ভিসাধারীদের জন্য বড় পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা জানা জরুরি
Published: 21st, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রদপ্তর ভিসা ইন্টারভিউ মওকুফ কর্মসূচি (ড্রপবক্স প্রক্রিয়া) নীতিতে বড় পরিবর্তন ঘোষণা করেছে। যা মহামারীর আগে প্রযোজ্য যোগ্যতার মানদণ্ডে ফিরে যাচ্ছে। গতকোল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই পরিবর্তন কার্যকর হয়েছে। এর অর্থ হলো অনেক অ-অভিবাসী ভিসাধারীরা, যারা আগে সাক্ষাৎকার ছাড়াই ভিসার জন্য যোগ্য ছিলেন, এখন থেকে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎকার দিতে হতে পারে।
যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে
এখন থেকে ভিসা নবায়নের জন্য আবেদনকারীদের পূর্ববর্তী ১২ মাসের মধ্যে বৈধ ভিসা থাকতে হবে, যা আগে ছিল ৪৮ মাস পর্যন্ত।
কেবল নির্দিষ্ট ভিসা ক্যাটাগরি যেমন কূটনৈতিক (এ-১, এ-২), সরকারি কর্মকর্তা (জি-১ থেকে জি-৪, ন্যাটো ভিসা) এবং ১২ মাসের মধ্যে একই ক্যাটাগরির ভিসা নবায়নকারীরা সাক্ষাৎকার ছাড়াই ড্রপবক্স সুবিধা পাবেন।
যারা নতুন নিয়মের আওতায় পড়বেন না, তাদের মার্কিন কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে, যা দীর্ঘ প্রসেসিং টাইমের কারণ হতে পারে।
পরিবারভিত্তিক ভিসা (এইচ-৪, এল-২ ইত্যাদি) নবায়নে প্রধান আবেদনকারী এবং নির্ভরশীলদের মধ্যে যোগ্যতার পার্থক্য থাকলে ভ্রমণের বিলম্ব হতে পারে।
এইচ-১বি, বি-১/বি-২ ছাড়াও অন্যান্য ভিসা ক্যাটাগরির জন্য সাক্ষাৎকার মওকুফের সুযোগ সংকুচিত করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘ ভিসা প্রক্রিয়া ও সাক্ষাৎকারের অপেক্ষা বাড়তে পারে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
মার্কিন সরকার নির্দিষ্ট অ-অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীদের জন্য ইন্টারভিউ মওকুফ কর্মসূচির (ড্রপবক্স প্রক্রিয়া) মাধ্যমে সাক্ষাৎকার ছাড়াই তাদের ভিসা নবায়নের অনুমতি দিয়েছিল। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল ভিসা নবায়নের প্রক্রিয়া দ্রুত করা এবং মার্কিন কনস্যুলেটে সরাসরি সাক্ষাৎকারের সংখ্যা কমানো। ৪৮ মাসের যোগ্যতার সময়সীমার মাধ্যমে আরও বেশি আবেদনকারী সাক্ষাৎকার ছাড়াই তাদের ভিসা নবায়ন করতে পারতেন।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাইডেন প্রশাসন কর্মসূচিটি সম্প্রসারণ করেছিল। কনস্যুলার কর্মকর্তাদের প্রথমবারের মতো এইচ-২ ভিসার আবেদনকারীদের (অস্থায়ী কৃষি ও অ-কৃষি কর্মী) জন্য ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার মওকুফের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
অন্যান্য অ-অভিবাসী ভিসার আবেদনকারীরাও যোগ্য ছিলেন যদি তারা আগে কোনো অ-অভিবাসী ভিসা পেয়ে থাকেন (তবে শুধুমাত্র বি ভিসা থাকলে এটি প্রযোজ্য নয়) বা যদি তারা তাদের সর্বশেষ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪৮ মাসের মধ্যে আবেদন করতেন।
মার্কিন ভিসাধারীদের জন্য কী পরিবর্তন আসছে?
ট্রাম্প প্রশাসন ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ড্রপবক্স প্রক্রিয়ার যোগ্যতার মানদণ্ড মহামারীর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো, ভিসা নবায়নকারী আবেদনকারীদের এখন সাক্ষাৎকার মওকুফের জন্য পূর্ববর্তী ১২ মাসের মধ্যে বৈধ ভিসা থাকতে হবে, যা আগে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ৪৮ মাস পর্যন্ত ছিল।
এছাড়াও কেবল নির্দিষ্ট ভিসা ক্যাটাগরিগুলো—যেমন কূটনৈতিক (এ-১, এ-২), সরকারি কর্মকর্তা (জি-১ থেকে জি-৪, ন্যাটো ভিসা) এবং আগের ভিসার একই ক্যাটাগরির জন্য ১২ মাসের মধ্যে নবায়নকারীরা—এই সুবিধার জন্য যোগ্য হবেন। এই পরিবর্তনের ফলে আবেদনকারীরা এখন ভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসার জন্য ড্রপবক্স ব্যবহার করতে পারবেন না।
বিশ্বের বিভিন্ন মার্কিন দূতাবাস স্বীকার করেছে যে এই পরিবর্তন ‘কিছু ভিসার অপেক্ষার সময় দীর্ঘ করতে পারে’ এবং যারা নতুন নিয়মের আওতায় পড়ছেন না, তাদের এখন মার্কিন কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে, যা প্রক্রিয়ার দেরি করতে পারে।
পারিবারিক ভিত্তিক ভিসাধারীদের ওপর প্রভাব কী হবে?
