মিসর ও জর্ডান মনে করছে, তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর গাজা দখলের পরিকল্পনা থেকে নিরস্ত করতে সফল হয়েছেন। তিনি শুধু গাজা দখল নয়, সেখানকার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিতে চান।

মিসরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, তাঁদের প্রস্তাবিত গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী বিকল্প পরিকল্পনা সম্পর্কে ট্রাম্পকে জানানো হয়েছে। এতে তাঁদের সায় আছে বলে মনে হচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, আরব বিশ্বের সমর্থনে মিসর গাজা নিয়ে একটি বিকল্প পরিকল্পনা তৈরির কাজ করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিসরের ওই কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার বলেন, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ওয়াশিংটন সফরকালে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ করেন। এই পরিকল্পনায় ট্রাম্পকে রাজি করানোর ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কায়রো ও আরব বিশ্ব ট্রাম্পের সঙ্গে জর্ডানের বাদশাহর বৈঠককে প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছে।

মিসরের ওই কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে দারুন ফলাফল এসেছে।

ট্রাম্পের গাজা উপত্যকা দখলের প্রস্তাব নিয়ে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ প্রকাশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কোনো সমালোচনা করেননি। তবে মিসরের কর্মকর্তা বলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহ ট্রাম্পের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তাঁকে সতর্ক করে বলেছেন, তাঁর এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে ‘ইসলামি উগ্রপন্থাকে’ উসকে দিতে পারে। তাতে হিতে বিপরীত হবে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষের সরকারগুলো টালমাটাল অবস্থায় পড়ে যেতে পারে।

মিসরের কর্মকর্তা আরও বলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহর বক্তব্য খুব ‘মনোযোগ সহকারে এবং সহানুভূতির’ সঙ্গে শোনেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

পুনর্গঠনের বিনিময়ে জিম্মিদের মুক্তি

ট্রাম্পের সঙ্গে বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর বৈঠকের সুফলকে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি মিসর। তারা আরও জীবিত ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করতে গাজার ক্ষসতাসীন হামাসের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যায়। এতে সাফল্যও আসে। অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে আরও পাকাপোক্ত করতে এই জিম্মি মুক্তি বেশ কাজে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মিসরের কর্মকর্তা বলেন, হামাস মিসরের জিম্মি মুক্তির প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। তবে এতে তাদেরও একটি শর্ত বাস্তবায়ন হতে চলেছে। বিনিময়ে গাজার পুনর্গঠনে ভারী যন্ত্রপাতি উপত্যকায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল।

পাশাপাশি ইসরায়েল গাজায় ভ্রাম্যমাণ বাড়ি ঢোকারও অনুমতি দিয়েছে। এসব ভ্রাম্যমাণ বাড়ি গাজায় ঢুকতে গেলে ইতিপূর্বে বাধা দিয়েছিল ইসরায়েল। এর আগে হামাস অভিযোগ তুলেছিল, ইসরায়েল গাজায় খাদ্যসহায়তা ঢুকতে না দিয়ে অস্ত্রবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করছে। এ জন্য জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছিল তারা।

মিসরের কর্মকর্তা বলেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি আগামীকাল বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ সফরে যেতে পারেন। গাজা যুদ্ধ-পরবর্তী সরকার কেমন হবে, সেটা নিয়ে তিনি সেখানে আলোচনা করবেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রথমে সিসির সৌদি সফর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

ট্রাম্পের গাজা দখল এবং সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের প্রস্তাব ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্বে সমালোচনা শুরু হয়েছিল। ট্রাম্পের এমন বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্রদেরও হতাশ করেছিল। তারা মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা এবং গাজায় ব্যাপক ইসরায়েলি আগ্রাসনের আশঙ্কা করছিল।

গাজা উপত্যকার রাফার ক্রসিংয়ের মিসর অংশে সারি করে রাখা হয়েছে ভারী নির্মাণ যন্ত্রপাতি। ১৩ ফেব্রুয়ারি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ ইসর য় ল ব দশ হ

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়াতের পর এবার সমাবেশে অংশ নিতে বিশেষ ট্রেন ভাড়া ছাত্রদলের

জামায়াতে ইসলামীর পর এবার বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৩ আগস্ট ছাত্র সমাবেশে অংশ নিতে প্রায় ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রাম ছাত্রদল ২০ বগির এই বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে।  

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩ আগস্ট ছাত্র সমাবেশ করবে ছাত্রদল।

এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ২০ বগির একটি বিশেষ ট্রেনের জন্য আবেদন করা হয়। ছাত্রদলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ রেলওয়ে। আগামী রোববার সকাল সোয়া ৭টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে এই ট্রেন ছেড়ে যাবে। আর ঢাকায় পৌঁছাবে বেলা সোয়া ১টায়। এই ট্রেন সন্ধ্যা সাতটায় আবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০ বগির ট্রেনটিতে ১ হাজার ১২৬টি আসন রয়েছে। বিশেষ ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলওয়ের চট্টগ্রাম, ঢাকা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তৌষিয়া আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেল ভবনের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই কারণে নিয়মিত ট্রেন চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না।

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন,  এই ট্রেনে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার প্রায় দেড় হাজার নেতা-কর্মী যাবেন। সবাই একসঙ্গে যেতে চাওয়ায় ট্রেন ভাড়া করেছেন। বাসে হলে তা সম্ভব ছিল না।

এর আগে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করেছিল জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশে নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম থেকে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করে দলটি। এই চার ট্রেন ভাড়া করতে দলটিকে গুনতে হয়েছে প্রায় ৩২ লাখ টাকা।

জামায়াতের ট্রেন ভাড়া করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ ট্রেন পরিচালনায় স্বাভাবিক নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