বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে টেক্কা দিয়ে আইসিবির কাজ পেল কোয়ান্ট ফিনটেক
Published: 19th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে টেক্কা দিয়ে সরকারী বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোং লিমিটেডের কাজ পেয়েছে দেশি প্রতিষ্ঠান কোয়ান্ট ফিনটেক লিমিটেড। কোয়ান্ট ফিনটেক লিমিটেডের তৈরি করা ওএমএস (অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) দিয়ে তাদের গ্রাহকদের সেবা দিবে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি।
আজ (১৯, ফেব্রুয়ারি) প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে এই সংক্রান্ত একটি চুক্তি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইসিবির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চুক্তিতে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সই করেন আইসিবি সিকিউরিটিজ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোঃ মফিজুর রহমান এবং কোয়ান্ট ফিনটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার নাতেক মিনার। এ সময়ে আরও উপস্থিতি ছিলেন, আইসিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান মো: আবুল হোসেন, কোয়ান্ট ফিনটেকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মোঃ জাবেদ হোসেন সহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চুক্তি অনুযায়ী, আইসিবি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের গ্রাহকদের ডিএসই ও সিএসই তে লেনদেন সম্পাদনের জন্য স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ব্যবস্থা করে দিবে। এর ফলে গ্রাহকরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে স্টক এক্সচেঞ্জে সরাসরি ট্রেডে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
আইসিবি সিকিউরিটিজ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোঃ মফিজুর রহমান বলেন, গ্রাহকদের আরও সুন্দর পরিসরে সেবা দিতে আমরা নিজস্ব ট্রেডিং প্লাটফর্ম ওএমএস (অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) চালু করতে যাচ্ছি। ওএমএস এর জন্য পর্ষদ থেকে একটি কমিটি করে দিয়েছিলো, কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলো, আইসিবি,ডিএসই,বুয়েটের ও বিসিসির প্রতিনিধিরা। আমাদের পর্ষদের একটি চাওয়া ছিলো কাজটি যাতে দেশি প্রতিষ্ঠান পায় এবং একই সাথে সব ধরণের মান যাতে ঠিক থাকে। এরই অংশ হিসেবে আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন পেয়েছি। আবদেনগুলো যাচাই-বাছাই করে চারটি প্রতিষ্ঠানের নাম পর্ষদের পাঠানো হয়। সেখান সবাইকে ডেকে সব বিষয়ে জানার চেষ্টা করে পর্ষদ। পরে সব দিক থেকে প্রথম স্থান অর্জন করে দেশি প্রতিষ্ঠান কোয়ান্ট ফিনটেকে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের কাস্টমারকে সর্বোৎকৃষ্ট সেবা দিতে চাই এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের ইন্টিগ্রেটেড প্লাটফর্মে যাতে সহজেই কাস্টমারগণ এক ক্লিকে প্রবেশ করতে পারে সে জন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, তাদের টেকনোলজি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আর আমাদের বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটের অভিজ্ঞতা দিয়ে একযোগে কাজ করলে এই প্ল্যাটফর্ম শুধুমাত্র আমাদের গ্রাহকদেরই জন্য না সমগ্র ক্যাপিটাল মার্কেটে একটা পজিটিভ ইমপ্যাক্ট রাখতে পারবে, এছাড়াও আমাদের কিছু গ্রাহক বান্ধব ফিচার নিয়ে কাজ করছি যা সামগ্রিকভাবে আমাদের গ্রাহকসেবার মান বহুগুণে বাড়িয়ে দিবে সাথে বিনিয়োগের জন্য ইনফর্মড ডিসিশন নিতে সাহায্য করবে যা কিনা নতুন অনেক বিনিয়োগকারীকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করবে।
কোয়ান্ট ফিনটেকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মোঃ জাবেদ হোসেন বলেন, সরকারী একমাত্র বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পেরে আনন্দিত। আমরা সঠিক সময়ে তাদের কাজ বুঝিয়ে দিবো। আমি আশা করছি যে আমাদের উভয় পক্ষের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে এবং এটি একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে যে আমরা দেশি একটি ওএমএস প্রোভাইডার সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলাম। এটা দেখে হয়তবা উদাহরণ স্বরুপ আরও অনেকে আমাদের সাথে যুক্ত হবেন।
.উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: গ র হকদ র ক জ কর আম দ র টফর ম আইস ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’