এইচ-১বি (এইচ-৪), এল-১ (এল-২) এবং অন্যান্য অ-অভিবাসী কর্মসংস্থান ভিসাধারীদের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদেরও সাক্ষাৎকার মওকুফের জন্য নতুন ১২ মাসের নবায়ন সময়সীমা পূরণ করতে হবে। পূর্বে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪৮ মাসের মধ্যে হলে তারা সাক্ষাৎকার ছাড়াই ড্রপবক্স প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারতেন।
এই পরিবর্তন একসঙ্গে ভ্রমণকারী পরিবারগুলোর জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, মূল আবেদনকারী এবং নির্ভরশীলদের যোগ্যতার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকলে দেরি হতে পারে। যদি কোনো নির্ভরশীল ব্যক্তি ১২ মাসের নিয়ম পূরণ না করতে পারে। তবে তাদের ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে হতে পারে, যা ভ্রমণের আরও বিলম্ব সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া যারা আগে ভিসা প্রত্যাখ্যান বা প্রশাসনিক পর্যালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের জন্য সাক্ষাৎকার ছাড়া ভিসা নবায়ন করা আরও কঠিন হতে পারে।
এইচ-১বি ভিসাধারীদের ওপর প্রভাব কী হবে?
এইচ-১বি ভিসাধারীরা নতুন ভিসা ইন্টারভিউ মওকুফ (ড্রপবক্স) যোগ্যতার নিয়ম দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হবেন। নতুন নীতির অধীনে, এইচ-১বি আবেদনকারীদের অবশ্যই: একই ক্যাটাগরির ভিসা নবায়ন করতে হবে (এইচ-১বি থেকেএইচ-১বি )। তাদের পূর্ববর্তী ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ১২ মাসের মধ্যে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে (পূর্বে ৪৮ মাস ছিল)।
তাদের নিজ দেশের নাগরিকত্ব বা বাসস্থানের দেশ থেকে আবেদন করতে হবে। পূর্বে কোনো ভিসা প্রত্যাখ্যান বা অযোগ্যতার সমস্যা থাকা যাবে না।
যদি কোনো এইচ-১বি ভিসাধারী এই শর্তগুলো পূরণ করতে না পারেন, তাহলে তাকে মার্কিন কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে হবে, যা সময়সূচি নির্ধারণে বিলম্ব ঘটাতে পারে।
এই পরিবর্তন এইচ-১বি পেশাজীবীদের ভ্রমণ পরিকল্পনাকে ব্যাহত করতে পারে, বিশেষ করে যারা তাদের নিজ দেশে ভিসা নবায়নের পরিকল্পনা করেছিলেন। ভারতের মতো দেশগুলোতে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার সময়সীমা অতিরিক্ত কাজ ও ভ্রমণের বিঘ্ন ঘটাতে পারে, যার ফলে এইচ-১বি ভিসাধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজে ফিরে যাওয়ার সময় দেরি হতে পারে।
বি-১ পর্যটন ভিসাধারীদের ওপর প্রভাব কী হবে?
বি-১/বি-২ পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভিসাধারীরাও নতুন নিয়ম দ্বারা প্রভাবিত হবেন। নতুন নীতির অধীনে কেবলমাত্র যারা তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ১২ মাসের মধ্যে একই ক্যাটাগরির ভিসা নবায়ন করবেন, তারাই সাক্ষাৎকার মওকুফের জন্য যোগ্য হবেন। পূর্বে ৪৮ মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসাধারীরা ড্রপবক্স প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারতেন, যা অপেক্ষার সময় ও কনস্যুলেট পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছিল।
এই পরিবর্তনের ফলে অনেক বি-১/বি-২ ভিসাধারীরা যারা নতুন নিয়মের আওতায় আসছেন না, তাদের এখন মার্কিন কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে।
আপনার করণীয়
যদি আপনি ভিসা নবায়ন করতে চান, তাহলে নতুন নিয়ম অনুসারে আপনার যোগ্যতা যাচাই করুন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন। নতুন পরিবর্তনের কারণে সাক্ষাৎকারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার সম্ভাবনা থাকায় পরিকল্পনামাফিক আবেদন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র ক ন কনস য ল ট ন র ভরশ ল দ শ ষ হওয র র জন য য গ যত র ৪৮ ম স র র য গ যত দ র জন য র সময স ন করত ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে
দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।
বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’
কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি।
এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’।
বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়।
মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন।
বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।
শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ
রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে।
প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে।