ভিসাধারীদের জন্য বড় পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা জানা জরুরি
Published: 21st, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রদপ্তর ভিসা ইন্টারভিউ মওকুফ কর্মসূচি (ড্রপবক্স প্রক্রিয়া) নীতিতে বড় পরিবর্তন ঘোষণা করেছে। যা মহামারীর আগে প্রযোজ্য যোগ্যতার মানদণ্ডে ফিরে যাচ্ছে। গতকোল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই পরিবর্তন কার্যকর হয়েছে। এর অর্থ হলো অনেক অ-অভিবাসী ভিসাধারীরা, যারা আগে সাক্ষাৎকার ছাড়াই ভিসার জন্য যোগ্য ছিলেন, এখন থেকে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎকার দিতে হতে পারে।
যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে
এখন থেকে ভিসা নবায়নের জন্য আবেদনকারীদের পূর্ববর্তী ১২ মাসের মধ্যে বৈধ ভিসা থাকতে হবে, যা আগে ছিল ৪৮ মাস পর্যন্ত।
কেবল নির্দিষ্ট ভিসা ক্যাটাগরি যেমন কূটনৈতিক (এ-১, এ-২), সরকারি কর্মকর্তা (জি-১ থেকে জি-৪, ন্যাটো ভিসা) এবং ১২ মাসের মধ্যে একই ক্যাটাগরির ভিসা নবায়নকারীরা সাক্ষাৎকার ছাড়াই ড্রপবক্স সুবিধা পাবেন।
যারা নতুন নিয়মের আওতায় পড়বেন না, তাদের মার্কিন কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে, যা দীর্ঘ প্রসেসিং টাইমের কারণ হতে পারে।
পরিবারভিত্তিক ভিসা (এইচ-৪, এল-২ ইত্যাদি) নবায়নে প্রধান আবেদনকারী এবং নির্ভরশীলদের মধ্যে যোগ্যতার পার্থক্য থাকলে ভ্রমণের বিলম্ব হতে পারে।
এইচ-১বি, বি-১/বি-২ ছাড়াও অন্যান্য ভিসা ক্যাটাগরির জন্য সাক্ষাৎকার মওকুফের সুযোগ সংকুচিত করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘ ভিসা প্রক্রিয়া ও সাক্ষাৎকারের অপেক্ষা বাড়তে পারে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
মার্কিন সরকার নির্দিষ্ট অ-অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীদের জন্য ইন্টারভিউ মওকুফ কর্মসূচির (ড্রপবক্স প্রক্রিয়া) মাধ্যমে সাক্ষাৎকার ছাড়াই তাদের ভিসা নবায়নের অনুমতি দিয়েছিল। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল ভিসা নবায়নের প্রক্রিয়া দ্রুত করা এবং মার্কিন কনস্যুলেটে সরাসরি সাক্ষাৎকারের সংখ্যা কমানো। ৪৮ মাসের যোগ্যতার সময়সীমার মাধ্যমে আরও বেশি আবেদনকারী সাক্ষাৎকার ছাড়াই তাদের ভিসা নবায়ন করতে পারতেন।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাইডেন প্রশাসন কর্মসূচিটি সম্প্রসারণ করেছিল। কনস্যুলার কর্মকর্তাদের প্রথমবারের মতো এইচ-২ ভিসার আবেদনকারীদের (অস্থায়ী কৃষি ও অ-কৃষি কর্মী) জন্য ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার মওকুফের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
অন্যান্য অ-অভিবাসী ভিসার আবেদনকারীরাও যোগ্য ছিলেন যদি তারা আগে কোনো অ-অভিবাসী ভিসা পেয়ে থাকেন (তবে শুধুমাত্র বি ভিসা থাকলে এটি প্রযোজ্য নয়) বা যদি তারা তাদের সর্বশেষ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪৮ মাসের মধ্যে আবেদন করতেন।
মার্কিন ভিসাধারীদের জন্য কী পরিবর্তন আসছে?
ট্রাম্প প্রশাসন ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ড্রপবক্স প্রক্রিয়ার যোগ্যতার মানদণ্ড মহামারীর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো, ভিসা নবায়নকারী আবেদনকারীদের এখন সাক্ষাৎকার মওকুফের জন্য পূর্ববর্তী ১২ মাসের মধ্যে বৈধ ভিসা থাকতে হবে, যা আগে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ৪৮ মাস পর্যন্ত ছিল।
এছাড়াও কেবল নির্দিষ্ট ভিসা ক্যাটাগরিগুলো—যেমন কূটনৈতিক (এ-১, এ-২), সরকারি কর্মকর্তা (জি-১ থেকে জি-৪, ন্যাটো ভিসা) এবং আগের ভিসার একই ক্যাটাগরির জন্য ১২ মাসের মধ্যে নবায়নকারীরা—এই সুবিধার জন্য যোগ্য হবেন। এই পরিবর্তনের ফলে আবেদনকারীরা এখন ভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসার জন্য ড্রপবক্স ব্যবহার করতে পারবেন না।
বিশ্বের বিভিন্ন মার্কিন দূতাবাস স্বীকার করেছে যে এই পরিবর্তন ‘কিছু ভিসার অপেক্ষার সময় দীর্ঘ করতে পারে’ এবং যারা নতুন নিয়মের আওতায় পড়ছেন না, তাদের এখন মার্কিন কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে, যা প্রক্রিয়ার দেরি করতে পারে।
পারিবারিক ভিত্তিক ভিসাধারীদের ওপর প্রভাব কী হবে?
