ডোনাল্ড ট্রাম্প কি তাহলে গাজা দখলের পরিকল্পনা থেকে সরে আসছেন
Published: 19th, February 2025 GMT
মিসর ও জর্ডান মনে করছে, তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর গাজা দখলের পরিকল্পনা থেকে নিরস্ত করতে সফল হয়েছেন। তিনি শুধু গাজা দখল নয়, সেখানকার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিতে চান।
মিসরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, তাঁদের প্রস্তাবিত গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী বিকল্প পরিকল্পনা সম্পর্কে ট্রাম্পকে জানানো হয়েছে। এতে তাঁদের সায় আছে বলে মনে হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আরব বিশ্বের সমর্থনে মিসর গাজা নিয়ে একটি বিকল্প পরিকল্পনা তৈরির কাজ করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিসরের ওই কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার বলেন, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ওয়াশিংটন সফরকালে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ করেন। এই পরিকল্পনায় ট্রাম্পকে রাজি করানোর ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কায়রো ও আরব বিশ্ব ট্রাম্পের সঙ্গে জর্ডানের বাদশাহর বৈঠককে প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছে।
মিসরের ওই কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে দারুন ফলাফল এসেছে।
ট্রাম্পের গাজা উপত্যকা দখলের প্রস্তাব নিয়ে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ প্রকাশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কোনো সমালোচনা করেননি। তবে মিসরের কর্মকর্তা বলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহ ট্রাম্পের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তাঁকে সতর্ক করে বলেছেন, তাঁর এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে ‘ইসলামি উগ্রপন্থাকে’ উসকে দিতে পারে। তাতে হিতে বিপরীত হবে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষের সরকারগুলো টালমাটাল অবস্থায় পড়ে যেতে পারে।
মিসরের কর্মকর্তা আরও বলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহর বক্তব্য খুব ‘মনোযোগ সহকারে এবং সহানুভূতির’ সঙ্গে শোনেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
পুনর্গঠনের বিনিময়ে জিম্মিদের মুক্তি
ট্রাম্পের সঙ্গে বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর বৈঠকের সুফলকে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি মিসর। তারা আরও জীবিত ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করতে গাজার ক্ষসতাসীন হামাসের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যায়। এতে সাফল্যও আসে। অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে আরও পাকাপোক্ত করতে এই জিম্মি মুক্তি বেশ কাজে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মিসরের কর্মকর্তা বলেন, হামাস মিসরের জিম্মি মুক্তির প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। তবে এতে তাদেরও একটি শর্ত বাস্তবায়ন হতে চলেছে। বিনিময়ে গাজার পুনর্গঠনে ভারী যন্ত্রপাতি উপত্যকায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল।
পাশাপাশি ইসরায়েল গাজায় ভ্রাম্যমাণ বাড়ি ঢোকারও অনুমতি দিয়েছে। এসব ভ্রাম্যমাণ বাড়ি গাজায় ঢুকতে গেলে ইতিপূর্বে বাধা দিয়েছিল ইসরায়েল। এর আগে হামাস অভিযোগ তুলেছিল, ইসরায়েল গাজায় খাদ্যসহায়তা ঢুকতে না দিয়ে অস্ত্রবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করছে। এ জন্য জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছিল তারা।
মিসরের কর্মকর্তা বলেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি আগামীকাল বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ সফরে যেতে পারেন। গাজা যুদ্ধ-পরবর্তী সরকার কেমন হবে, সেটা নিয়ে তিনি সেখানে আলোচনা করবেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রথমে সিসির সৌদি সফর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
ট্রাম্পের গাজা দখল এবং সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের প্রস্তাব ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্বে সমালোচনা শুরু হয়েছিল। ট্রাম্পের এমন বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্রদেরও হতাশ করেছিল। তারা মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা এবং গাজায় ব্যাপক ইসরায়েলি আগ্রাসনের আশঙ্কা করছিল।
গাজা উপত্যকার রাফার ক্রসিংয়ের মিসর অংশে সারি করে রাখা হয়েছে ভারী নির্মাণ যন্ত্রপাতি। ১৩ ফেব্রুয়ারি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ ইসর য় ল ব দশ হ
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।