য বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ পায়। বাংলাদেশের সাতটি এলডব্লিউজি সনদ পাওয়া কারখানার একটি রিফ লেদার।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে রিফ লেদার ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ বর্গফুট চামড়া রপ্তানি করে। তাদের ৯-১০টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ইউরোপের। গত বছর তারা ১০০ কোটি টাকার চামড়া রপ্তানি করে।

জুতার দেশীয় বাজার

ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রুচির পরিবর্তন ও মানের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হওয়ায় ব্র্যান্ডের জুতার প্রতি ঝুঁকছে দেশের মানুষ। সে জন্য ব্র্যান্ডের জুতার বিক্রি প্রতিবছর ১২-১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। তাই নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এ ব্যবসায় নামছে। এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ নাম রিফ ফুটওয়্যার।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্যানুযায়ী, দেশে বার্ষিক জুতার চাহিদা ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটি জোড়া। চাহিদার ৪০ শতাংশ জুতা বিদেশ থেকে আমদানি হয়। সারা দেশে ছোট-বড় ৬ হাজার ২০০ জুতা ও চামড়াপণ্যের কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে আড়াই হাজার জুতা তৈরির কারখানা।

জুতার ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, জুতার স্থানীয় বাজারের ৩০ শতাংশ ব্র্যান্ডের জুতার দখলে। বাকিটা নন-ব্র্যান্ড, আঞ্চলিক ব্র্যান্ড ও আমদানি করা জুতার দখলে। আগে জুতার ব্যবসা উৎসবকেন্দ্রিক থাকলেও বর্তমানে সারা বছর কম-বেশি জুতা বিক্রি হয়। তারপরও সারা বছরের বিক্রির ২৫-৩০ শতাংশ হয়ে থাকে ঈদুল ফিতরে। ব্র্যান্ডের জুতার ব্যবসায় শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে বাটা, অ্যাপেক্স ও লোটো।

রিফে থাকবে যেসব জুতা

রিফ ব্র্যান্ডে এখন কেবল চামড়ার জুতা পাওয়া যাবে। উচ্চ, মধ্যম ও সাশ্রয়ী দামের জুতা থাকবে। অধিকাংশ জুতা উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব রিফ লেদারের কারখানার চামড়া ব্যবহার করার কথা জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, চট্টগ্রামের কালুরঘাটে অবস্থিত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান টি কে ফুটওয়্যারের কারখানার একটি ইউনিটে আপাতত স্থানীয় বাজারের জন্য জুতা তৈরি হচ্ছে।

জানতে চাইলে রিফ লেদারের পরিচালক মো.

মখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের জুতার চাহিদার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আমদানি করে মেটাতে হয়। সে জন্য আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জুতার ব্র্যান্ড গড়তে চেয়েছি। আমরা ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে জুতা সরবরাহ করতে চাই।’

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে দেশে যখন সয়াবিন তেল জনপ্রিয় হতে শুরু করে, তখন সয়াবিন তেল পরিশোধনের কারখানা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন দুই ভাই। সরকার থেকে লাইসেন্স বা নিবন্ধন নিয়ে কালুরঘাটে গড়ে তোলেন টি কে অয়েল রিফাইনারি। দেশে শিল্পায়ন শুরুর প্রথম ধাপে কারখানাটি সাফল্য এনে দেয় দুই ভাইকে। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব ও মোহাম্মদ আবুল কালাম। দুই ভাইয়ের নামের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি হয় টি কে (তৈয়ব-কালাম) গ্রুপ। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রুপে ভোজ্যতেল, ভোগ্যপণ্য, ঢেউটিন, পার্টিকেল বোর্ড, ট্যানারি, পেপারসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে।

টি কে গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় বাজারে জুতার ব্যবসা শুরু করেছি। ভালো সাড়া পেলে আরও বড় আকারে এ ব্যবসা সম্প্রসারণে যাব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ক রয়ক ন দ র চ ল জ ত র ব যবস ফ টওয় য র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের

ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে  বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