এইচ-১বি (এইচ-৪), এল-১ (এল-২) এবং অন্যান্য অ-অভিবাসী কর্মসংস্থান ভিসাধারীদের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদেরও সাক্ষাৎকার মওকুফের জন্য নতুন ১২ মাসের নবায়ন সময়সীমা পূরণ করতে হবে। পূর্বে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪৮ মাসের মধ্যে হলে তারা সাক্ষাৎকার ছাড়াই ড্রপবক্স প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারতেন।
এই পরিবর্তন একসঙ্গে ভ্রমণকারী পরিবারগুলোর জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, মূল আবেদনকারী এবং নির্ভরশীলদের যোগ্যতার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকলে দেরি হতে পারে। যদি কোনো নির্ভরশীল ব্যক্তি ১২ মাসের নিয়ম পূরণ না করতে পারে। তবে তাদের ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে হতে পারে, যা ভ্রমণের আরও বিলম্ব সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া যারা আগে ভিসা প্রত্যাখ্যান বা প্রশাসনিক পর্যালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের জন্য সাক্ষাৎকার ছাড়া ভিসা নবায়ন করা আরও কঠিন হতে পারে।
এইচ-১বি ভিসাধারীদের ওপর প্রভাব কী হবে?
এইচ-১বি ভিসাধারীরা নতুন ভিসা ইন্টারভিউ মওকুফ (ড্রপবক্স) যোগ্যতার নিয়ম দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হবেন। নতুন নীতির অধীনে, এইচ-১বি আবেদনকারীদের অবশ্যই: একই ক্যাটাগরির ভিসা নবায়ন করতে হবে (এইচ-১বি থেকেএইচ-১বি )। তাদের পূর্ববর্তী ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ১২ মাসের মধ্যে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে (পূর্বে ৪৮ মাস ছিল)।
তাদের নিজ দেশের নাগরিকত্ব বা বাসস্থানের দেশ থেকে আবেদন করতে হবে। পূর্বে কোনো ভিসা প্রত্যাখ্যান বা অযোগ্যতার সমস্যা থাকা যাবে না।
যদি কোনো এইচ-১বি ভিসাধারী এই শর্তগুলো পূরণ করতে না পারেন, তাহলে তাকে মার্কিন কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে হবে, যা সময়সূচি নির্ধারণে বিলম্ব ঘটাতে পারে।
এই পরিবর্তন এইচ-১বি পেশাজীবীদের ভ্রমণ পরিকল্পনাকে ব্যাহত করতে পারে, বিশেষ করে যারা তাদের নিজ দেশে ভিসা নবায়নের পরিকল্পনা করেছিলেন। ভারতের মতো দেশগুলোতে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার সময়সীমা অতিরিক্ত কাজ ও ভ্রমণের বিঘ্ন ঘটাতে পারে, যার ফলে এইচ-১বি ভিসাধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজে ফিরে যাওয়ার সময় দেরি হতে পারে।
বি-১ পর্যটন ভিসাধারীদের ওপর প্রভাব কী হবে?
বি-১/বি-২ পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভিসাধারীরাও নতুন নিয়ম দ্বারা প্রভাবিত হবেন। নতুন নীতির অধীনে কেবলমাত্র যারা তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ১২ মাসের মধ্যে একই ক্যাটাগরির ভিসা নবায়ন করবেন, তারাই সাক্ষাৎকার মওকুফের জন্য যোগ্য হবেন। পূর্বে ৪৮ মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসাধারীরা ড্রপবক্স প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারতেন, যা অপেক্ষার সময় ও কনস্যুলেট পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছিল।
এই পরিবর্তনের ফলে অনেক বি-১/বি-২ ভিসাধারীরা যারা নতুন নিয়মের আওতায় আসছেন না, তাদের এখন মার্কিন কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে।
আপনার করণীয়
যদি আপনি ভিসা নবায়ন করতে চান, তাহলে নতুন নিয়ম অনুসারে আপনার যোগ্যতা যাচাই করুন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন। নতুন পরিবর্তনের কারণে সাক্ষাৎকারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার সম্ভাবনা থাকায় পরিকল্পনামাফিক আবেদন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র ক ন কনস য ল ট ন র ভরশ ল দ শ ষ হওয র র জন য য গ যত র ৪৮ ম স র র য গ যত দ র জন য র সময স ন করত ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ৪টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। শুধু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় বিএনপির জাতীয় স্থানীয় কমিটির একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আজহরুল ইসলাম মান্নান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ মাসুদুজ্জামান মাসুদ ধানের শীষ প্রতীকের সম্ভাব্য প্রার্থী।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে (সদর-বন্দর) মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, বর্তমান সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু এবং বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনটি এখনো ফাঁকা রেখেছে দলটি। ধারণা করা হচ্ছে এ আসনটিতে গতবারের মতো জোটের প্রার্থী ছাড় পাবেন। তবে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী শাহ্ আলম, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া, সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীও রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও যুব উন্নয়নের সাবেক মহাপরিচালক এসএম ওলিউর রহমান আপেল।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁন আঙ্গুর ও তার ভাতিজা বিএনপির সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জে) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন।
এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৮ আসনে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছি। আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলন করেছেন, তারা যে সমস্ত আসনে আগ্রহী সে সমস্ত আসনে প্রার্থী দেই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষণা করবো। এটা আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা, এর মধ্যেই পরিবর্তন হতে পারে।
বিশেষ করে, আমাদের শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনা এবং স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে কোনো আসনে পরিবর্তন আনবে, সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে পরিবর্তন আনবেন।”